ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

সুপেয় পানির তীব্র সংকটে উপকূলের মানুষ

শাহীন গোলদার, সাতক্ষীরা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১০, ৫ জুন ২০২৪  
সুপেয় পানির তীব্র সংকটে উপকূলের মানুষ

ছবি: সংগৃহীত

খুলনার দাকোপ উপজেলার বানীশান্তা গ্রামের সুরভী বিশ্বাস প্রতিদিন তার পরিবারের সদস্যদের জন্য নিজের বাড়ি থেকে প্রায় অর্ধকিলোমিটার দূরে গিয়ে পুকুর থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করেন। নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম থাকে। সে সময় পঞ্চাশোর্ধ্ব সুরভীকে দিনে কমপক্ষে দুইবার পরিবারের জন্য এভাবে পানি সংগ্রহ করতে হয়। 

একই অবস্থা সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী গ্রামের বাসিন্দাদের। এ গ্রামে আব্দুল আলিম ও গাজী মোশারফ হোসেন বলেন, এক কলস পানির জন্য তাদের ঘণ্টাখানেক প্রচণ্ড গরমে রোদের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। দুই-তিন কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে দিনের অর্ধেক সময় ব্যয় করে এক কলস খাওয়ার পানি সংগ্রহ করেন তারা। শুষ্ক মৌসুমে যখন চারিদিক শুকিয়ে যায়, তখন উপজেলার কয়েকটি গভীর নলকূপের ওপর তাদের ভরসা করতে হয়।

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার দরগাহপুর গ্রামের বাসিন্দা বিপ্লব রহমান, আব্দুস সাত্তার মোড়ল ও আমিনুর ইসলামসহ কয়েকজন জানান, তাদের খাবারের পানিসহ নিত্যপ্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পুকুর শুকিয়ে গেছে। টিউবওয়েলেও পানি উঠছে না। যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা পানির জোগান স্বাভাবিক রাখতে টিউবওয়েলের সঙ্গে মোটর সংযুক্ত করেছেন। অন্যরা তাদের কাছ থেকে কিছুটা পানি নিয়ে প্রয়োজন মেটাচ্ছেন।

তারা আরও জানান, পানির সন্ধানে নারীদের কলস নিয়ে দূরের গভীর নলকূপে গিয়ে লাইন দিতে হচ্ছে। অনেকে আবার নদী-খালের দূষিত পানি পান করে পেটের পীড়াসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন।

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ৪ কোটি মানুষের বসবাস। তাদের সবাইকে বিশুদ্ধ পানির জন্য প্রাকৃতিক উৎস পুকুর ও নদী এবং টিউবওয়েলের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু, সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে পুকুর এবং অন্যান্য জলাধারে লবণাক্ততার পরিমাণ দিন দিন বেড়ে চলেছে। আবার শুষ্ক মৌসুমে এসব জলাধার শুকিয়ে যাচ্ছে। শীত মৌসুম থেকে বর্ষা আসার আগ পর্যন্ত লম্বা সময় তাদের পানি সঙ্কটে পড়তে হচ্ছে।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বৃষ্টির অভাব, বন্যায় এলাকায় লবণাক্ত পানি ঢুকে যাওয়া এবং পুকুর ও জলাধার শুকিয়ে যাওয়ায় নিরাপদ পানির উৎস স্থাপন (পিএসএফ) ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ঠিকভাবে কাজ করছে না। ফলে, পানির সংকট বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অধিকাংশ নলকূপে পানি কম উঠছে বা বেশিরভাগ স্থানে উঠছে না।

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার শ্রীমন্তকাটি গ্রামের মতিয়ার রহমান ও আলিফ রহমান জানান, তাদের বাড়ির টিউবওয়েলে ঠিকমতো পানি উঠছে না। মিনিট দশেক চাপলে সামান্য পানি মিলছে। তাদের পাশের গ্রামেরও একই অবস্থা।

শ্যামনগর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ উপেজেলায় ১ হাজার ৯৪৯টি গভীর, ৪৯১টি অগভীর, ৫০০টি এসএসটি ও ৪৪১টি ভিএসএসটি নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে ৮টি গভীর, ১২৯টি অগভীর, ১৬টি এসএসটি ও ৪৪টি ভিএসএসটি নলকূপ কয়েক বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর শ্যামনগর উপজেলা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, উপকূলীয় এ এলাকার ৪০ শতাংশ মানুষ খাবার পানির সংকটে রয়েছে। সরকারিভাবে এ তথ্য দেওয়া হলেও বাস্তব চিত্র আরও খারাপ বলে দাবি স্থানীয়দের।

সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, উপকূলীয় তিন উপজেলার সুপেয় পানির সঙ্কট নিরসনে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ চলছে। রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং প্রকল্পের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হলে খাবার পানির সংকট দূর হবে। 

/বকুল/রফিক/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়