ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২১ ১৪৩১

নোয়াখালীর দুই নাবিকের আগমনে পরিবারে স্বস্তি

নোয়াখালী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:০৯, ১৪ মে ২০২৪  
নোয়াখালীর দুই নাবিকের আগমনে পরিবারে স্বস্তি

নোয়াখালীর দুই নাবিক আনোয়ারুল হক রাজু ও মোহাম্মদ ছালেহ আহমেদ

জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাস পর বাড়িতে আসবেন জাহাজের এবি (অ্যাবল সি ম্যান) হিসেবে কর্মরত মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক রাজু (২৮)। অপেক্ষার প্রহর গুনছেন মা দৌলত আরা বেগম।

ছেলের জন্য গরুর গোশত, মুরগি, মাছ ও সিমের বীচির বিশেষ তরকারিসহ নানা পদের রান্না করে রেখেছেন। ছেলে আসলে রাঁধবেন পোলাও। তার আনন্দের শেষ নেই। ছেলেকে নিজ হাতে খাওয়াবেন তিনি।

মঙ্গলবার (১৪ মে) দৌলত আরা বেগম বলেন, আমার বাপজানকে কতদিন পর দেখবো। পরিবারের সবাই আনন্দিত। আমি রাজুর পছন্দের অনেক পদের রান্না করেছি। সে আসলে পোলাও রান্না করবো। ছেলে আমার বুকে আসবে এটাই আমাদের আনন্দ।

মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক রাজু নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের আজিজুল হক মাস্টার ও দৌলত আরা বেগমের ছেলে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে রাজুর অবস্থান তৃতীয়।

জিম্মিদশা থেকে মুক্তির একমাস পর স্বজনদের কাছে ফিরছেন এমভি আব্দুল্লাহ’র ২৩ নাবিক। জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া এই ২৩ নাবিককে নিয়ে চট্রগ্রাম বন্দরের জেটিতে এসে পৌঁছেছে এমভি জাহান মনি-৩। মঙ্গলবার বিকেলে জাহাজটি জেটিতে পৌঁছায়। এক মাস আগে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছ থেকে মুক্ত হওয়া এমভি আব্দুল্লাহ বাংলাদেশের কুতুবদিয়ায় নোঙর করেছে সোমবার (১৩ মে)। কিন্তু দেশে ফিরলেও স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ করতে তাদের আরও একদিন অপেক্ষা করতে হয়।

রাজুর বাবা আজিজুল হক মাস্টার বলেন, রাজু বাড়িতে এসে রোজার ঈদ করার কথা ছিল। ঈদের সময় আমাদের পরিবারে কোনো আমেজ ছিল না। সেই ঈদের আনন্দের চেয়েও দ্বিগুণ আনন্দ হবে ছেলে আসলে। নামাজ পড়ে মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছি। ছেলেকে ছাড়া আমরা খুবই কষ্টে দিন অতিবাহিত করেছি। ছেলে নতুন পাকা ঘর করেছে। এবার বাড়িতে আসলে ছেলেকে বিয়ে করাবো। আল্লাহ যেনো আমার ছেলেকে সহিসালামতে বাড়িতে আনেন।

রাজুর বড় ভাই জিয়াউল হক রনি বলেন, মা-বাবার বয়স হয়েছে। আমাদের বাড়ি থেকে কেউ চট্রগ্রাম যায়নি। চট্রগ্রামে থাকা আমাদের আত্মীয়-স্বজনরা দেখা করতে গেছে। আমার ভাই আসবে বাড়িতে এটাই আমাদের আনন্দ।

রাজু স্থানীয় বামনী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর বামনী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। চট্রগ্রামের ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট (এনএমআই) থেকে সিডিসি কোর্স সম্পন্ন করেন।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী বলেন, সন্তানের জন্য বাবা মায়ের অস্থিরতা কেউ বুঝবে না। যতক্ষণ না কেউ নিজে বাবা-মা হবে। রাজুর পরিবারের সাথে আমার যোগাযোগ আছে। রাজুর ঘরে আজ আনন্দের বন্যা বইছে। ভালো রান্না হচ্ছে। অতীতের ন্যায় সব সময় যেকোনো প্রয়োজনে রাজুর পরিবারের পাশে উপজেলা প্রশাসন ছিল, আছে এবং থাকবে।

অন্যদিকে মুক্তি পাওয়া আরেকজন হচ্ছেন জাহাজের ফাইটার পদে কর্মরত মোহাম্মদ সালেহ। তার বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার নোয়াখলা ইউনিয়নের সিংবাহুড়া গ্রামে।

তার স্ত্রী তানিয়া আক্তার বলেন, আমরা সবাই চট্রগ্রামে। বাড়িতে কেউ নেই। সন্তানদের নিয়ে আমি এসেছি তাদের বাবাকে এগিয়ে আনার জন্য। আজ আমাদের খুব আনন্দ। ঈদের আনন্দের চেয়েও বেশি। কতদিন পর সন্তানরা তাদের বাবাকে দেখবে। তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে। শুধু জিজ্ঞাসা করছে কখন বাবাকে দেখবে। তিনিসহ আমরা একসঙ্গে বাড়িতে যাবো।

প্রসঙ্গত, কার্গো নিয়ে আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করে সোমালিয়ান দস্যুরা। অস্ত্রের মুখে দস্যুরা সেখানে থাকা ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখে। আটকের পর জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জিম্মিকালীন সময়ে মালিকপক্ষের তৎপরতায় সমঝোতা হয় জলদস্যুদের সঙ্গে। ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ৩টায় এমভি আবদুল্লাহ থেকে দস্যুরা নেমে যায়।

সুজন/ফয়সাল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়