ধামরাইয়ে হেলে পড়া ভবনটি অবৈধ, প্রকল্পটিই ছিল কৃষি জমিতে
সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

ঢাকার ধামরাইয়ে ধানসিঁড়ি হাউজিং প্রকল্পটি কৃষি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছিল। ওই প্রকল্পে হেলে পড়া চারতলা ভবনটিরও কোনো অনুমোদন ছিল না।
স্থানীয়রা জানান, ২০০৯ সালের দিকে ধামরাই উপজেলার ঢুলিভিটা বাসস্ট্যান্ডের পার্শ্ববর্তী এলাকায় কয়েক একর জমিতে গড়ে ওঠে ধানসিঁড়ি হাউজিং প্রকল্প। পুরো প্রকল্প গড়ে তোলায় নেতৃত্ব দেন ধামরাই পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোকছেদ।
রাজউক, হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন ও ধামরাই উপজেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, ওই আবাসিক এলাকার কোনো সরকারি অনুমোদন নেই। এমনকি ওই আবাসন প্রকল্পের অন্যতম উদ্যোক্তা কাউন্সিলর মো. মোকছেদও এই বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
এলাকাটিতে গিয়ে দেখা যায়, ঢুলিভিটা-শরীফবাগ সড়কের ঢুলিভিটা বাসস্ট্যান্ডের একশ গজের মধ্যেই শরীফবাগগামী লেনের পাশে ধানসিঁড়ি হাউজিং প্রকল্পের প্রধান গেট। গেটটি থেকে ৫০-৬০ গজ দূরেই ডান লেনের পাশে এক সারিতে তিনটি ভবন।
প্রথম ভবনের প্লটটি ছিল ছয় শতাংশ আকারের। পৌরসভা থেকে এই জমিতে ছয়তলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন নিয়ে ৭০ ফুট পাইলিং করা হয়। সেই পাইলিং করা জমি চার শতাংশ ও দুই শতাংশ আকারে কিনে নেন মো. রফিক ও মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন। এরমধ্যে রফিক সড়কের সামনে তিন তলা ভবন নির্মাণ করেন। আর পেছনে দুই শতাংশ জমিতে চারতলা ভবন নির্মাণ করেন জিয়াউদ্দিন। আর এই প্লটের পাশেই ১০ ফুট সড়কের জায়গা রেখে আরেকটি ছয়তলা ভবন নির্মাণ করেন সামসুল হক নামে এক ব্যক্তি। পরবর্তীতে ১০ ফুট সড়কের জায়গাটি আবাসন প্রকল্পের কাছ থেকে কিনে নেন জিয়া। সেখানেই করিডোর আকারের ১০ ফুট চওড়া ও ৩০ ফুট লম্বা আরেকটি চার তলা ভবন নির্মাণ করেন জিয়া। ওই করিডোর দিয়েই মূল ভবনে প্রবেশ করতে হয়। দুই ভবনের মাঝখানে থাকা এই করিডোর আকারের ভবনটিই শনিবার হেলে পড়ে।
ভবনটিতে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির চতুর্থ তলার একটি অংশ হেলে পড়েছে পাশের ছয়তলা ভবনের ওপর। এতে তৃতীয় তলায় বারান্দার সানসেটে ফাটল ধরেছে। ভবনটি হেলে পড়ার পরপরই কক্ষগুলোর বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়েছে উপজেলা ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
ধানসিঁড়ি হাউজিং প্রকল্পের বরাত দিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, ছয় শতাংশ প্লটটিতে ছয়তলা ভবনের অনুমোদন ছিল। তবে সেখানে আলাদা ভবনের কথা জানে না পৌর কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রাথমিকভাবে এটিকে অবৈধ বলেছেন ধামরাই পৌরসভার মেয়র গোলাম কবীর।
বাড়ির মালিক জিয়াউদ্দিনের ভাষ্য, ‘ছয় শতাংশ জুড়েই ভবন নির্মাণের অনুমোদন রয়েছে। ফলে আলাদা করে দুই শতাংশের জন্য কোনো অনুমোদন নেননি তিনি।’
তার দাবি, ‘সড়কের রেকর্ডীয় জমিটি পরবর্তীতে ধানসিঁড়ি হাউজিং প্রকল্পের অন্যতম মালিক মো. মোকছেদের মাধ্যমে কিনে নেন তিনি। সেখানেই ভবন নির্মাণ করেন।’
ধামরাই পৌরসভার মেয়র গোলাম কবির বলেন, ‘ধানসিঁড়ি হাউজিংয়ের ১০ ফুট রাস্তায় তারা নিয়ম না মেনে ভবনের এ অংশ (হেলে পড়া অংশ) বর্ধিত করেছে। বর্ধিত অংশের কোনো অনুমোদন নেই। এই বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ভবন মালিক মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন বলেন, ‘আমার ভবন বৈধ। ছয়তলার জন্য ৭০ ফুট পাইলিং করা হয়েছে। সয়েল টেস্টসহ ভবন নির্মাণের সব বিধি মানা হয়েছে। যেটা হেলে পড়ার কথা বলা হচ্ছে, ওই অংশ বাতাসের কারণে ওই ভবনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছে। আমার ভবন নিচু হওয়ায় ছয়তলার ভবনের ধাক্কায় এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
প্রশাসন যে ব্যবস্থা নেবে, সেই অনুযায়ী তিনি পদক্ষেপ নেবেন বলেও জানান।
জিয়াউদ্দিনের ভাই মোহন সিকদার বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে কেউ শত্রুতা করছে। বৃষ্টি আর বজ্রপাতে বিল্ডিংয়ের এ অংশ হেলে পড়ে ফাটল ধরেছে।’
ভবন হেলে পড়ার ঘটনা তদন্তে ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খান মো. মামুন আব্দুল্লাহকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে সদস্য সচিব করা হয়েছে উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেনকে। পৌরসভার টাউন প্ল্যানার (নগর পরিকল্পনা কর্মকর্তা) ও পৌরসভার প্রকৌশলী, স্থানীয় কাউন্সিলরকেও কমিটিতে রাখা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ভবন হেলে পড়া ও ফাটল ধরার নির্দিষ্ট কারণ এখনই বলা যাচ্ছে না। তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত করে এর কারণ উদঘাটন করা হবে।’
ধামরাই পৌরসভার মেয়র গোলাম কবির মোল্লা বলেন, ‘তদন্ত কমিটি বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন আমাদের কাছে দেবে। সেই প্রতিবেদন নিয়ে আমরা এক্সপার্টের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবো। যতক্ষণ এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ এ দুই ভবনে বসবাস করতে পারবেন না।’
সাব্বির/টিপু