আলোচিত রহিমা বেগম অপহরণ মামলার আসামিদের অব্যাহতি
নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম

রহিমা বেগম
দেশজুড়ে বহুল আলোচিত নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ রহিমা বেগম অপহরণ মামলাটির অবশেষে যবনিকা হয়েছে। গতকাল সোমবার (১৩ মে) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের জজ জামিরুল হায়দার সিআইডি’র দেওয়া চূড়ান্ত রিপোর্ট গ্রহণ করে পাঁচ আসামিকেই মামলা থেকে অব্যহতি দেন। খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তারিক মাহমুদ তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, মিথ্যা মামলা দিয়ে অযথা হয়রানির জন্য বাদী ও কথিত ভিকটিমসহ তার কন্যাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে অভিমত দেওয়া হয়েছে পিবিআই এবং সিআইডির তদন্ত রিপোর্টে।
আরও পড়ুন: নিখোঁজের ২৮ দিন পর মায়ের লাশ শনাক্তে খুলনা থেকে ময়মনসিংহে মরিয়ম
মামলার বিবরণে জানা যায়, খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর থানাধীন খানাবাড়ী হতে নিজ বাড়িতে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে থাকা অবস্থায় ২০২২ সালের ২৭ আগষ্ট রাত রাত ১১টার দিকে নিখোঁজ হন ৬ সন্তানের জননী রহিমা বেগম। সেই রাতে তিনি তার মৃত প্রথম স্বামীর বাড়িতে দ্বিতীয় স্বামী বেলাল হাওলাদারকে নিয়ে অবস্থান করছিলেন। নিখোঁজ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর তার ছেলে সাদি বাদী হয়ে দৌলতপুর থানার একটি জিডি করেন এবং পরদিন রহিমা বেগমের ছোট মেয়ে আদারী আক্তার নাম না জানাদের আসামি করে থানায় মামলা করেন। এই মামলার এজহারে জমি নিয়ে বিরোধে ৫ জনের নাম উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন: ‘আমরা শুধু মাকে চাই’
নিখোঁজ হবার পর পরিবারের পক্ষ থেকে রহিমা বেগমের মেয়ে ঢাকার তেজগাঁও কলেজের ছাত্রী মরিয়ম মান্নান খুলনা–ঢাকায় একাধিক সংবাদ সম্মেলন, মানব বন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে মিডিয়া কভারেজ পান। এর মধ্যে ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে মরিয়াম মান্নান, তার মা রহিমা বেগমের লাশ পেয়েছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা পোষ্ট দেন এবং ময়মনসিংহ ফুলপুরে নাম না জানা নারীর লাশের ছবি দেখে সেটি তার মা বলে নিশ্চিত করেন। পরদিন পরিবারের সদস্যরা ময়মনসিংহে গিয়ে নিশ্চিত করেন ৩২/৩৩ বছরের লাশটি তাদের মায়ের। ডিএনএ টেষ্ট করার জন্য ময়মনিসংহ পুলিশে আদালতে আবেদন করার কথা ছিল। কিন্তু, ডিএনএ টেষ্টের আবেদনের আগেই নিখোঁজের ২৯ দিন পর ২৪ সেপ্টেম্বর খুলনা মেট্রেপলিটন পুলিশ নিখোঁজ রহিমা বেগমকে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানার সৈয়দপুর এলাকার জনৈক কুদ্দুসের বাড়ি থেকে জীবিত উদ্ধার করে। সেদিন দিবাগত রাত ১১টা ২৫ মিনিটে তাকে উদ্ধার করে রাত ২টার পর তাকে খুলনার দৌলতপুর থানায় আনা হয়।
এর আগেই, পুলিশ জমি নিয়ে বিরোধ পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার এবং রিমান্ডে নেয়। পরে পুলিশ রহিমা বেগমের দ্বিতীয় স্বামী বেলাল হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে আনে। পরে জমি-জমা নিয়ে বিরোধ থাকা আরো চার জন গ্রেপ্তার হয়। প্রথম থেকেই মামলাটি দৌলতপুর থানা পুলিশ এবং র্যাব তদন্ত করছিল। পরে পিবিআই এবং সিআইডি তদন্ত করে। সিআইডি এবং পিবিআই ঊভয় ঘটনা সত্য নয় বলে ফাইনাল রিপোর্ট প্রদান করে।
সিআইডি এবং পিবিআই তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, রহিমা বেগম প্রতিপক্ষকে জব্দ করতে স্বেচ্ছায় আত্নগোপন করেন এবং এই সময় বান্দরবনসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ান বলে তদন্তে প্রকাশ পায়। পুলিশ তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে, হয়রানি মূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করার জন্য বাদী, ভিকটিম ও চার কন্যার বিরুদ্ধে ১৭/৩০ ধারার মামলা করা যেতে পারে।
এই মামলার অন্যতম আসামি মহিউদ্দিন জানান ,তারা মিথ্যা মামলা হতে অব্যাহতি পেয়েছেন। এখন মামলার রায়ে উল্লেখিত বাদীর বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করবেন। অন্য আসামিরা হলেন রহিমা বেগমের দ্বিতীয় স্বামী বেলাল ঘটক, গোলাম মহিউদ্দিন, তার ভাই গোলাম কিবরিয়া, রফিকুল আলম পলাশ, তার ভাই নূরুল আলম জুয়েল।
এ বিষয়ে কথিত নিখোজঁ রহিমা বেগমের মেয়ে আদুরী বেগম জানান, নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
নূরুজ্জামান/মাসুদ