ঢাকা     রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৯ ১৪৩১

পেঁয়াজে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ, বিপাকে আমদানিকারকরা

মেহেদী হাসান শিয়াম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১১, ১ জুন ২০২৪   আপডেট: ১৮:২৩, ১ জুন ২০২৪
পেঁয়াজে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ, বিপাকে আমদানিকারকরা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ দিয়ে সাড়ে পাঁচ মাস পর ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। দেশটির সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ আরোপ করায় ভোগপণ্যটি আমদানিতে বিপাকে পড়েছেন আমদানিকারকরা। পেঁয়াজ আমদানি কমে যাওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাজারে পণ্যটির দাম ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছে।

পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকায় প্রায় সাড়ে ৫ মাস আমদানি বন্ধ ছিল। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয় চলতি বছরের ৪ মে। ৪০ শতাংশ শুল্ক থাকায় আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে গত ৯ তারিখ থেকে সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়।

আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, ভারতে বর্তমানে পেঁয়াজের কেজি ১৭ রুপি। ৪০ শতাংশ ভারতীয় শুল্ক ১৯ রুপি, মোকাম থেকে সীমান্তে পেঁয়াজ পরিবহণে খরচ পড়ে প্রায় ৭ রুপি। যা হিসেব করলে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬১ টাকা (এক রুপি সমান ১ টাকা ৪২ পয়সা হিসাবে)। একই সঙ্গে বাংলাদেশে প্রতি কেজি ৬ টাকা গাড়ি ভাড়া যোগ করলে নিত্য প্রয়োজনীয় এই খাদ্যপণ্যটির দাম হয় প্রায় ৬৭ টাকা। রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ থাকায় পেঁয়াজ আমদানি করতে বেশি খরচ হচ্ছে। আরোপ করা রপ্তানি শুল্ক প্রত্যাহার করলে পেঁয়াজ আমদানি বাড়বে। তখন দেশীয় বাজারে দাম কমে আসবে পেঁয়াজের বলে জানিয়েছেন তারা।

আরো পড়ুন:

সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক আসাদুল হক বলেন, ‘ভারত সরকার পেঁয়াজের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক বসিয়েছে। আগে প্রতি কেজি পেঁয়াজে ৬ টাকা শুল্ক দিতে হতো। এখন দিতে হচ্ছে ১৮ টাকা। ফলে আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন।’

অপর আমদানিকারক মো. মিজান বলেন, ‘ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ বহাল রেখেছে। এ কারণে বহু আমদানিকারক পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছেন। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে শুল্কের বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সামনে কোরবানির ঈদ। দেশটির সরকার যদি আরোপিত শুল্ক কমায়, তবে ব্যবসায়ী থেকে ভোক্তা সবাই উপকৃত হবেন।’

আমদানিকারক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অতিরিক্ত শুল্কে ভারত থেকে পেঁয়াজ নিয়ে এলে পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে দাম নাগালের বাইরে চলে যাবে। এতে আমরাও বিপাকে পড়েছি।’

এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাজাগুলোয় গত সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ১০-১৫ টাকা করে বেড়েছে। জেলার সবচেয়ে পেঁয়াজের বড় আড়ত শিবগঞ্জে। সেখানে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। বাজারভেদে পাইকারিতে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা থেকে ৮২ টাকা। পাইকারি থেকে ৩-৫ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে পেঁয়াজ।

শিবগঞ্জের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘গত সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। সবেচেয় ভালো পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৮৫ টাকা করে। সর্বনিম্ন পেঁয়াজের দাম ৮০ টাকা কেজি। পেঁয়াজের দাম চড়া হওয়ায় মানুষ কিনছেন কম। ঈদকে সামনে রেখে পেঁয়াজের দাম আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ 

শহরের পুরাতন বাজারের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি স্বাভাবিক থাকলে পেঁয়াজের দাম অনেক কমবে। দাম বেশি হওয়ায় মানুষ পেঁয়াজ কম কিনছেন।’

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বলেন, ‘সামনেই কোরবানির ঈদ। চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজ অনেক কম আছে। বাজারে যথাসময়ে পেঁয়াজ সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে দাম আরও বেড়ে যাবে।’ 

এদিকে, গত ২৪ দিনে সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে মাত্র ২ হাজার ৮১৩ মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। আরও ১৩ জন আমদানিকারক ২২ হাজার ৬০০ মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি পেয়েছেন।’

উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক সমির ঘোষ বলেন, ‘রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার ৫ দিন পর ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। আগে থেকে পেঁয়াজ আমদানি কিছুটা কমেছে।’

মাসুদ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়