ঢাকা     মঙ্গলবার   ০২ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৮ ১৪৩১

বান্দরবানে পাহাড় কেটে সাবাড় করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা

বান্দরবান প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৮, ৬ জুন ২০২৪  
বান্দরবানে পাহাড় কেটে সাবাড় করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা

পাহাড় কেটে চারটি ট্রাকে করে মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে

বান্দরবানের থানচিতে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই উন্নয়নের নামে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি শৈক্যচিং মারমা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সচীন চন্দ্র ত্রিপুরা এসব পাহাড় কাটার সাথে জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ মে থেকে থানচি সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মরিয়মপাড়া ও সাধু যোসেফ পাড়ায় দু’টি এক্সকেভেটর দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। মাটি পরিবহনের জন্য রয়েছে চারটি ট্রাক। ক্ষমতার অপব্যবহার করে পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। এরআগে উপজেলা সদরে পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংস করার অপরাধে নামমাত্র জরিমানা করেছিল প্রশাসন। এই অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পরিবেশ ধ্বংসকারীরা। এ ছাড়া এসব অনিয়ম সম্পর্কে স্থানীয় প্রশাসন জানলেও নীরব ভূমিকা পালন করছেন।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ২০১০ অনুযায়ী পাহাড় কাটা আমলযোগ্য অপরাধ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমতি ছাড়া কোনো সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যক্তি পাহাড় কাটতে বা নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না। যদি কেউ এই আইন অমান্য করে, তবে তাকে অথবা ওই প্রতিষ্ঠানকে দুই বছর কারাদণ্ড অথবা ২ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। পুনরায় একই অপরাধ করলে, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড অথবা ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।

জানা গেছে, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ক্রীড়া পরিষদের বাস্তবায়নে থানচি সদর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের মাটি ভরাট করা হচ্ছে। নির্মাণ কাজ চলছে। এ কাজের ঠিকাদার রাঙামাটির বাসিন্দা লুম্বিনী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী চিরজিদ চাকমা। ৩০ জুনের আগে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার চিরজিদ গত ফেব্রুয়ারিতে মারা যান। এখন তার স্ত্রী পলি চাকমা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন। স্টেডিয়ামের কাজের সাব-ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছেন যুবলীগ নেতা শৈক্যচিং মারমা।

উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি শৈক্যচিং মারমা পাহাড় কাটার সাথে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণে মাটি ভরাটের প্রয়োজন রয়েছে। আশেপাশে ভরাটের জন্য মাটি না পাওয়ায় মালিকের সম্মতিতে পাহাড় কেটে মাটিগুলো ওই স্টেডিয়ামে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া পাহাড় কাটার অনুমতি পেতে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। 

থানচি উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও প্রকাশনা সম্পাদক সচিন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, সাধু যোসেফ পাড়া হতে মরিয়ম পাড়ার রাস্তাটি করার জন্য পাহাড় কাটা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরে অনুমতির জন্য আবেদন করা হয়েছে।

বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, আবেদন করলেও অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত পাহাড় কাটার কোনো বৈধতা নেই। অবৈধ উপায়ে এসব পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর আগেও পাহাড় কাটার অপরাধে সচিন্দ্র ত্রিপুরার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। মামলাটি এখনও বিচারাধীন রয়েছে।

থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চাইমং/ফয়সাল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়