ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

লক্ষ্মীপুর সমাজসেবা কার্যালয়ের ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ৬ জুন ২০২৪   আপডেট: ১১:৫৩, ৭ জুন ২০২৪
লক্ষ্মীপুর সমাজসেবা কার্যালয়ের ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

লক্ষ্মীপুরে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী ও শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা টিটু চন্দ্র ধরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

শহর সমাজসেবা কার্যালয় সমন্বয় পরিষদের সভাপতি আসাদুজ্জামান চৌধুরী গত ১৮ মার্চ লিখিত অভিযোগ করেন। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালকের কাছে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে তাদের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাৎ, একগুঁয়েমি, স্বেচ্ছাচারিতা, প্রকল্পের টাকা মেরে দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। 

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী ২০১৮ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা টিটু চন্দ্র ধর আছেন ২০২১ সাল থেকে।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমটি সমন্বয় পরিষদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এ প্রশিক্ষণে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন বেকার নারী-পুরুষ।

 

শহর সমাজ সেবা কার্যালয়ের এ প্রশিক্ষণটি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ৬৭০৩৪ প্রতিষ্ঠান কোর্ডে পরিচালিত হয়। ছয় মাস মেয়াদী (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৩ সেশন) প্রশিক্ষণে শহর সমাজসেবার কাগজপত্রে ১০১ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন। তবে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল তালিকায় ১৭০ জনের ফল প্রকাশিত হয়। এদের মধ্যে ৬৯ জন প্রশিক্ষণার্থী স্থানীয় ‘ইমরান আইটি ইন্সটিটিউ ‘ নামে একটি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী।

অভিযোগ রয়েছে, সমন্বয় পরিষদকে না জানিয়ে নিয়মের বাইরে গিয়ে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী ও শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা টিটু চন্দ্র ধর মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে সরকারি এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন জনকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দেন। একই সাথে 

প্রশিক্ষণার্থীদের সরকারি সার্টিফিকেটও প্রদান করেন। এসব প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকাও সরকারি ফান্ডে যোগ হয় না।

অভিযোগ উঠেছে, ‘ইমরান ইন্সটিটিউট’ শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ না দিয়েই সমাজসেবা কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সরকারি সনদ বিক্রি করে। আর সেই বাবদ প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন মোটা অংকের অর্থ। এছাড়া এতিমের নামে বরাদ্দ করা সরকারি টাকা লুটপাটেরও অভিযোগ আনা হয়েছে।

ইমরান ইন্সটিটিউটের স্বত্ত্বাধিকারী ইমরান আল মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নেই। এজন্য সমাজসেবার মাধ্যমে ৬০০ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশনের করে পরীক্ষা দেওয়া হয়েছে। এতে আমাদের শিক্ষার্থীদের সরকারি সনদও দেওয়া হয়েছে। এজন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২৫০০ টাকা করে নেওয়া হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো টাকা নেওয়া হয়নি।’

লক্ষ্মীপুর আইডিয়াল টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. মমিন উল্যাহ বলেন, ‘শুধুমাত্র সমাজসেবার শিক্ষার্থীরাই সমাজসেবার মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ পাবে। অন্যদের এভাবে রেজিস্ট্রেশনের কোনো সুযোগ নেই। এটি কারিগরি নীতিমালা বহির্ভূত।’

অভিযোগকারী শহর সমাজ সেবার সমন্বয় পরিষদের সভাপতি আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা ও জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নিজেদের মনগড়া মতো অফিস পরিচালনা করছেন। নিয়মবহির্ভূতভাবে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তাদের দুর্নীতির বিষয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরে আমি নিজেই অভিযোগ দিয়েছি। আশাকরি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ।’

অভিযোগের বিষয়ে শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা টিটু চন্দ্র ধর বলেন, ‘এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। অভিযোগের বিষয়টিও আমার জানা নেই। যদি কেউ কম্পিউটারে প্রশিক্ষণ গ্রহণ না করে নিজের যোগ্যতা যাচাই করতে চান- সেক্ষেত্রে ৬০০ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে সমাজসেবা থেকে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। সেই পরীক্ষার্থী সরকারি সনদও গ্রহণ করতে পারবেন।’

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম পাটওয়ারী বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা নেই। এ নিয়ে কোনো চিঠিও পাইনি। আপাতত এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয় আমার পক্ষে।’

সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। এ নিয়ে অধিদপ্তরের একজন পরিচালককে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক কাজী নাজিমুল ইসলাম বলেন, ‘লক্ষ্মীপুর সমাজসেবা কার্যালয়ের অনিয়মের বিষয়ে আমাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। হজ্ব শেষে সরেজমিনে তদন্ত করা হবে। বিষয়টি খুবই গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।’

জাহাঙ্গীর/ইমন/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়