খুলনায় খালি সিলিন্ডারে ভরা হয় পাম্পের গ্যাস, দুর্ঘটনার আশঙ্কা
মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম
এভাবে খালি সিলিন্ডারে পাম্প থেকে গ্যাস ভরা হয়
খুলনায় মেসার্স এ. লতিফ ফিলিং স্টেশনে প্রকাশ্যে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) খালি সিলিন্ডারে পাম্পের গ্যাস ভরা হচ্ছে। নামি-দামি ব্রান্ডের এলপিজির খালি সিলিন্ডারে অবৈধভাবে গ্যাস ভরা বা ক্রস ফিলিং করায় বড় দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয়ভাবে ফিলিং স্টেশন থেকে এভাবে রান্নার কাজে ব্যবহৃত সিলিন্ডারে গ্যাস ভরায় সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এছাড়া গ্যাসে গাদ (পানি) থাকায় গ্রাহক সঠিক পরিমাণে গ্যাস না পাওয়া, নামি-দামি ব্রান্ডের খালি সিলিন্ডার ব্যবহার করায় ওই কোম্পানির ব্যবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে।
খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের পাশে ডুমুরিয়া উপজেলায় মেসার্স এ. লতিফ ফিলিং স্টেশন। পাশেই ডুমুরিয়া থানা এবং উপজেলার প্রশাসনিক দপ্তর। এই ফিলিং স্টেশনে পেট্রোল, ডিজেল ও অকটেনের পাশাপাশি গাড়িতে গ্যাস ভরা হয়। গ্যাস ভরার পাম্পটি সামনে থেকে দেখা গেলেও বিকেলে দুটি ড্রাম ট্রাক রেখে সেটি আড়াল করা হয় এবং পেছনে পিকআপ বা ভ্যানে করে আনা খালি সিলিন্ডারে গ্যাস ভরা হয়।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক বিষয়টি দেখতে গেলে মালিকের লোকেরা তাদের ধমক দেন। পরে খালি সিলিন্ডারে গ্যাস ভরার বিষয়টি স্বীকার করে ফিলিং স্টেশনের কর্মকর্তারা বলেন, বাজারে বসুন্ধরা কোম্পানির গ্যাসের সিলিন্ডারের সংকট রয়েছে। তাই মানুষের উপকারের জন্য এই ক্রস ফিলিং করছেন।
এ সময় দুটি পাইপের মাধ্যমে শত শত খালি সিলিন্ডারে গ্যাস ভরা হচ্ছিল। দেশের নামি-দামি প্রায় সব ব্রান্ডের খালি সিলিন্ডার সেখানে ছিল।
যানবাহনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম প্রতি লিটার ৬৮ টাকা। কিন্তু রান্নার গ্যাসের লিটার পড়ে ১০৭ টাকার উপরে। ক্রস ফিলিং করতে ১২ লিটারের গ্যাস সিডিন্ডারের জন্য নেওয়া হয় এক হাজার টাকা। সেখানে কর্মরতরা জানান, ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় সিলিন্ডারে গ্যাস ভরা হয়। অথচ বাজারে ওই পরিমাণ সিলিন্ডার গ্যাসের দাম ১৬০০ টাকা।
ডুমুরিয়ার এই ফিলিং স্টেশন হতে এভাবে খালি সিলিন্ডারে গ্যাস ভরে সেই সিলিন্ডার খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর জেলার বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। এতে অসাধু ব্যবসায়ীদের প্রতি সিলিন্ডারে মুনাফা হয় কয়েকশত টাকা। অথচ নামি-দামি একটি ব্রান্ডের এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার সরবরাহ করলে ডিলারের মুনাফা হয় ৫০-৬০ টাকা।
মেসার্স এ. লতিফ ফিলিং স্টেশনের মালিক আব্দুল লতিফ জমাদ্দার সাংবাদিকদের কাছে খালি সিডিন্ডারে গ্যাস ভরার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, বসুন্ধরার গ্যাস সিলিন্ডারের সংকট, ইরান থেকে গ্যাস আসছে না; তাই তিনি মানুষের উপকারের জন্য ক্রস ফিলিং করছেন।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রশাসনে চাঁদা দেওয়ার কথা জানান লতিফ জমাদ্দার। তিনি বলেন, ‘আভা সেন্টারের পাশে সরকারের একটি স্কুলের জন্য আমার ভাটা থেকে ৩-৪ হাজার ইট বিনামূল্যে দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসে চাঁদা দিতে হয়। খাস জমিতে ইটভাটা করায় এবার আমাকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে, তারপরও চাঁদা দিতে হয়।’
এ ব্যাপারে জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতির খুলনা বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম বলেন, ‘ফিলিং স্টেশনের গ্যাস সিলিন্ডারে ভরা অবৈধ। আমাদের কাছে আগে থেকে এমন অভিযোগ আছে। ফিলিং স্টেশনের গ্যাসের সঙ্গে পানি দেয়া হয়। ওজনে কম ও পানি দেওয়ায় গ্রাহক প্রতারিত হচ্ছে।’
খুলনা বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শক ড. আসাদুল ইসলাম জানান, তিনি পরিদর্শন করে লতিফ ফিলিং স্টেশনে অবৈধ ক্রস ফিলিংয়ের প্রমাণ পেয়েছেন। আইনে স্বয়ংক্রিয় যানবাহনের গ্যাস বোতলজাত সিলিন্ডারে ক্রস ফিলিং করলে ৫ বছর কারাদণ্ড, আর ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান আছে। একইসঙ্গে লাইসেন্স বাতিল হওয়ার বিধান রয়েছে। লতিফ জমাদ্দারের নামে লাইসেন্স থাকলেও তার মেয়ে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শারমিন পারভিন রুমা ধমকের সুরে কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, এভাবে সিলিন্ডারে গ্যাস ভরা ঝুঁকিপূর্ণ। এতে যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এ ব্যাপারে ডুমুরিয়া উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শারমিন পারভিন রুমা বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শককে ফোন করার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘ফিলিং স্টেশন ও ইটভাটা আমাদের পারিবারিক ব্যবসা।’
/বকুল/