ঢাকা     শনিবার   ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২০ ১৪৩১

বগুড়ায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত প্রায় সাড়ে ৭ লাখ পশু

বগুড়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৪, ২ জুন ২০২৪   আপডেট: ১৫:০৮, ২ জুন ২০২৪
বগুড়ায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত প্রায় সাড়ে ৭ লাখ পশু

পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে বগুড়ায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত প্রায় সাড়ে ৭ লাখেরও বেশি পশু। জেলার ৪৮ হাজার ৪৫৩ জন খামারি এসব পশু প্রস্তুত করেছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত ছিল ৭ লাখ ২৬ হাজার ৫৯৭টি। এবার কোরবানি যোগ্য পশু প্রস্তুত রয়েছে ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪১৫টি। যা চাহিদার চেয়ে ২৯ হাজার ১৫৫টি বেশি। কোরবানির জন্য প্রস্তুতকৃত পশুর মধ্যে রয়েছে গরু ২ লাখ ৭০ হাজার ৪১টি, মহিষ ২ হাজার ২৬৬টি। এ ছাড়া ছাগল রয়েছে ৪ লাখ ২২ হাজার ২৫৭টি এবং ভেড়া ৩৯ হাজার ৮৫১টি।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মান্দাইন গ্রামে অবস্থিত ‘সমতা ডেইরি অ্যান্ড এগ্রো ফার্ম’ এর স্বত্বাধিকারী মনজুরে মওলা মিল্টন জানান, গত ২ বছরের বেশি সময় হলো তিনি এই খামার প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর আগে তার বাড়িতে ২০টি গরু পালন করা হতো। সেখান থেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে তার গরুর খামার করার পরিকল্পনা আসে। বর্তমানে তার খামারে বিভিন্ন প্রজাতির ৯৬টি পশু রয়েছে। এর মধ্যে দেশি গরু ৩০টি, হোলস্টেইন ফ্রিজিয়ান ৪০টি এবং শাহীওয়াল গরু ২৬টি। এ ছাড়া রয়েছে কয়েকটি মহিষও। তার খামারে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত দামের গরু রয়েছে। তিনি খামারের গরুগুলোকে ঘাস, ভুট্টা, ভূষি, সাইলেজ, খড়, দানাদার খাবার খাওয়ান।

আরো পড়ুন:

তিনি আরও জানান, দানাদার খাবারের দাম এখন অনেক বেশি। শুধুমাত্র এই খাবারের উপর ভরসা করলে খামার টিকিয়ে রাখা সম্ভব না। এজন্য নিজস্বভাবে ঘাস বা সাইলেজের ব্যবস্থা রাখতে হবে। তাহলে বর্তমান বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে গরু পালন করা সম্ভব হবে।

মিল্টন আরও জানান, এই গরুগুলোর কিছু ঢাকায় বিক্রি হবে। কিছু স্থানীয় হাটে। বেশিরভাগ বিক্রি হবে খামার থেকেই। এই ঈদ উপলক্ষে আশা করছি খামারের ৯৬টি পশুর মধ্যে অন্তত ৬০ থেকে ৬৫টি পশু বিক্রি করা যাবে। যার মূল্য হবে প্রায় ৩ কোটি টাকা।

তিনি আরও জানান, খাবার-দাবারসহ সব কিছুর দাম বেশি হওয়ার কারণে এবার গরুর দামও বেশি। গত বছর যে গরু ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই গরু এবার ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারলে লাভ পাওয়া যাবে। 

খামারটির পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, খামারের একটি গরুতে প্রতি মাসে খরচ পড়ছে ৭ হাজার ৫০০ টাকা। কোরবানি উপলক্ষে এখন পর্যন্ত ৩টি গরু বিক্রি হয়েছে। গতবারের তুলনায় এবার গরুর দাম বেশি হতেই হবে। না হলে আমার লোকসান হয়ে যাবে। কারণ খাবারের দাম অনেক বেশি। ভুট্টা, গম, গমের ভূষি, ধানের কুড়া এগুলোর দাম অনেক বেশি। এ ছাড়া খামার পরিচালনা করতে গিয়েও আমাদের আরও খরচ হয়।

তিনি আরও বলেন, অনেকেই গরু কেনার পর রাখার জায়গা, খাবার এবং পরিচর্যা নিয়ে সমস্যা পড়েন। তবে আমাদের কাছ থেকে কেউ গরু কিনলে আমার খামারেই রাখতে পারবে। আমি এখন যেভাবে খামারে গরু পালন করছি। সেভাবেই বিক্রি হয়ে যাওয়া গরুটিকেও পালন করবো। ক্রেতারা চাইলে আমরা ঈদের আগের দিন তাদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবো।

খামারি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ধান চালের ব্যবসার পাশাপাশি আমি গরুর খামার করেছি। আমার খামারে ৩৫টি কোরবানির গরু প্রস্তুত ছিল। এরমধ্যে দশটি গরু বিক্রি হয়েছে আর ২৫টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। ভারত থেকে গরু না আসলে আশা করি ভালো দাম পাব।

খামারি শাওন বলেন, আমার খামারে একটি ৩৮ মণ ওজনের গরু রয়েছে। যার দাম চাওয়া হচ্ছে ৩৫ লাখ টাকা। গরুটি আমি পাঁচ বছর ধরে পালন করছি। শখের বশে আমি এই গরুটি বড় করেছি। গরুর নাম দিয়েছি বাংলার রাজা।

শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. রেহানা খাতুন বলেন, আমরা সারা বছর খামারিদের কিভাবে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে গবাদি পশু পালন করে হৃষ্টপুষ্ট করা যায়; সেই বিষয়ে আমরা পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দিয়ে আসছি। আমাদের উপজেলার ৬ হাজারের অধিক খামারি ৭২ হাজার ৯৬২টি কোরবানি যোগ্য পশু প্রস্তুত রেখেছে। যেখান থেকে আশা করা যাচ্ছে ৫৭০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হবে। ইতোমধ্যে আমরা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে ১১টি ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম গঠন করেছি। প্রতিটি স্থায়ী/অস্থায়ী হাটে এই টিমটির কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

জেলার অতিরিক্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নাসরিন পারভিন বলেন, কোরবানি উপলক্ষ্যে প্রতিটি উপজেলাতে, বড় হাটগুলোতে আমাদের মেডিক্যাল টিম থাকবে। হাটে হঠাৎ তাপমাত্রা বেড়ে গেলে মেজারমেন্ট নেবে, খাওয়া-দাওয়ার বিষয়টি দেখবে। এ ছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসা যেমন হাটে নিয়ে আসার পর কোনো পশু অসুস্থ হলে চিকিৎসা দেবে। হাটে নিয়ে আসা পশু অসুস্থ কিনা সেটা যাচাই করবে।

এনাম/ফয়সাল

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়