ঢাকা     শনিবার   ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৬ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ

প্রার্থীর পক্ষে মাঠে সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের এমপির দুই ভাই!

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫০, ৩ মে ২০২৪   আপডেট: ০৯:৫৬, ৩ মে ২০২৪
প্রার্থীর পক্ষে মাঠে সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের এমপির দুই ভাই!

আগামী ৮ মে’র উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ তুলেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী বদিউজ্জামান ফকির। 

এমপির মালিকানাধীন শিল্পগ্রুপের অংগ প্রতিষ্ঠান কটন ক্লাব (বিডি)’র জিএম (অপারেশন) মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম সরকারকে বেলকুচি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী করে এমপির দুই ভাই সরাসরি তার প্রচারণা চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

সেই প্রভাবে তাদের প্রার্থী আমিনুল ইসলাম সরকার ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে হুমকি-ধামকি, হামলা ও মারধর শুরু করেছেন। মারধর থেকে বাঁচতে থানায় আশ্রয় নিলে সেখানেও হামলা চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ বদিউজ্জামান ফকিরের।

বৃহস্পতিবার (২ মে) বিকেলে বেলকুচি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন চেয়ারম্যান প্রার্থী বদিউজ্জামান ফকির। তিনি মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়াও তিনি বেলকুচি উপজেলার এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

বদিউজ্জামান ফকির বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যাবস্থায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল উৎসবমুখর পরিবেশে। দেশের বিভিন্ন স্থানে তাই হচ্ছে। আমিও ব্যাক্তিগতভাবে প্রত্যাশা করেছিলাম, উৎসবমুখর পরিবেশে বেলকুচি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু বাস্তবতা আজ আমাকে ভিন্ন পরিস্থিতিতে আপনাদের সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে।

তিনি বলেন, আমি বুধবার (১ মে) রাত সাড়ে দশটার দিকে শাহাপুর ডিএসএস স্কুলের পথসভা শেষে বাড়ি ফেরার পথে বেলকুচি পৌর এলাকার চালা সাতরাস্তা মোড় ঘুড়ে বেলকুচি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পৌঁছালে আমার বহরে হামলা চালানো হয়। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আমিনুল ইসলামের উপস্থিতি ও নির্দেশে তার সমর্থকরা এই হামলা চালায়। এতে আমিসহ আমার আরও ৫ কর্মী-সমর্থক আহত হই। বেলকুচিতে রক্তের বন্যা বইয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আমাকে নানা ভাবে শাসায় আমিনুল ইসলাম। আমাকে শারিরিকভাবে আঘাত করে আমিনুল ইসলামের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য আবু তালেব। আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আত্মরক্ষার্থে আমি ও আমার কর্মীরা বেলকুচি থানায় আশ্রয় নিলে সেখানেও হামলা চালানো হয়। বেলকুচি থানার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখলেই আপনারা আমার কথার সত্যতা খুঁজে পাবেন।

বদিউজ্জামান ফকির বলেন, আজুগড়া মোড়ে পোস্টার লাগাতে যাওয়া আমার কর্মীদের ধোরালো অস্ত্রের আঘাত করে আহত করা হয়েছে। আমার নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে জামতৈল বাজারে। অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিনুল ইসলামের প্রত্যক্ষ মদদ ও নির্দেশে এই ঘটনাগুলো ঘটানো হচ্ছে।

বদি ফকির বলেন, নির্দেশনা রয়েছে চলমান উপজেলা নির্বাচনে সংসদ সদস্যবৃন্দ কোন হস্তক্ষেপ করবে না, কোন প্রার্থীর পক্ষালম্বন করবে না। কিন্তু বেলকুচিতে এই নির্দেশনা প্রতিপালন হচ্ছে না। সংসদ সদস্যের পরিবার তাদের কোম্পানির কর্মচারীকে উপজেলা চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বেলকুচিকে নিজেদের কোম্পানি মডেলে পরিনত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সংসদ সদস্যের ভাই আব্দুল আলিম মন্ডল ও জুবায়ের মন্ডল, ব্যাক্তিগত সহকারি সেলিম রাতদিন সভা-সমাবেশসহ প্রচারণা চালাচ্ছে আমিনুল ইসলামের পক্ষে। তাকে এমপি’র পছন্দের প্রার্থী হিসেবে প্রকাশ্যে ঘোষণা করছে। নেতাকর্মী ও বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। সংসদ সদস্যের দুই ভাই ও সহকারি নির্বাচনী মাঠে নামলে এটা প্রমানিত হয় যে, সংসদ সদস্য একজন প্রার্থীর পক্ষ নিয়েছেন এবং তার নির্দেশেই এগুলো হচ্ছে। সংসদ সদস্যের দুই ভাই বেলকুচিতে পা রাখার সাথে সাথে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আমিনুল ইসলাম ও তার বাহিনী।

এবিষয়ে কথা বলার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী  আমিনুল ইসলাম সরকার ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মন্ডলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তারা কল রিসিভ করেননি।

এব্যাপারে বেলকুচি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনিছুর রহমান বলেন, বুধবার রাতে প্রচারণা চালানোর একপর্যায়ে দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরপর  বদিউজ্জামান ফকির থানায় আসেন। কিছুক্ষণ পরই আমিনুলের কর্মী-সমর্থকরাও থানায় আসেন। এরপর এখানেই বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়। এ ঘটনায় পুলিশের কাজে বাধা প্রদান এবং গভীর রাতে থানায় অনুপ্রবেশ করে থানার পরিবেশ বিনষ্ট করার অভিযোগে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় ২২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১৮-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। থানার ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এছাড়াও দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

অদিত্য/টিপু


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়