ঢাকা     রোববার   ২৭ এপ্রিল ২০২৫ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩২

দলীয় নির্দেশ লঙ্ঘন করে উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রীর ভাই

নরসিংদীর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৫, ১৩ মে ২০২৪   আপডেট: ১২:৩৩, ১৩ মে ২০২৪
দলীয় নির্দেশ লঙ্ঘন করে উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রীর ভাই

নজরুল মজিদ মাহমুদ স্বপন। ফাইল ফটো

নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের ছোট ভাই নজরুল মজিদ মাহমুদ স্বপন।

মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের স্বজনদের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে নির্বাচনের মাঠে তার উপস্থিতি সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচনে বড় বাধা হিসেবে দেখছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।

প্রতিদ্বন্দ্বীদের আশা ছিল, দলের সিদ্ধান্ত মেনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন নজরুল মজিদ মাহমুদ স্বপন। কিন্তু তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।

নজরুল মজিদ মাহমুদ স্বপন নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মনোহরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য। তিনি ছাড়াও মনোহরদী উপজেলা পরিষদের এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন আরও ৪ জন।

তারা হলেন- মনোহরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ফজলুল হক, সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াশীষ কুমার রায়, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান রঙ্গু ও আইনজীবী মো. মাসুদুর রহমান।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মনোহরদী উপজেলায় টানা পাঁচবার উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন সাইফুল ইসলাম খান। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তার নাম বাদ দিয়ে শিল্পমন্ত্রীর ভাই নজরুল মজিদ মাহমুদের নাম একক প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রে পাঠিয়েছিল উপজেলা আওয়ামী লীগ। কিন্তু কেন্দ্র থেকে তাকে না দিয়ে সাইফুল ইসলাম খানকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সাইফুল ইসলাম খান। কিন্তু ৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন তিনি। এবার আর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হননি।

চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা আশা করেছিলেন, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানের দলীয় নির্দেশ মেনে শিল্পমন্ত্রীর ভাই সড়ে দাঁড়াবেন। কিন্তু তিনি সেটা না করে নির্বাচনী মাঠে থাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে নির্বাচনে তিনি প্রভাব বিস্তার শুরু করেছেন বলে অভিযোগ প্রার্থীদের।

মনোহরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান প্রার্থী হাবিবুর রহমান রঙ্গু বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে মন্ত্রীর ভাই যদি নির্বাচন করেন তাহলে শুধু শুধু আমাদের নির্বাচন করে লাভ কী? তিনি ভোটারদের বলে বেড়াচ্ছেন, ভোট দিলেও তিনি চেয়ারম্যান না দিলেও তিনি চেয়ারম্যান। ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে গেলে তারা জানান, কষ্ট করে লাভ কি? ভোট তো কেটেই নিয়ে যাবে। ভোটাররা ভোট দেওয়ার গ্যারান্টি চান।’

মনোহরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রিয়াশীষ কুমার রায় বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত অমান্য করার সাহস দলের কোনো নেতাকর্মীর দেখানো উচিত না। ভেবেছিলাম, দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে মন্ত্রীর ভাই মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন। কিন্তু করেননি। তার শুভবুদ্ধির উদয় হোক।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. ফজলুল হক বলেন, ‘শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছি। আশা করছি, নির্বাচনের আগে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে শিল্পমন্ত্রীর ভাই নজরুল মজিদ মাহমুদ সড়ে দাঁড়াবেন।’

এ বিষয়ে শিল্পমন্ত্রীর ছোট ভাই ও চেয়ারম্যান প্রার্থী নজরুল মজিদ মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘নির্বাচন করব বলেই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। মন্ত্রীর ভাই হিসেবে নয়, নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচন করছি।’

নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ানোর বিষয়ে দলীয় কোনো নির্দেশনা পাননি দাবি করে তিনি বলেন, ‘এমন কোনো নির্দেশনা পাইনি। তাই নির্বাচন করতে আমার বাঁধা নেই।’

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের কোনো চিঠি এখনো পাইনি। যারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করবেন, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

হৃদয়/কেআই


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়