ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

খুলনার ৩ উপজেলায় ভোট কাল, প্রস্তুতি সম্পন্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩১, ২০ মে ২০২৪  
খুলনার ৩ উপজেলায় ভোট কাল, প্রস্তুতি সম্পন্ন

মঙ্গলবার (২১ মে) খুলনার দিঘলিয়া, ফুলতলা ও তেরোখাদা উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোট গ্রহণের সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন। সোমবার (২০ মে) ব্যালট বাক্সসহ নির্বাচনি সরঞ্জাম কেন্দ্রগুলোতে পাঠানো হয়েছে। 

নির্বাচন অফিসের সূত্র জানায়, খুলনার তিন উপজেলায় মোট ভোটারের সংখ্যা ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৭০৩ জন। এরমধ্যে দিঘলিয়া উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নে ভোটারের রয়েছেন ১ লাখ ৩০ হাজার ৭৪৮ জন। ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৫২ টি। বুথ সংখ্যা ৩৪৪টি।  ফুলতলা উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ১৫ হাজার ১৮৭ জন। তেরোখাদা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে ১ লাখ ৩ হাজার ৭৬৮ জন ভোটার রয়েছেন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪৩টি ও বুথ ২৭৬টি।

এবারের নির্বাচনে দিঘলিয়া ও তেরখাদা উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। তবে, ফুলতলা উপজেলায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেনের একক আধিপত্য থাকায় অন্য দুই প্রার্থী শক্ত ভিত গড়ে তুলতে পারেননি। খুলনায় নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ নেই। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো অংশগ্রহণ না করার কারণে নির্বাচনের পালে হাওয়া লাগেনি। তারপরেও জয়-পরাজয় নিয়ে চলছে আলোচনা।

ফুলতলা উপজেলা: এই উপজেলায় ৪ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করলেও ইতোমধ্যে নগরীর খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবিদ হোসেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ভোটের মাঠে প্রচার-প্রচারণায় ছিলেন ৩ জন। এরা হলেন- ফুলতলা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগ নেত্রী বিলকিছ আক্তার ধারা ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাব্বির হোসেন। দল থেকে বহিষ্কার হওয়ায় প্রচার-প্রচারণায় সাব্বির হোসেনের সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের দেখা যায়নি। এ ছাড়া, ভোটারদের মধ্যেও তার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তারও দেখা মেলেনি। জেলা আওয়ামী লীগ নেত্রী বিলকিছ আক্তার ধারাও ভোটারদের কাছে টানতে পারেননি। ফলে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ফুলতলা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেনের বিজয় অনেকটাই সুনিশ্চিত বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।

দিঘলিয়া উপজেলা: দিঘলিয়ায় ৪ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ মারুফুল ইসলাম ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দীন মল্লিকের মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া গেছে। এ উপজেলায় অপর দুই প্রার্থী ব্যবসায়ী জাকির হোসেন ও বিএনপি নেতা গাজী মো. এনামুল হাসানের কর্মী-সমর্থকদের মাঠে দেখা যায়নি। তার ওপর দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করার কারণে এনামুল হাসান মাসুমকেও দল থেকে বহিষ্কার করার পর বিএনপি’র কোনো নেতাকর্মী তার পাশে নেই। 

তেরখাদা উপজেলা: এই উপজেলা নির্বাচনে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. সরফদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু এবং জেলা মৎস্যজীবী লীগের সহ-সভাপতি আবুল হাসান শেখের মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া গেছে। প্রথমদিকে প্রচার-প্রচারণায় বাচ্চু এগিয়ে থাকলেও গত দু’দিন ধরে ভোটের চিত্র বদলে গেছে। গত শুক্রবার আবুল হাসান শেখ যে শোডাউন দিয়েছেন সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও ভোটরদের বড় একটি অংশকে দেখা গেছে। 

দলীয় একটি সূত্র জানায়, স্থানীয় সংসদ সদস্যের সমর্থকরা আবুল হাসান শেখের পক্ষে সরাসরি কাজ করছেন। ফলে একাধিকবার নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান সরফদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছেন। এই দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দিয়েছেন এলাকাবাসী।

এদিকে, ৩ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৫ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৯ জনসহ মোট ২৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে ফুলতলা উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন, দিঘলিয়া উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন এবং তেরখাদা উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। 

দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার হুমায়রা পারভীন বলেন, নির্বাচনে ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ২০ মে সকাল থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনী  সরঞ্জামাদি পৌঁছানো হয়েছে। 

তেরখাদা উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. তায়জুল ইসলাম বলেন, ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু এবং ত্রুটিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য আমরা দিবারাত্রি পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আশা করি নির্বাচন সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারবো।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচনে আড়ংঘাটা, যোগীপোল ও আটরা গিলাতলা ইউনিয়নের অন্তর্গত  খানজাহান আলী থানার আওতাধীন সব ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দেখছেন। নির্বাচন সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে তাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। ভোট গ্রহণের দিনও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে।

দিঘলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (নি.) মো. বাবুল আক্তার বলেন, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪ টি ইউনিয়নের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার  দায়িত্ব দিঘলিয়া থানার। নির্বাচন সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। কেউ বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি করলে কঠোরভাবে তাকে দমন করা হবে। ইতিমধ্যে এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে।

নূরুজ্জামান/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়