ঢাকা     শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৮ ১৪৩১

মিলি মার্মা, হার না মানা এক মা  

চাইমং মার্মা, বান্দরবান  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৪, ১২ মে ২০২৪   আপডেট: ০৮:৩৭, ১২ মে ২০২৪
মিলি মার্মা, হার না মানা এক মা  

মিলি মার্মার। ছবি: রাইজিংবিডি

মিলি মার্মা জন্মেছেন রাঙামাটির বেতবুনিয়ার পহাড়ি এলাকায়। বাবা-মা, ভাই-বোনদের বেড়ে ওঠাও সেখানে। কিন্তু, এখন বাস করছেন বান্দরবানে। তিনি সংগ্রামী নারী। একজন মা। দুই সন্তানের দাবি একাই মিটিয়ে চলেছেন মিলি। অন্য অনেক নারীর মতো আয়েসী জীবন নয় ৪৫ বছর বয়সী মিলি মার্মার।

২৩ বছর বয়সে মিলির বিয়ে হয় বান্দরবান মধ্যম পাড়ার অশোকের সঙ্গে। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার। স্বামীর রোজগার বেশি না থাকলেও তাদের দিন সুখে কাটছিল। একে একে কোলজুড়ে আসে তাদের দুই সন্তান—বড় ছেলে খিংলং থোয়াই মার্মা, আর ছোট ছেলে চওয়াইমং মার্মা। দুই সন্তান নিয়ে তারা স্বপ্ন দেখতে থাকেন। তাদের লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করবেন। দুই ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করেন। ছেলেরাও উঁচু ক্লাসে উঠতে থাকে।

তাদের সেই সুখের সংসারে একদিন বিপর্যয় নেমে আসে। অশোকের শরীরে মরণব্যাধি ক্যানসার বাসা বাঁধে। আস্তে আস্তে কর্মক্ষমতাও কমতে থাকেন। অন্যদিকে, বাড়তে থাকে চিকিৎসার খরচ। সঙ্গে দুই সন্তানের পড়ালেখার খরচ। মিলি বুঝতে পারছিলেন না, কী করবেন? উপায়ন্তর না দেখে বাবার পরামর্শে স্থানীয় বাজারে শাকসবজি বিক্রি শুরু করেন। এখনও শাকসবজি বিক্রি করেই সংসারের দাবি মিটিয়ে যাচ্ছেন।

আরো পড়ুন:

বান্দরবান মধ্যম পাড়া মগবাজার এলাকায় রাস্তার পাশে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শাকসবজি বিক্রি করেন মিলি মার্মা। আশপাশের পাহাড়ি গ্রাম থেকে চাষিরা যে শাকসবজি, আদা, হলুদের গুঁড়া, মরিচ ইত্যাদি নিয়ে আসেন, তা পাইকারি দরে কিনে নেন। পরে সারা দিন ধরে খুচরা বিক্রি করেন। এতে তার দিনে ৩০০-৪০০ টাকা লাভ হয়।

সম্প্রতি শাকসবজি বিক্রির ফাঁকে কথা হয় মিলি মার্মার সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ২০১৫ সালে স্বামী অশোক অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার উপার্জনে সংসার চলত। আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাসি-খুশির সংসারে দুঃখ নেমে আসে। দুই-তিন বছরে পড়ে থেকে অশোক মারা যায়। তখন বড় ছেলে খিংলং থোয়াই মার্মা সপ্তম শ্রেণিতে আর ছোট ছেলে চওয়াইমং মার্মা চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত।

স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি শক্ত হয়ে দাঁড়ান। সন্তানদের লেখাপড়া বন্ধ হতে দেননি। প্রতিদিন রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। তিনি কখনো সন্তানদের তাদের বাবার অভাব বুঝতে দেননি। তাদের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন। সাধ্যের মধ্যে সব আবদার পূরণ করছেন। সন্তানদের নিয়ে তাদের বাবার স্বপ্ন বৃথা যেতে দেবেন না মিলি।

মিলি মার্মা বলেন, তিনি ১০ বছর ধরে সবজি বিক্রি করছেন। শাকসবজি বিক্রি করে অল্প অল্প করে জমানো টাকা দিয়ে মাস শেষে দুই ছেলের পড়াশোনার খরচ যোগান দিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে তার দুই ছেলে ঢাকায় পড়াশোনা করছেন। বড় ছেলে অনার্স প্রথম বর্ষে, ছোট ছেলে দশম শ্রেণিতে। এই দুই সন্তানই তার দুনিয়া।

মিলি মার্মা বলেন, প্রতিদিন যা আয় হয়, তা দিয়ে তার ভরণপোষণ ও দুই ছেলের পড়াশোনার খরচ চলে। স্বামী না থাকায় নানা জন নানা কথা বলে। তাদের কথা এখন আর কানে লাগে না। মা-বাবা তাকে সাহস দিয়েছেন। তাদের দেওয়া সাহস ও সহযোগিতায় দুই সন্তানকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন।

তিনি বলেন, ‘আমার দুই ছেলে পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে ঢুকতে পারলে আমার সংগ্রাম সার্থক বলে মনে করব।’ 

বকুল/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়