নাইক্ষ্যংছড়ি-আলীকদম সীমান্ত দিয়ে আসছে চোরাই গরু
বান্দরবান প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
প্রতি বছর কোরবানির ঈদের আগে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা দিয়ে অবৈধ গরু চোরাচালান বেড়ে যায়। এসব উপজেলার কয়েকটি সীমান্ত ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকাকে পাচারের জন্য নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নেয় গরু চোরাকারবারিরা। এই দুই উপজেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে এবারো মিয়ানমারের গরু প্রবেশ করছে বাংলাদেশে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয়রা বলেন, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দক্ষিণ-পূর্ব দিক সীমান্তে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ। নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের বেশিরভাগ এলাকা দুর্গম হওয়ায় নির্বিঘ্নে চোরাকারবারিরা মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতের গরু ও মহিষ নিয়ে আসছেন। আলীকদম সীমান্তে উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্ক অবস্থান থাকায় সেখানে গরু চোরাচালান অনেকটা কমেছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি ১ নম্বর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. নরুল আবছার ইমন জানান, এই উপজেলার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাম হাতিরছড়া, ভালুখাইল্লা, কালাচাইন্দা, চাকঢালা, জামছড়ি, জারুলিয়াছড়ি, আশারতলী, ফুলতলী, দোছড়ির সীমান্তের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা দিয়ে চোরাই গরু আনেন চোরাকারবারিরা। পরে পার্শ্ববর্তী রামু উপজেলার গর্জনিয়ার গরু বাজারে নিয়ে আসা হয়। সীমান্ত দিয়ে নিয়ে আসা গরুগুলো রামু গর্জনিয়া গরু বাজারের ইজারার রশিদের মাধ্যমে বৈধ করা হয়। সুযোগ বুঝে গভীর রাতে এসব গরু ট্রাকে করে চকরিয়া, কক্সবাজার, মালুমঘাট, ঈদগাহ ও রামুর আড়ত দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। সীমান্তে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে দৈনিক ৩০০-৪০০ (আনুমানিক) চোরাই গরু দেশে প্রবেশ করছে। থাইল্যান্ড থেকে মিয়ানমার হয়ে আনা এসব গরু কিনে আনতে শত কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। কারা এই বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছেন তারও সঠিক তথ্য নেই প্রশাসনের কাছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি চাকঢালা সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা উচিং থোয়াং চাক বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি ও নাইক্ষ্যংছড়ি ১১বিজিবির অধীনে ১৫টি বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট রয়েছে। যার মধ্যে বর্তমানে ৪৭-৪৮ পিলারের মধ্যবর্তী পাহাড়ি এলাকা দিয়ে মিয়ানমার থেকে চোরাই গরু আনা হচ্ছে। শুধু এই সীমান্ত নয়, সীমান্তরক্ষী বাহিনী এক পয়েন্টে কঠোর হলে চোরাকারবারিরা অন্য পয়েন্ট ব্যবহার করে। প্রতিদিন নতুন নতুন রোড় চালু করছে চোরাকারবারিরা। পয়েন্টগুলো দুর্গম এলাকা হওয়ার সুবাধে চোরাকারবারিরা পাহাড়ি পথ বেয়ে গরুগুলো সরাসরি নিয়ে যায় রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের গর্জনিয়া গরু বাজার ও ঈদগা বাজারে।’
গরু চোরাচালান শ্রমিক নুরুল আমিন জানান, রাজনৈতিক দলের পদধারী নেতারাই গরু চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। এসব ব্যক্তিদের প্রতিটি এলাকায় সিন্ডিকেট রয়েছে। গরু পাচারে বাধা এবং প্রশাসনের কাছে কেউ তথ্য দিলে হুমকির মাধ্যমে ভয় দেখিয়ে থাকেন তারা। তাই এসব বিষয়ে কেউ কথা বলতে চান না।
সীমান্ত দিয়ে গরু পাচারের বিষয়ে জানতে চাইলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ‘যেকোনো চোরাকারবারি প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে আছে। ট্রাস্কফোর্স গঠন করে অভিযান চালানো হচ্ছে। বৈধ কোনো কাগজ না থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গরু জব্দ করছে।’
আলীকদম উপজেলার করুকপাতা এলাকার বাসিন্দা ও গরু চোরাচালান শ্রমিক চিংহ্লা ম্রো জানান, করুকপাতা ইউনিয়নের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে গরু নিয়ে এসে পোয়ামোরী, মারান পাড়া, বড় আঘলা, ভেওলা পাড়া, বড় বেটি, ছোট বেটি, মাতামুহুরি নদীর শেষ সীমান্তে বিভিন্ন জায়গায় রাখেন পাচারকারীরা। সুযোগ দেখে গরুগুলো আলীকদমের গরু বাজারে নেওয়া হয়। সেখানে বাজার ইজারার রশিদ সরবরাহ করেন।
আলীকদম উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ কামরুল হোসেন সীমান্ত দিয়ে গরু চোরাচালানের বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, ‘আলীকদম সীমান্ত দিয়ে চোরাই গরু আসে না। আমি যতটুকু জানি আলীকদম সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের গরু চোরাচালান হচ্ছে না। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক আছে।’
আলীকদম করুকপাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ক্রাতপুং ম্রো বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে থাকার কারণে সীমান্তে গরু চোরাচালান অনেকটা কমেছে। তবে কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে চোরাকারবারিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে নতুন নতুন সীমান্ত পথে গরু চোরাচালান করছেন।’
এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাহল আহমেদ নোবেল সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে গণমাধ্যম কর্মী বলার পর তিনি ফোনের সংযোগ বিছিন্ন করে দেন। এরপর একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেনি।
আলীকদম ৫৭ বিজিবির লে. কর্নেল আকিব জাবেদকে মুঠোফোনে একাধিক বার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
চাইমং/ইমন/মাসুদ