ঢাকা     সোমবার   ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১৫ ১৪৩১

বান্দরবানে ৫ কেজির বেশি চাল বহনে লাগছে পুলিশের অনুমতি 

বান্দরবান প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৬, ১১ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১৪:৩৭, ১১ এপ্রিল ২০২৪
বান্দরবানে ৫ কেজির বেশি চাল বহনে লাগছে পুলিশের অনুমতি 

পাহাড়ের সড়কে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে

বান্দরবানের রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি ও চিম্বুক পাহাড়ের বাসিন্দাদের পাঁচ কেজির বেশি চাল বহনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার পর দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর চলমান অভিযানের মধ্যে গত মঙ্গলবার থেকে ৫ কেজির বেশি চাল বহনের ক্ষেত্রে পুলিশের অনুমতি নিতে বলা হচ্ছে।

পুলিশ বলছে, এটি দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে যৌথবাহিনীর অভিযানের অংশ। সশস্ত্র দুর্বৃত্তদের খাদ্য ও অর্থ যোগান বন্ধ করতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

থানচি উপজেলার স্থানীয় মারমা, ত্রিপুরা, ম্রো সম্প্রদায়ের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাঁচ কেজির বেশি চাল কিনে বাড়ি ফেরার পথে তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। 

আরো পড়ুন:

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ত্রিপুরা বলেন, ‌চাল শেষ হয়ে গেছে। তাই বাজার থেকে চাল কিনে বাড়ি যাচ্ছিলাম। পথে পুলিশ আমাকে থামিয়ে জিজ্ঞাসা করল- এতো চাল কেন? খাওয়ার জন্য বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি বলার পর তারা জানান কেউ পাঁচ কেজির বেশি চাল বহন করতে পারবে না। থানায় গিয়ে আগে ওসির অনুমতি নিয়ে আসতে হবে।

উপজেলার নারিকেল ও আপ্রু মং পাড়া নিবাসী দুই মারমা বলেন, বাজার থেকে ২০ কেজি চালের বস্তা কিনে নিয়ে আসছিলাম। পথে পুলিশ ও আনসার বাহিনীরা বাধা দেয়। বলে এত চাল নিয়ে যেতে পারব না। কারণ জানতে চাইলে তারা উপরের নির্দেশের কথা বলেছে। নিরুপায় হয়ে চালের বস্তা আবার দোকানে ফেরত দিয়ে এসেছি।

একই ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে চিম্বুক পাহাড়েও। পাহাড়ের এম্পো পাড়া, বাগানপাড়া, ১৮ মাইল চিম্বুক পাড়া এলাকার বাসিন্দারা বান্দরবান সদর থেকে চাল কিনে নিয়ে যাওয়ার পথে মিলনছড়ি এলাকায় পুলিশ চেকপোস্টে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। পরে তাদের চাল ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

বান্দরবান চিম্বুক রোডে থ্রি-হুইলার চালক মো. আরিফ বলেন, ‘গতকাল ৩-৪ জনের চালের বস্তা নিয়ে ভাড়ায় যাচ্ছিলাম। মিলনছড়ি এলাকার পুলিশ চেকপোস্টে আটকে দিয়ে চাল বান্দরবান ফেরত পাঠাতে বলে। পুলিশ বলেছে, কেউ পাঁচ কেজির বেশি চাল বহন করতে পারবে না।’

চিম্বুক পাহাড়ের ক্রামাদি পাড়ার বাসিন্দা সিংপাত ম্রো বলেন, ‘দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে আমাদের সাধারণ জনগণের ওপর এভাবে অমানবিক হওয়াটা কাম্য নয়। চিম্বুক পাহাড়ে এমনিতেই পানির সংকট। তার মধ্যে আবার চাল বহনে বাধা। এত সংকটে ফেলে দিলে মানুষ যাবে কোথায়?'

জানতে চাইলে থানচি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থোয়াই হ্লা মং মারমা বলেন, ‘অনেকের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পেয়ে উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে বিষয়টি উপস্থাপন করেছিলাম। সন্ত্রাস নির্মূল অভিযানের কারণে নিরপরাধ মানুষ যেন খাদ্যাভাবে না ভোগে সে কথা বলেছি।’

যোগাযোগ করা হলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসেন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘রুমা-থানচিতে ব্যাংক ডাকাতির পর  দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে যৌথবাহিনীর অভিযানের অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সন্ত্রাসীদের‌ কে বা কারা খাদ্য যোগান দিচ্ছে বা অর্থ যোগান দিচ্ছে, সেটা কোনোভাবেই নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তাই ওপরের নির্দেশনা অনুযায়ী অভিযান চলাকালে এই স্যাক্রিফাইসটুকু করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’ 

৫ কেজি চাল কীভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা নির্দেশ অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।’

প্রসঙ্গত, চলতি মাসের শুরুতে রুমা উপজেলার সোনালী ব্যাংক এবং থানচির সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর ১৪ অস্ত্র লুট এবং সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নিজামুদ্দিনকে অপহরণের ঘটনা ঘটে। এরপর অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ, আনসার, র‍্যাব ও সেনাসদস্যদের সমন্বয়ে যৌথবাহিনী। মাত্র ১৬ ঘণ্টার ব্যবধানে এই ডাকাতির ঘটনা সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ ঘটিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অভিযানে এখন পর্যন্ত কেএনএফের অন্যতম প্রধান সমন্বয়কসহ ৫৫ জন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

চাইমং/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়