ঘিওরে দুই কূল হারালেন বিএনপির ২ নেতা

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির দুই নেতা অংশ নেন। নির্দেশনা অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার (২১ মে) অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনেও পরাজিত হয়েছেন তারা। দুই কূল হারানো এই দুই নেতার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন অনেকটাই ধ্বংসের মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। 

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও বর্জন করে বিএনপি। ভোট বয়কট এবং বহিষ্কারের তকমা কাঁধে নিয়ে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছিলেন জেলা বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক আব্দুল মান্নান এবং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সদস্য খন্দকার লিয়াকত হোসেন। তফসিল ঘোষণা ও প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত বিএনপির বহিষ্কৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান ও লিয়াকত হোসেন ভোটের মাঠে কোনো অবস্থান তৈরি করতে পারেননি। বিএনপির ভোট বয়কট ও লিফলেট বিতরণের ফলে তারা আরও বেকায়দায় পড়েছিলেন।

ঘিওর উপজেলা সহ-রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইউএনও আমিনুল ইসলাম বলেন, গতকাল মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হয়। ৯ জন প্রার্থীর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে মাহবুবুর রহমান (জনি) ‘শালিক’ প্রতীকে ২১ হাজার ৮০৬ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। খন্দকার লিয়াকত হোসেন পেয়েছেন ৩২১ ভোট। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান ৩ হাজার ৭১৩ ভোট পান। 

উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও তাদের সমর্থিত ভোটাররা ভোট বয়কট করেছেন। তাছাড়া, বিএনপি ঘরানার ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে তেমন উত্তাপ ছিল না। ভোট বয়কটে তাঁরা উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে লিফলেট বিতরণ করে ভোটারদের ভোটদানে বিরত থাকার আহ্বান জানান। নির্বাচনি প্রচারের শুরুতে বিএনপি নেতা প্রার্থীদের সঙ্গে দলীয় নেতা-কর্মীদের অনেকেই অংশ নেন। তবে, দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর প্রার্থীদের কাছ থেকে সরে যান দলীয় নেতাকর্মীরা। প্রচার-প্রচারণায় আর অংশ নেননি। 

মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতার নেতৃত্বে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট বয়কটের লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয় প্রথম ধাপের নির্বাচনের আগে থেকেই। জেলার সাতটি উপজেলার ৬৫ ইউনিয়নেই ভোট বয়কটের আওয়াজ তুলে বিএনপির নেতাকর্মীরা সাধারণ ভোটারদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করেছেন। যার ফলে প্রথম ধাপে সিংগাইর ও হরিরামপুর উপজেলায় বিএনপির বহিষ্কৃত চার নেতার ভরাডুবি হয়েছে। ঘিওর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও চেয়ারম্যান পদে দলের বহিষ্কৃত দুই প্রার্থীর একই পরিণতি হলো। 

ঘিওর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর মানিকুজ্জামান বলেন, ‘ভোট বয়কট দলীয় সিদ্ধান্ত। এই লক্ষ্যে আমরা সাধারণ মানুষের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করেছি, যাতে তারা ভোটদানে বিরত থাকেন। এখানে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত দুই জন চেয়ারম্যান পদে অংশগ্রহণ করলেও তারা অতি নগণ্য ভোট পেয়েছেন।’ 

বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা খন্দকার লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘বিএনপি ভোট বয়কটের কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে। এ ছাড়া, আমার ওপর একজন প্রভাবশালী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা হামলা-মামলার কারণে আমি মূলত নির্বাচনের সাত দিন আগে থেকে মাঠে ছিলাম না।’ 

এ বিষয়ে জানতে অপর প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল ধরেননি। তবে, নির্বাচনের আগে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং আমার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। ভোটারদের অনুরোধে আর ভালোবাসা উপেক্ষা করতে না পেরে আমি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।’ 

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তারা বিশ্বাসঘাতকতার পরিচয় দিয়েছেন। এ কারণে দল থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।’