ঢাকা     শনিবার   ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৬ ১৪৩১

সড়কে বেপরোয়া তিন চাকার যান, বাড়ছে দুর্ঘটনা

আরিফুল ইসলাম সাব্বির  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:২৫, ৩ মে ২০২৪  
সড়কে বেপরোয়া তিন চাকার যান, বাড়ছে দুর্ঘটনা

মহাসড়কে তিন চাকার যানের কারণে ঠিক কী পরিমাণ দুর্ঘটনা ঘটেছে, এর কোনো সঠিক তথ্য নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক শিক্ষার্থী মতিউর রহমান গিয়েছিলেন রোগী দেখতে। মহাসড়কে মোটরসাইকেলে করে ফেরার সময় সামনে ভ্যান দেখে দুর্ঘটনা এড়াতে ব্রেক কষেন তিনি। মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ছিটকে পড়েন সড়কে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। 

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচলের কারণে সড়কে এমন দুর্ঘটনা নতুন নয়। প্রায়ই এমন দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় সড়কে চলাচলকারীদের। সচেতনমহল বলছেন, সড়কে যথাযথ নজরদারি না থাকায় দুর্ঘটনা বাড়ছে। পুলিশের দাবি, সড়কে অটোরিকশা ও ভ্যানসহ তিন চাকার যানবাহনের চলাচল বন্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। তবে, এজন্য জনগণের আরও সচেতনতা প্রয়োজন।

মহাসড়কে তিন চাকার যানের কারণে ঠিক কী পরিমাণ দুর্ঘটনা ঘটেছে, এর কোনো সঠিক তথ্য নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার ধামরাইয়ের কালামপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে মানিকগঞ্জের তরা ব্রিজ পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার সড়কে গত এক বছরে ৩৯টি দুর্ঘটনায় ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। 

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের (নিসচা) তথ্য অনুযায়ী, ধামরাইয়ের ইসলামপুর থেকে বারবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার সড়কে ৯৫টি দুর্ঘটনায় ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।

সরেজমিনে মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, দূরপাল্লার দ্রুতগামী যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে অটোরিকশা, ভ্যানসহ তিন চাকার যানবাহন। টানা চার দিন সড়কের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরার সময় এসব যানবাহন বন্ধে পুলিশের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। বিনা বাধায় সড়কে চলছে তিন চাকার যানগুলো।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের বারবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কথা হয় ভ্যানচালক আব্দুল লতিফের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি ঋণ নিয়ে ভ্যান কিনেছি। ভেতরের সড়কে ভাড়া কম। এখন যদি মহাসড়কে না চালাতে পারি, পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। নিরুপায় হয়ে মহাসড়কে গাড়ি চালাচ্ছি।’

তিন চাকার যানবাহন চালাতে পুলিশ বাধা দেয় কি না, এ প্রশ্নের জবাবে চালক সেলিম হোসেন বলেন, মাঝে মাঝে বাধা দেয়। সব সময় দেখি না।

এদিকে, মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলাচলে ক্ষুব্ধ গণপরিবহনের চালকরা। ইস্রাফিল খোকন নামের এক বাসচালক বলেন, ‘মহাসড়কে সিএনজি অটোরিকশা চালানো নিষেধ। তবু চালায়। আপনারা যেভাবে পারেন, এসব বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেন।’

আলাউদ্দিন নামের আরেক বাসচালক বলেন, ‘মহাসড়কে আমাদের সমস্যা সিএনজি অটোরিকশা। এরা রাতে চালায়, দিনেও চালায়। সিএনজি অটোরিকশার জন্য অ্যাক্সিডেন্ট হয় রাস্তায়।’

মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল বন্ধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ধামরাই সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম হোসেন সজিব বলেন, ‘সিএনজি অটোরিকশা মহাসড়কে চালানো উচিত না। কারণ, এই সিএনজি অটোরিকশার কারণে অনেক সময় অ্যাক্সিডেন্ট হয়। তাদের চালানো ভালো না। তারা বেপরোয়া চালায়। দেখা যায়, হুট করে একটা বাসের সামনে ঢুকিয়ে দেয়। এজন্য অ্যাক্সিডেন্টের সম্মুখীন হতে হয়। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের গাফিলতির কারণে এগুলো চলতে পারছে। আমি হাইওয়ে পুলিশের কাছে দাবি জানাই, তারা যেন এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করে।’

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের (নিসচা) ধামরাই শাখার সভাপতি নাহিদ মিয়া বলেন, ‘মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। এগুলোর চালকদের কোনো লাইসেন্স নেই। তারা প্রশিক্ষিতও নন। অদক্ষ চালক ও মানহীন তিন চাকার যান মহাসড়কে দুর্ঘটনার কারণ। এগুলো বন্ধে প্রশাসনের যেমন তৎপর থাকা উচিত, তেমনই জনগণেরও সচেতনতা দরকার।’

গোলড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুখেন্দু বসু বলেন, ‘ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে আমাদের গোলড়া হাইওয়ে থানায় ৫৫টা ফিডার রোড আছে। আমাদের যে জনবল আছে, আমরা সব সময় চেষ্টা করি, তিন চাকার যানবাহন যাতে মহাসড়কে চলাচল না করে। এজন্য আমরা প্রতি দিন ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করছি। অনেক সময় ডাম্পিংও করা হচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি সাধারণ জনগণ ও জনপ্রতিনিধিরা সচেতন হলে মহাসড়কে যান চলাচল আরও স্বাভাবিক হবে।’

/রফিক/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়