রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে ৭ মেয়র প্রার্থীর মারমুখী আচরণ
রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র পদের উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আজাদুল হেলালের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করেছেন সাতজন প্রার্থী বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার (৮ এপ্রিল) বিকেল ৪টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম প্রামানিকের সামনেই এই ঘটনাটি ঘটান তারা। ভুক্তভোগী আজাদুল হেলাল রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।
শাহিনুর ইসলাম প্রামানিক ও আজাদুল হেলাল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জানানো হয়েছে বলেও জানান তারা। অভিযুক্ত প্রার্থীদের মধ্যে একজন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আগামী ২৮ এপ্রিল মেয়র পদে কাটাখালী পৌরসভায় উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কাটাখালী পৌরসভার মেয়রের পদ থেকে তৎকালীন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্বাস আলীকে বরখাস্তের কারণে গত ৮ মার্চ উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। যথাযথ প্রক্রিয়ায় বরখাস্ত করা হয়নি দাবি করে আব্বাস আলী উচ্চ আদালতে রিট করে রেখেছিলেন। সেই রিটের নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে আব্বাস আলী বিষয়টি উচ্চ আদালতের নজরে আনেন। এরপর গত ৮ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালত আট সপ্তাহের জন্য নির্বাচন স্থগিত করেন।
আদালতের আদেশের কপি হাতে না পাওয়ায় নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়ে যান। এই সময়ের মধ্যে সাতজন প্রার্থী মনোনয়ন তুলে জমা দেন। পরে ৩১ মার্চ নির্বাচন কমিশন এক চিঠিতে জানায়, আগামী ২৮ এপ্রিল ভোট গ্রহণ করা হবে। যে পর্যায় থেকে নির্বাচন স্থগিত হয়েছিল সে পর্যায় থেকেই নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে।
এই আদেশের বিপক্ষে ২ এপ্রিল বরখাস্ত হওয়া মেয়র আব্বাস আলীর স্ত্রী রাবেয়া সুলতানা মিতু উচ্চ আদালতে রিট করেন। তিনি দাবি করেন, ৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন স্থগিত করে দেওয়ার কথা জেনে তিনি মনোনয়ন ফরম তোলেননি। কিন্তু, রিটার্নিং কর্মকর্তা ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়েছেন। এতে অন্য সাতজন প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পেলেও তিনি বঞ্চিত হচ্ছেন। ২ এপ্রিলই এই রিটের শুনানি শেষে উচ্চ আদালত মিতুকে মনোনয়ন ফরম দেওয়ার নির্দেশ দেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক সোমবার (৮ এপ্রিল) রিটার্নিং কর্মকর্তা মিতুর প্রতিনিধির কাছে মনোনয়ন ফরম দেন। এতেই ক্ষিপ্ত হন অন্য সাত প্রার্থী।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মিতুকে মনোনয়ন ফরম দেওয়ার খবর পেয়ে বিকেলে প্রতিবাদ জানাতে রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে যান কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সামা, সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম রিপন, পৌর জামায়াতের সাবেক আমীর আবদুল হাই, মহানগর জামায়াতের শূরা সদস্য মাজেদুল ইসলামের ছেলে ছাত্রশিবির নেতা মিজানুর রহমান, বিএনপি কর্মী জিয়াউর রহমান ও সিরাজুল ইসলামসহ মেয়র পদের সাতজন প্রার্থী। রিটার্নিং কর্মকর্তা তাদের জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশে মিতুকে মনোনয়ন ফরম দেওয়া হয়েছে। তার কিছু করার নেই। তারপরও এই সাত প্রার্থী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার সামনেই রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে মারমুখী আচরণ করেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক হইচই করার পর তারা ফিরে যান।
রিটার্নিং কর্মকর্তা আজাদুল হেলাল জানান, সাত প্রার্থী একসঙ্গে গিয়ে তাকে বলেন, মিতুর মনোনয়ন ফরম গ্রহণ করা যাবে না। তারা ছয়জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন। একজন প্রার্থী থাকবেন। তাকেই যেন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে দেওয়া হয়। এটি সম্ভব নয় জানালে তারা অত্যন্ত ঔর্দ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন। বিষয়টি ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম প্রামানিক বলেন, ‘আমার সামনেই সাত প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করেছেন। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আমরা ইসিতে কথা বলেছি। ইসি যেভাবে নির্দেশনা দেবেন সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হতে পারে।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মেয়রপ্রার্থী ও কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সামা বলেন, ‘বিষয়টা আসলে ওইরকম না। আমরা ছয়জন মনোনয়নপত্র তুলে নিতে চেয়েছিলাম এবং একজনকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করতে বলেছিলাম। এর বেশি কিছু হয়নি।’
কেয়া/মাসুদ