ঢাকা     সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৮ ১৪৩১

সোনারগাঁয়ে শুরু হয়েছে ৩ দিনব্যাপী বউ মেলা

নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৩, ১৫ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১৬:২১, ১৫ এপ্রিল ২০২৪
সোনারগাঁয়ে শুরু হয়েছে ৩ দিনব্যাপী বউ মেলা

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বর্ষপঞ্জিকা মতে বৈশাখের প্রথম দিনে শতবর্ষী বটবৃক্ষের নিচে সিদ্ধেশ্বরী পূজার আয়োজন করেন। সংসারে শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং স্বামী সন্তানের মঙ্গল কামনার জন্য নারীরা দল বেঁধে সেখানে পূজা করেন। ঢাকের তালে ভক্তিভরে উলুধ্বনির সঙ্গে পূজায় মগ্ন হন বধূরা। গাছতলায় মাটি দেন তারা। এই পূজাকে কেন্দ্র করে সেখানে বসে তিন দিনব্যাপী মেলা। স্থানীয়ভাবে এটি বউ মেলা হিসেবে পরিচিত।

সোনারগাঁ উপজেলার জয়রামপুর গ্রামে বটবৃক্ষকে সিদ্ধেশ্বরী দেবী রূপে এই পূজার প্রচলন ঘটে আরও প্রায় ১০০ বছর আগে। পরে বংশ পরম্পরায় পালিত হচ্ছে পূজা। শুরুর দিকে শুধুমাত্র বাড়ির নববধূদের নিয়ে এই আয়োজন হলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন বয়সের নারীরা সমাজের মঙ্গল কামনায় এবং পরিবারের শান্তি এবং সমৃদ্ধির জন্য পূজায় অংশ নিতে শুরু করেন। শতবর্ষী ওই বট গাছটিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সিদ্ধেশ্বরী দেবী বলে আখ্যায়িত করেন।

গাছটি সিদ্ধেশ্বরী কালীতলা নামে পরিচিত। এলাকায় বলা হয় বউতলা। অসংখ্য নারীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠা এই মেলার নাম বউ মেলা। পুরুষরাও মেলায় যান। তবে, তাদের সংখ্যা থাকে কম। প্রতি বছরের মতো এবারও সিদ্ধেশ্বরী কালীতলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূজার আয়োজন করেছেন। নারীদের মৌসুমী ফল নিয়ে লাইন ধরে বটগাছের নিচে ভোগ দিতে দেখা গেছে। 

আরো পড়ুন:

সরেজমিনে দেখা যায়, বটগাছের নিচে স্তূপকৃত ফল পূজা শেষে ভক্তবৃন্দের মধ্যে প্রসাদ হিসেব বিতরণ করা হচ্ছে। স্বামী-সংসারের বাঁধন যেন আমৃত্যু অটুট থাকে সেই কামনাতেই পূজার আয়োজন। পূজার পরপরই শুরু হয় বউ মেলা।

পূজার আয়োজক নিলুৎপল রায় বলেন, শুরুর দিকে এখানে পুরুষরা আসতো না। পূজা শুধুমাত্র বউদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। জামাইদের নিমন্ত্রণ করা হতো, তারা মেলায় আসতেন, তারা পূজায় অংশ নিতেন না। তাই তখন থেকেই এই মেলা বউ মেলা নামে পরিচিতি পায়। নববর্ষের প্রথম দিনে দেশবাসীর মঙ্গল কামনায় এই পূজার আয়োজন করা হয়। নতুন বছর যেন ভালো কাটে, সবাই যেন ভালো থাকতে পারি, শান্তিতে থাকতে পারি সে কারণে এই পূজার আয়োজন করা হয়। প্রায় একশো বছর ধরে এই পূজার আয়োজন হচ্ছে।

মেলা প্রাঙ্গণে বাঁশের বাঁশি, মাটির হাতি, ঘোড়াসহ মৃৎশিল্পের নানা সামগ্রী ও ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী খাবার খই, কদমা, পেঁয়াজু, নিমকি, জিলাপিসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকান বসেছে। এছাড়া, শিশুদের জন্য নাগরদোলাসহ বেশ কিছু রাইডের ব্যবস্থা করেছেন আয়োজকরা। ঐতিহ্যবাহী এই মেলাকে কেন্দ্র করে সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মের দর্শনার্থীরা এখানে ছুটে আসেন। বউ মেলাকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় বৈশাখী উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

অনিক/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়