ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

রাজশাহী অঞ্চলে ফসল বাঁচাতে আবাসিকে বাড়বে লোডশেডিং

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫২, ১৫ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১৬:০৩, ১৫ এপ্রিল ২০২৪
রাজশাহী অঞ্চলে ফসল বাঁচাতে আবাসিকে বাড়বে লোডশেডিং

খরাপ্রবণ রাজশাহী অঞ্চলে জমির ফসল বাঁচাতে প্রয়োজনমতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে সেচযন্ত্রে। তাই, লোডশেডিং করতে হবে আবাসিক এলাকায়। শুধু গ্রাম নয়, শহরেও আবাসিক সংযোগে লোডশেডিং আরও বাড়বে আগামী ১৫ থেকে ২০ দিন। বিশেষ করে, রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত সেচযন্ত্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে এই সময়ে লোডশেডিং করা হবে। চলমান সেচ মৌসুম ও বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

সোমবার (১৫ এপ্রিল) সকালে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এই সভা হয়। বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সহযোগিতায় রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এ সভার আয়োজন করে। প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর।

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সদস্য (প্রশাসন) মো. হাসান মারুফের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) তরফদার মো. আক্তার জামীল। সভায় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় রাজশাহী অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও লোডশেডিংয়ের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, বিভাগের আট জেলায় গত বছরের তুলনায় এবছর বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে, কিন্তু জাতীয় গ্রিড থেকে সে অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে শুধু পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিরই সেচের জন্য এখন ৫৮১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া যাচ্ছে ৩৮৮ মেগাওয়াট। ঘাটতি থাকছে ১৯৩ মেগাওয়াট। বাণিজ্যিক ও আবাসিক সংযোগের ক্ষেত্রে আরও প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকছে রোজ। একইভাবে নেসকোর ক্ষেত্রেও প্রায় ৪০ শতাংশ বিদ্যুতের ঘাটতি থাকছে এখন।

সভায় খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বোরো ধানের জমিতে সেচ দিতে প্রয়োজনমতো বিদ্যুৎ সরবরাহে সরকারের নির্দেশনার কথা তুলে ধরে বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘বিদ্যুতের ঘাটতি থাকলেও আগে আমাদের ফসল বাঁচাতে হবে। দেশকে খাদ্যের সংকটে ফেলা যাবে না। খাদ্য ঘাটতি দেখা দিলে তখন আবার ডলার খরচ করে আমদানি করতে হবে। সেদিকে আরেক সংকট। তাই সেচের জন্যই বিদ্যুৎ বেশি দিতে হবে।’

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত সেচযন্ত্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়া গেলে ফসল উৎপাদনে সমস্যা হবে না। কিন্তু, এটি করতে গেলে সবগুলো সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সমন্বয় করে শহরেও রাতে লোডশেডিং দিতে হবে। আবাসিকে সরবরাহ কমিয়ে সেচে বিদ্যুৎ দিতে হবে। 

এ সময় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘ফসল রক্ষার জন্য রাতে আমার বাসারও বিদ্যুৎ বন্ধ করেন। শহরে আবাসিকের বিদ্যুৎ সরবরাহ কমান। সেই বিদ্যুৎ সেচের জন্য পাঠান। সবার আগে আমাদের ফসল রক্ষা করতে হবে।’

বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘লোডশেডিং শুরু হলে রাজনীতি শুরু হয়। মানুষকে বিক্ষুদ্ধ করে একটা পক্ষ ফায়দা হাসিল করতে চায়। গোয়েন্দা তথ্য হচ্ছে, আবাসিকে লোডশেডিং বাড়লে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলার আশঙ্কা আছে। তাই মানুষকে বোঝাতে হবে। ১৫ থেকে ২০ দিন আমাদের কষ্ট করতে হবে ফসল রক্ষার জন্য। তারপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এই সময়ের মধ্যেও যেন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড না ঘটে তার জন্য গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে। যেসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা এখনো নেই, সেখানে দ্রুতই ক্যামেরা লাগাতে হবে, যেন অপরাধীদের অন্তত শনাক্ত করা যায়।’

সভার সভাপতি বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সদস্য (প্রশাসন) মো. হাসান মারুফ বলেন, ‘বরেন্দ্র অঞ্চল খরাপ্রবণ এলাকা। এখানে সেচ লাগে বেশি। তাই শহরেও রাতে লোডশেডিং করে সেচের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। যে কোন মূল্যে ফসল রক্ষা করতে হবে। কোনো এলাকায় উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিলে বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জবাবদীহি করতে হবে। তাই সবাইকে এই কয়েকটা দিন ফসল রক্ষায় আন্তরিক থাকতে হবে।’

সভায় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের রাজশাহী জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুজন সাহা, বগুড়া জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অরুপ কুমার বিশ্বাস, বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন, রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপ রমেন্দ্র চন্দ্র রায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহাব্যবস্থাপক ছানোয়ার হোসেন প্রমুখ তাদের মতামত তুলে ধরেন।

কেয়া/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়