ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

১৩০০ কেজির কালা মানিক, দাম ১৫ লাখ!

অদিত্য রাসেল, সিরাজগঞ্জ  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৫, ২ জুন ২০২৪   আপডেট: ১৪:০৮, ২ জুন ২০২৪
১৩০০ কেজির কালা মানিক, দাম ১৫ লাখ!

বিশাল আকৃতির এত বড় গরু প্রথমে দেখলেই চমকে উঠবে যে কেউ। পা থেকে মাথা অবধি গায়ের রং কুচকুচে কালো হওয়ায় গরুর মালিক নাম রেখেছেন ‘কালা মানিক’। ফ্রিজিয়ান জাতের এ ষাঁড়টি লম্বায় ১০ ফুট, উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, যার ওজন ১৩শ কেজি। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ষাঁড়টির দাম হাঁকানো হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা। ‘কালা মানিক’ ষাঁড়টি কিনলে ফ্রিতে মিলবে ‘কাঞ্চন’ নামের একটি খাসি। ৫ বছর ধরে ষাঁড়টি লালন-পালন করছেন সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার নান্দিনা মধু গ্রামের ড. আলী আজম তালুকদার। 

উপজেলার জামতৈল ইউনিয়নের নান্দিনা মধু গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত আলী আজহার তালুকদারের ছেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী আজম তালুকদারের খামারে বেড়ে উঠছে ষাঁড়টি। 

খামার সূত্রে জানা যায়, শখের বসে নিজ বাড়িতে গরুর খামার করেছেন অধ্যাপক ড. আলী আজম তালুকদার। তার খামারে বর্তমানে মোট ৯টি বিশাল আকৃতির ষাঁড় লালন-পালন করা হচ্ছে। ‘কালা মানিক’ ছাড়াও ৮শ কেজি ওজনের শাহীওয়াল জাতের আকাইসুর ও ৭শ কেজি ওজনের আরও ৭টি ষাঁড় রয়েছে। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কালা মানিক, আকাইসুরসহ মোট ৮টি ষাঁড় বিক্রির জন্য কোরবানির পশুর হাটে তুলবেন তিনি। বিশালাকৃতির এতো ষাঁড় একসঙ্গে দেখার জন্য প্রতিদিন খামারে লোকজন ভিড় জমাচ্ছেন। 

খামারের বিষয়ে প্রতিবেশী হোসেন আলী, জুয়েল রানা ও আব্দুল মণ্ডল বলেন, অধ্যাপক সাহেব খুব যত্ন করে খামারটি তৈরি করেছেন। তিনি ঢাকা থেকে প্রতি সপ্তাহেই গ্রামের বাড়িতে আসেন। খামারে অনেক রাত পর্যন্ত এ ষাঁড়গুলোর পেছনে সময় ব্যয় করেন তিনি। ষাঁড়গুলোকে আদর যত্নের পাশাপাশি খাবারদাবার নিজ হাতে খাওয়াতে থাকেন। তিনি সতর্কতা অবলম্বন করে ষাঁড় গরুগুলো লালনপালন করছেন। 

খামারে সার্বক্ষণিক পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত থাকা রাকিবুল ইসলাম বলেন, অনেক আদর করে কালা মানিককে লালন-পালন করা হয়েছে। কালা মানিককে আদর করলে খুশি হয়। তাকে ভালোবাসলে সেও ভালোবাসে, আর ভালো না বাসলে লাথি-গুঁতা দেয়। আমি মাঝে মাঝে চুমা খাই। কালা মানিক ছাড়াও সবগুলো ষাঁড়গরু খুবই ভালো। সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত আমি এবং আমার পরিবার এই খামার দেখাশোনা করি। 

অধ্যাপক ড. আলী আজম তালুকদার বলেন, শখের বসে ২০১৫ সালে এই খামারটি করেছি। এখানে কোনো প্রকার ওষুধ ছাড়াই আমার নিজস্ব গবেষণা প্রক্রিয়ায় দানাদার খাদ্যগুলো পাউডার ফর্মে এনে এরপর ব্যাকটেরিয়া দিয়ে গাঁজানো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ৬ থেকে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখি। পরে ষাঁড়গুলোকে খেতে দেওয়া হয়। এরসঙ্গে দেওয়া হয় কাঁচা ঘাস এবং সাইলেস। আমার চিন্তাধারা সাশ্রয়ী মূল্যে বাংলাদেশের গবাদিপশুকে খাদ্য দেওয়া। 

তিনি আরও বলেন, এ ষাঁড়টিকে বিক্রির জন্য দাম চাওয়া হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। ব্যবসার জন্য খামার করা হয়নি। যদি কেউ কিনতে চান তাহলে অবশ্যই আলোচনার মাধ্যমে দাম কমানো যাবে। গরুটি কিনলে ফ্রিতে মিলবে ২২ থেকে ২৫ কেজি ওজনের একটি খাসি। 

কামারখন্দ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. ফরহাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, উপজেলার সবচেয়ে বড় ষাঁড় কালা মানিক। প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে গরুর মালিক ষাঁড়টি বড় করেছে। আশা করছি কোরবানির পশুর হাটে ষাঁড়ের মালিক ভালো দামে বিক্রি করতে পারবেন। 

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ওমর ফারুক বলেন, জেলায় এবার কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে সোয়া ছয় লাখ গবাদিপশু। এর মধ্যে ষাঁড় গরু রয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ১১০টি, বলদ গরু ৩৩ হাজার ৬০৫টি, গাভী গরু ১৫ হাজার ৭১৭টি, মহিষ তিন হাজার ৬৮১টি, ছাগল ৩ লাখ ৩৮ হাজার ২৩৫টি ও ভেড়া ৬০ হাজার ৫৮০টি। 

ডা. মো. ওমর ফারুক আরও বলেন, প্রাকৃতিক উপায়ে গবাদিপশু মোটাতাজা করা হচ্ছে। এ কারণে এই জেলার পশুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমরা মাঠ পর্যায়ে খামারিদের সব সময় গরু মোটাতাজাকরণের পরামর্শ দিয়ে আসছি। এবার কোরবানির হাটগুলোতে রোগগ্রস্ত পশু বিক্রি করতে দেওয়া হবে না। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সদস্য নিয়োগ করা হবে। জেলার প্রস্তুতকৃত এসব পশুর বাজার মূল্য প্রায় ২ হাজার ৫শ কোটি টাকা।

/ইমন/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়