ঢাকা     সোমবার   ০৮ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২৪ ১৪৩১

সিলেটে বন্যা

বিপৎসীমার ওপরে ৫ নদী, তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট-বাড়িঘর

নূর আহমদ, সিলেট || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪১, ৩০ মে ২০২৪  
বিপৎসীমার ওপরে ৫ নদী, তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট-বাড়িঘর

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি। ছবি: রাইজিংবিডি

রাতভর আতঙ্কে কেটেছে বানভাসি মানুষের। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে সিলেটের ৫টি উপজেলায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। গত রাতে অবনতি ঘটেছে পরিস্থিতি। বানভাসি মানুষকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে। নিলেট তামাবিল মহাসড়কে পানি উঠে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সুরমা—সারিসহ সীমান্তবন্তীর্ নদ নদীর বিভিন্ন স্থানে ডাইক ভেঙ্গে গিয়ে এমন পরিস্থিরি সৃষ্টি হয়েছে। বেশ কয়েকটি পয়েন্টে নদ—নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।

এলাকাবাসী জানান, সীমান্তবর্তী উপজেলা জৈন্তাপুরে সারি গোয়াইন ওয়াপদা বেড়িবাঁধ প্রকল্পের চারটি অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ঢল নেমে জৈন্তাপুর উপজেলা সদরের বাসা—বাড়িতে পানি উঠেছে। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত প্রবল বেগে পানি ঢুকছিলো। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করতে বিজিবিসহ রাজনৈতিক কর্মীরা মাঠে রয়েছেন।

অন্যদিকে, যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে গোয়াইনঘাট। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ আশ্রয় নিচ্ছেন। টানা তিন দিনের বৃষ্টি আর উজান থেকে সারি ও পিয়াইন নদী দিয়ে আসা ঢলে উপজেলার সবকটি ইউনিয়নের ৮০ ভাগ বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে।  উপজেলার পূর্ব জাফলং, পূর্ব আলীরগাঁও, পশ্চিম আলীরগাঁও, মধ্য জাফলং, পশ্চিম জাফলং, সদর, রস্তমপুর, বিছনাকান্দি, তোয়াকুল, লেঙ্গুড়া, ডৌবাড়ী, নন্দীরগাঁও ইউনিয়ন সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। ফতেহপুর ইউনিয়নের আংশিক প্লাবিত হয়েছে। সারী—গোয়াইন, গোয়াইন—সালুটিকর সড়কসহ সবগুলো সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।

এদিকে, বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষ অন্ধকারে রয়েছেন। আরও পানি বাড়লে অতীতের সব রের্কড ভাঙবে—এমনটা মনে করছেন বাসিন্দারা। অনেক জায়গায় পানিবন্দি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব ছিলেন। এছাড়া, ফিসারির মাছ, রোপা আউশ, আউশের বীজতলা এবং সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জৈন্তাপুরে দ্বিতীয় দিনে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলা সদরে পানি ঢুকে পড়েছে।

সারী, বড় নয়াগাং ও রাংপানি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। বুধবার রাতে উপজেলা সদরের বিভিন্ন এলাকায় পানি ঢুকে পড়ে। সারি গোয়াইন ওয়াপদা বেড়িবাঁধ প্রকল্পের চারটি অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। জৈন্তাপুর উপজেলা সদরের বাসা—বাড়িতে পানি উঠেছে। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সিলেট তামিবল সড়কের ওপর পানি প্রবাহিত হচ্ছিলো।

রাত ১২টায় জৈন্তাপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাহেদ আহমদ ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেন ‘কেউ নিজপাট ময়নাহাটি মাঝের টুকে একটি নৌকা পাঠান, কিছু লোক আটকা পড়েছেন।’ এভাবে আটকে পড়াদের উদ্ধারে নানা আকুতি ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। জৈন্তাপুর প্রেসক্লাব সভাপতি নূরুল ইসলাম জানান, প্রেসক্লাবে পানি ঢুকেছে। পুরো এলাকা ঢলের পানিতে ডুবে গেছে। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন নিজপাট, জৈন্তাপুর ও চারিকাটা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা। এদিকে, প্রশাসনের কর্মকর্তারা বন্যা পরিস্থিতির খোঁজ খবর রাখছেন ।

নিজপাট লামাপাড়া, বন্দরহাটি, ময়নাহাটি, জাঙ্গালহাটি, বড়খেল, মেঘলী, তিলকৈপাড়া, ফুলবাড়ী, নয়াবাড়ী, হর্নি, বাইরাখেল, গোয়াবাড়ী, ডিবির হাওর, ঘিলাতৈল, মুক্তাপুর, বিরাইমারা হাওর, খারুবিল, লামনীগ্রাম, কাটাখাল, বাউরভাগ, চাতলারপাড়, ডুলটিরপাড়, এক নম্বর লক্ষ্মীপুর, দুই নম্বর লক্ষ্মীপুর, আমবাড়ী, ঝিঙ্গাবাড়ী, কাঁঠালবাড়ী, নলজুরী, কেন্দ্রী, থুবাং, কালিঞ্জি, লালা, তুমইর, শেওলারটুক, বাওন হাওর প্লাবিত হয়েছে।

উপজেলার সর্ববৃহৎ সারী, বড় নয়াগাং ও রাংপানি নদীর পানি বিপৎসীমার দশমিক ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সারী—গোয়াইন বেড়িবাঁধ প্রকল্পের কর্মকর্তা মো. আলা উদ্দিন বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল নামা অব্যাহত থাকায় পানি জনপদের দিকে প্রবাহিত হয়েছে। এবং পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা রাত দিন মাঠে আছি, আটকে পড়াদের উদ্ধারের ব্যবস্থা করেছি। ত্রাণ কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে।

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত বাড়ার কারণে বাংলাদেশে উপহেলাগুলোতে বন্যা দেখা দিয়েছে। আশা করা যায়—বৃষ্টি কমলে এবং পানি নামলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। তবে সময় লাগবে পরিস্থিতির উন্নতি হতে।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, ১৩টির মধ্যে ১২টি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজ—খবর নিচ্ছি এবং মাঠে আছি।

কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরীন বলেন, উপজেলা সদের পানি ঢুকেছে। সুরমা ডাইক ভেঙে গেছে। এজন্য বন্যার পানি বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। তিনি বন্যার্তরা আশ্রয় কেন্দ্রে আসছেন বলে জানান।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেষ রাসেল হাসান বলেন, আমরা নজর রাখছি বানভাসি মানুষের। উদ্ধারে বিজিবি ও প্রশাসনের লোকজন মাঠে রয়েছে। আশা করা যায় উজানে অর্থাৎ মেঘালয়ে বৃষ্টি থামলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়