চোর অপবাদে ব্যবসায়ীকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
ব্যবসায়ী ও সাবেক ইউপি সদস্য নাম মো. ফারুক
লক্ষ্মীপুরে পেঁয়াজ চুরির অপবাদ দিয়ে এক ব্যবসায়ী ও সাবেক ইউপি সদস্যকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। পরে কথিত সালিশী বৈঠকের নামে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
শনিবার (১৮ মে) লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দার বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
ষাটোর্ধ্ব ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও সাবেক ইউপি সদস্যের নাম মো. ফারুক। তার বাড়ি পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার দশঘরিয়া এলাকায়। তিনি দশঘরিয়া বাজারে ফারুক স্টোর নামে একটি মুদি দোকানের মালিক ও স্থানীয় ৩নং পরকোট ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ওই ব্যবসায়ীকে বিদ্যুতের একটি পিলারের সাথে রশি দিয়ে দুই হাত পিছমোড়া করে বেঁধে রাখা হয়। একইসঙ্গে লোহার শিকল দিয়ে দুই পা পিলারের সাথে তালা দিয়ে আটকে রাখে। এসময় বাজারের ব্যবসায়ী ও আগত লোকজন তাকে নির্দয়ভাবে নির্যাতন করেছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছে। তবে কে বা কারা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে তার সঠিক তথ্য জানা যায়নি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম বলেন, বাজারের বাবুলের দোকানের ১ কেজি পেঁয়াজ চুরির সময় দোকানের লোকজন চোরকে আটক করেছে বলে শুনেছি।
অপরদিকে পোদ্দার বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ বলেন, বাজারের মসজিদ মার্কেট এলাকায় চারটি দোকানে পেঁয়াজ, রসুন চুরির সময় লোকজন তাকে আটক করে পিলারে বেঁধে রেখেছিল বলে শুনেছি। পরবর্তীতে খবর পেয়ে আমি ১১টার দিকে বাজারে গিয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির অফিসে আটককৃত চোরকে তার স্বজনদের হাতে তুলে দিয়েছি।
একটি সূত্রে জানা গেছে, বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ প্রকাশ হাতকাটা হারুনের নেতৃত্বে কথিত সালিশ বৈঠকে নির্যাতিত ব্যবসায়ীকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে স্বজনদের কাছ থেকে তা তাৎক্ষণিকভাবে আদায় করেন। একইসঙ্গে এ ঘটনা নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি করবে না মর্মে একটি মুছলেকা নিয়েছেন। তবে অভিযুক্ত হারুন জরিমানা আদায়ের বিষয় এড়িয়ে গেলেও মুছলেকা আদায়ের কথা স্বীকার করেছেন।
এদিকে বাজারের উপকন্ঠে বিদ্যুতের পিলারের সাথে তিন ঘন্টা ধরে কথিত চোরকে বেঁধে রেখে নির্যাতন এবং কথিত সালিশ বৈঠক করা হলেও ঘটনাস্থল থেকে ২০০ গজ দূরে বাজারের উপকন্ঠে থাকা পোদ্দার বাজার পুলিশ ক্যাম্পের পুলিশ এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই মাহবুবুর রহমান।
দশঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা বীমাকর্মী সোহাগ মো. ফারুককে তার প্রতিবেশী ও এলাকার সাবেক মেম্বার এবং বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বলে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ফারুকের ছেলেরা বিদেশে থাকেন এবং তিনি এলাকায় সম্ভ্রান্ত লোক হিসেবে পরিচিত। মারাত্মক আহত ব্যবসায়ী ফারুককে স্বজনরা নিয়ে এসে চাটখিল শহরে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। যতটুকু শুনেছি তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়।
লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার তারেক বিন রশিদ বলেন, নির্যাতনের শিকার ব্যক্তির ছবি আমি ফেসবুকে দেখে স্থানীয় পুলিশকে বিস্তারিত জানাতে বলেছি। নির্যাতিত ব্যক্তি আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিব।
লিটন/ফয়সাল