ঢাকা     সোমবার   ০৮ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২৪ ১৪৩১

সাত প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইসির অনুমতি চান রিটার্নিং কর্মকর্তা

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৩, ১০ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১৩:৩৪, ১০ এপ্রিল ২০২৪
সাত প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইসির অনুমতি চান রিটার্নিং কর্মকর্তা

মারমুখী আচরণ করায় রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র পদের উপনির্বাচনের সাত প্রার্থীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে অনুমতি চেয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা আজাদুল হেলাল। মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম প্রামানিক এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘মেয়র প্রার্থীরা রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে যে আচরণ করেছেন তা খুবই খারাপ। এটা কাম্য নয়। তারা উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে বাধার সৃষ্টি করেছেন। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

আগামী ২৮ এপ্রিল মেয়র পদে এই উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও জমা দেওয়ার সময় শেষেও উচ্চ আদালত এই পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্বাস আলীর স্ত্রী রাবেয়া সুলতানা মিতুকে মনোনয়ন ফরম দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই গত সোমবার নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আজাদুল হেলাল মিতুর প্রতিনিধির কাছে মনোনয়ন ফরম দেন। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে যান অন্য সাত প্রার্থী।
 
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত সোমবার রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে যান কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সামা, সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম রিপন, পৌর জামায়াতের সাবেক আমীর আবদুল হাই, মহানগর জামায়াতের শূরা সদস্য মাজেদুল ইসলামের ছেলে শিবির নেতা মিজানুর রহমান, বিএনপি কর্মী জিয়াউর রহমান ও সিরাজুল ইসলামসহ সাতজন প্রার্থী। তারা রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে অত্যন্ত ঔর্দ্ধত্যপূর্ণ ও মারমুখী আচরণ করেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা তাদের জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশে মিতুকে মনোনয়ন ফরম দেওয়া হয়েছে। তার কিছু করার নেই। তারপরও এই সাত প্রার্থী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার সামনেই রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে মারমুখী আচরণ করেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক হইচই করার পর তারা ফিরে যান।

রিটার্নিং কর্মকর্তা আজাদুল হেলাল জানান, সাত প্রার্থী একসঙ্গে গিয়ে তাকে বলেন, মিতুর মনোনয়ন ফরম গ্রহণ করা যাবে না। তারা ছয়জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন। একজন প্রার্থী থাকবেন। তাঁকেই যেন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে দেওয়া হয়। কিন্তু এটি সম্ভব নয় জানালে তারা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম প্রামানিকের সামনেই অত্যন্ত ঔর্দ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। ঘণ্টাখানেক হইচই করার পর তারা ফিরে যান।

এ ঘটনার পর গতকাল মঙ্গলবার সকালে ছয় মেয়র প্রার্থী রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের কার্যালয়ে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। তখন জেলা প্রশাসক সোমবারের ঘটনা সম্পর্কে তাদের কাছে জানতে চান। আর প্রার্থীরা এই উপনির্বাচনে প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকার প্রত্যাশার কথা জানান। পরে জামায়াত, বিএনপি, শিবির ও আওয়ামী লীগের নেতারা একসঙ্গে ছবিও তোলেন।

সোমবারের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘ছয়জন মেয়রপ্রার্থী আমার কাছে এসেছিলেন। আমি গতকালের বিষয়টি বলেছি। কেউই আইনের বাইরে নয়।’

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মেয়রপ্রার্থী ও কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সামা কোনো কথা বলতে চাননি। অপর মেয়রপ্রার্থী ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম রিপন বলেন, ‘নির্বাচনে প্রশাসনের ভূমিকা যেন নিরপেক্ষ থাকে, সেই বিষয়ে কথা বলতে আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে গিয়েছিলাম। সোমবারের ঘটনা সম্পর্কে যা বলা হচ্ছে তা পুরোটা ঠিক নয়। মিতুকে কীভাবে মনোনয়ন ফরম দেওয়া হলো শুধু এটুকু জানতেই আমরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে গিয়েছিলাম। মারমুখী আচরণ করা হয়নি।’

জহুরুল ইসলাম স্বীকার করেন, মিতু প্রার্থীতা না পেলে তারা সাতজনের মধ্যে থেকে ছয়জনই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিতেন এবং একজনকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করাতেন। ভোটে নেমে জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে এমন আপস করার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘এটা ভোটের কৌশল। এ রকম তো হতেই পারে। সমস্যা নাই।’

সাত প্রার্থীর সঙ্গে নতুন করে ভোটের মাঠে আসা রাবেয়া সুলতানা মিতুর স্বামী আব্বাস আলী এই পৌরসভার দুইবারের সাবেক মেয়র। তিনি পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। ঘরোয়া আলাপের এক আপত্তিকর কথোপকথনের অডিও ছড়িয়ে পড়ার জেরে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। এই মামলায় অভিযুক্ত হলে মেয়রের পদ হারান আব্বাস আলী। তাই পৌরসভায় উপনির্বাচন হচ্ছে। আব্বাস আলী কাটাখালী এলাকায় জনপ্রিয় ব্যক্তি। তার জনপ্রিয়তায় ভর করে ভোটের মাঠে নামছেন স্ত্রী রাবেয়া সুলতানা মিতু। ভোটের মাঠে এখন মিতুর বিরুদ্ধে একাট্টা হচ্ছেন আব্বাস আলীর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত সাত মেয়র প্রার্থী।

কেয়া/মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়