ঢাকা     সোমবার   ০১ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

সয়াবিনের বাম্পার ফলন, চাষিরা উত্তোলন ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত 

জাহাঙ্গীর লিটন, লক্ষ্মীপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৪, ১৭ মে ২০২৪   আপডেট: ১৫:২৭, ১৭ মে ২০২৪
সয়াবিনের বাম্পার ফলন, চাষিরা উত্তোলন ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত 

লক্ষ্মীপুরের চাষিরা এ সময় সয়াবিন তোলা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। শ্রমিকের অভাবে পরিবারের নারী সদস্যরাও এখন  সয়াবিন উত্তোলন ও মাড়াইয়ে পুরুষদের সহযোগীতা দিয়ে যাচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর জেলায় এবার সয়াবিনের বাম্পার ফলন হয়েছে।আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সময়মতো বীজ বপন ও পরিচর্যা করতে পারায় সয়াবিনের ফলন ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। তবে সয়াবিনের বাম্পার ফলন হলেও কাংখিত দাম না পেয়ে তারা হতাশ।  

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে লক্ষ্মীপুর জেলায় ৪২ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ হয়েছে। দেশের মোট উৎপাদিত সয়াবিনের ৮০ ভাগ উৎপাদিত হয় লক্ষ্মীপুর জেলায়। সয়াবিন উৎপাদনে লক্ষ্মীপুরের পরের অবস্থানে রয়েছে পার্শবর্তী জেলা নোয়াখালী। জেলায় এবার উচ্চফলনশীল নতুন জাতের বিইউ-১, বিইউ-২, বারি-৫ ও ৬, বিনা-৫ ও ৬ জাতের সয়াবিন চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন কৃষকরা। এবছর সয়াবিন থেকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বছর  জেলায় সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৫ হাজার  ৪০ মেট্রিক টন। তবে ফলন ভাল হওয়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও উৎপাদন বেশি হয়েছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।

সরেজমিনে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের হায়দারগঞ্জ, চরবংশি, কমল নগরের চর মাটি, সদরের চর রমনী মোহন, চরউভুতি, কুশাখালীসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে  রয়েছে সয়াবিনের ক্ষেত। সয়াবিন চাষাবাদে উৎপাদনের খরচের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন সয়াবিন চাষাবাদে ঝুঁকছেন চাষিরা। 

সয়াবিন চাষিরা জানায়, মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হওয়া ও তীব্র দাবদাহে সয়াবিনের ফলন নিয়ে শুরুতে শঙ্কা থাকলেও মাঠে রোগবালাইয়ের আক্রমণ না থাকায় সয়াবিনের ফলনে কোন ক্ষতি হয়নি। গেল বছরের চেয়েও ফলন বেশি হওয়ায় খুশি চাষিরা। তবে দাম নিয়ে হতাশ তারা। 

গত বছর প্রতিমণ গোটা সয়াবিন মৌসুমে ২৩০০ টাকায় বিক্রি হলেও এবার  তারা বিক্রি করছেন ২৩৩০ থেকে ৫০ টাকায়।  শ্রমিকের মজুরি, সার ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধির সাথে এ দামের কোন হিসাব মিলাতে পারছেনা চাষিরা। 

কমল নগরের চর লরেঞ্চ এলাকার জসিম উদ্দিন, ভবানীগঞ্জের জামাল উদ্দিন সহ কয়েকজন সয়াবিন চাষি  জানান, এবার সয়াবিনের মণ নুন্যতম আড়াই হাজার টাকা হলে চাষিরা উৎপাদন খরচ উঠাতে সক্ষম হতো। এ অঞ্চলে সয়াবিনভিত্তিক প্রক্রিয়াজাত কারখানা গড়ে তোলা গেলে সয়াবিনের বাজার দর আরও ভালো পেতেন তারা। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা শাহজাহান জানান, আমাদের দেশে উৎপাদিত সয়াবিন থেকে তেল উৎপাদন করা হয়না। দেশে উৎপাদিত সয়াবিন পোল্ট্রি খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 

নুরনবী নামে কুশাখালী এলাকার এক কৃষক ৪ একর জমিতে সয়াবিনের আবাদ করেছেন। তার চাষকৃত এক একর জমিতে ৩০ মণ সয়াবিন উৎপাদন হয়েছে। বাকী তিন একরে ক্ষেত থেকে সয়াবিন তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। তবে বৃষ্টিপাত না থাকায় এবার সয়াবিনের ভালো ফলন হওয়ায় বেশ খুশি এ কৃষক। তবে আশানুরূপ দাম না পাওয়া হতাশা প্রকাশ করেন তিনিও। 

চররমনীর চাষি কবির হোসেন জানান, বিভিন্ন দুর্যোগের ফলে বিগত মৌসুমগুলোতে সয়াবিন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হতো তাদের। গত বছর সয়াবিন ক্ষেতের একর প্রতি ২৮/২৯  মণ সয়াবিন উৎপাদন হলেও চলতি খরিপ মৌসুমে আবহাওয়া ভালো থাকায় কানি প্রতি ৩০ মণেরও বেশি সয়াবিনের ফলন হয়েছে। উৎপাদিত সয়াবিনের গুণগত মানও ভালো। বর্তমান বাজারে মণ প্রতি ২৩০০ থেকে ২৩৫০ টাকা ধরে সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ফলন ভালো হলেও দাম বাড়ে না। প্রতিবছর সার-কীটনাশকের দামসহ শ্রমিক খরচও বৃদ্ধি পায়। সে হারে সয়াবিনের বাজার দর বৃদ্ধি পাচ্ছে না। যার ফলে আশানুরূপ দাম পাওয়া যায় না। আশানুরূপ দাম পাওয়া গেলে কৃষকরা সয়াবিন চাষে আরও বেশি আগ্রহী হতেন।

এদিকে সয়াবিন চাষাবাদকে লাভজনক উল্লেখ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক সোহেল মো. শামসুদ্দীন ফিরোজ জানান, চাষিরা উন্নতজাতের বীজ বপন ও সুষম সারের ব্যবহারের ফলে এবার এ জেলায় সয়াবিনের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে সয়াবিনের ভালো জাত কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করায় আগের চেয়ে ফলন অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে হেক্টর প্রতি ২ টন সয়াবিন উৎপাদন হলেও ভবিষ্যতে উৎপাদন আরও বাড়বে। উৎপাদিত সয়াবিন শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহার করা গেলে আমদানি নির্ভরতা কমার পাশাপাশি অর্থ সাশ্রয় হবে।

/টিপু/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়