ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

এতিমখানায় বেড়ে ওঠা সুমনের জিপিএ-৫ অর্জন, স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার

পঞ্চগড় প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৩৮, ১২ মে ২০২৪  
এতিমখানায় বেড়ে ওঠা সুমনের জিপিএ-৫ অর্জন, স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার

সুমন রানা।

সুমন রানা (১৭)। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছেন, থাকা হয়নি মায়ের কাছেও। বেড়ে উঠেছেন পঞ্চগড়ের একটি শিশু নগরীতে। সেখান থেকে এবার এসএসসি পাশ করেছেন সে। পেয়েছে জিপিএ-৫। তার স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার।

রোববার (১২ মে) বিকেলে আহছানিয়া শিশু মিশনে কথা হয় সুমন রানার সঙ্গে। জিপিএ-৫ অর্জনে উচ্ছ্বসিত সুমন। সে বলেছে, ছোটবেলা থেকেই এই মিশনে আছি। এটাই আমার বাসস্থান। এখান থেকে প্রাথমিক শেষ করে মাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছি। প্রাথমিকেও জিপিএ-৫ ছিল আমার।

সুমন রানার বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের মাদারিপাড়া গ্রামে। সে এ বছর পঞ্চগড় সদরের হাফিজাবাদ ইউনিয়নের মাঘই পানিমাছ পুকুরি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। সে বিদ্যালয়ের এবারের একমাত্র জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী।

সুমন রানা বেড়ে উঠেছেন আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীতে। এই শিশু নগরীটি হাফিজাবাদ ইউনিয়নের জলাপাড়া গ্রামে অবস্থিত। অনাথ, ছিন্নমূল এবং বঞ্চিত ও হারিয়ে যাওয়া পথশিশুদের সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই প্রতিষ্ঠান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জন্মের পরপরই সুমন রানার কৃষক বাবা হাসমত আলী মারা যান। শুরু হয় পরিবারে টানাপোড়েন। ৭ সন্তানকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন মা খোদেজা বেওয়া। থাকতে হতো খেয়ে না খেয়ে। সন্তানদের পড়ালেখা তো ছিল কল্পনাতীত। সুমনের বয়স যখন ৭ বছর; তখন এক সমাজকর্মীর মাধ্যমে এই মিশনে ঠাঁই হয় তার।

সুমন বলে, এই শিশু নগরীতে ঠাঁই না হলে পড়ালেখা অসম্ভব ছিলো। মিশন কর্তৃপক্ষ এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যথেষ্ট আন্তরিকতা ছিল বলেই আজকে আমি এই ফলাফল অর্জনে সক্ষম হয়েছি। আমার স্বপ্ন ভবিষ্যতে আমি চিকিৎসক হয়ে অসহায় মানুষের সেবা করতে চাই।

মাঘই পানিমাছ পুকুরি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. লিয়ন প্রধান বলেন, সুমন রানা এক সংগ্রামী বালক। অসম্ভব মেধাবী এই শিক্ষার্থী বরাবরই ক্লাসে ফার্স্ট ছিলো এবং শেষটাও ভালো করেছে। সুমন রানা অন্য শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা হতে পারে। যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সকল সুযোগ সুবিধা থাকার পরও এমন সাফল্যের নাগাল পায় না; সেখানে সুমন সুবিধা বঞ্চিত হয়েও আমাদের বিদ্যালয়ের সুনাম বাড়িয়েছে। সামনের দিনগুলোতে ভালো সাপোর্ট পেলে ভালো জায়গায় পৌঁছাবে বলে বিশ্বাস করি। আমি সবসময় তার ভালো প্রত্যাশা করি।

আহছানিয়া শিশু মিশন নগরীর তথ্য মতে, সুমন রানা ছাড়াও এবছর এখানকার আরো ৫ জন এসএসসি পাশ করেছেন। তবে তারা জিপিএ-৫ পাননি। গত বছরও ৬ জন এসএসসি পাশ করে এখান থেকে। সে বছরও একজন জিপিএ-৫ পায় এই শিশু নগরী থেকে। শিশুদেরকে নগরীর অভ্যন্তরে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। এরপর তারা মাধ্যমিকে স্থানীয় স্কুলে ভর্তি হয়। বর্তমানে এখানে ১৬০ জন শিশু রয়েছে। তাদের যাবতীয় খরচ বহনসহ মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করে আহছানিয়া মিশন।

শিশু নগরীর কৃষি কর্মকর্তা সেলিম প্রধান বলেন, বিভিন্নভাবে বঞ্চিত শিশুদের এখানে ঠাঁই হয়। শুরুর দিকে শিশুরা থাকতে না চাইলেও একটু বড় হবার পর তারা অনেক কিছু বুঝতে শিখে। তারা বুঝতে পারে এটাই তাদের মূল ঠিকানা। এখানে শিশুরা নিজের বাড়ির মতই থাকে, পড়ালেখা করে।

আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীর সেন্টার ম্যানেজার দীপক কুমার রায় বলেন, অন্ধকারে পা বাড়ানো শিশুদের আলোর পথে নিয়ে আসে আহছানিয়া মিশন। তাদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এই শিশু নগরী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ বছর ৬ জন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একজন জিপিএ-৫ এবং সবার ভালো ফলাফল; এটা একটা বড় অর্জন বলে মনে করি। এখানে থাকা অন্য শিশুরাও ক্রমান্বয়ে সুফল বয়ে আনবে।

নাঈম/ফয়সাল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়