ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

রাজশাহীতে হচ্ছে আরও একটি নদীবন্দর

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৪, ৯ জুন ২০২৪  
রাজশাহীতে হচ্ছে আরও একটি নদীবন্দর

একপাশে ভারত, অন্যপাশে বাংলাদেশ। মাঝে পদ্মা নদী। দেশভাগের আগে এ জলপথ দিয়েই রাজশাহী-মুর্শিদাবাদের মধ্যে আনা-নেওয়া হতো পণ্য। দীর্ঘদিন পর আবার সেই নৌপথ চালু হচ্ছে। ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলক চালু হয়েছে একটি নদীবন্দর। আরেকটি নদীবন্দর চালুর প্রস্তুতি চলছে। তবে, পদ্মার পানি সংকট নিয়ে নদীবন্দর চালুর রাখার ব্যাপারে রয়েছে শঙ্কা। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অচিরেই সমীক্ষা করে এই সীমান্ত নদী খননের কাজ শুরু করা হবে।

স্বাধীনতার পরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সাতটি নৌ-প্রটোকলের ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে এগুলো চালু করতে আর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতদিন পর আবার দুই দেশই নৌরুটগুলো চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে। প্রায় ছয় দশক পর গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ-ভারতের মায়া নৌরুট চালু হয়েছে। প্রথম দিন দুই দেশের মধ্যে কাপড় ও পাথর আনা-নেওয়া হয়।

এখন রাজশাহী মহানগরীর পশ্চিমপ্রান্ত বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক এলাকা দিয়ে ভারতের সঙ্গে আরেকটি নৌবন্দর চালুর প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ)। গত এপ্রিলে এই নৌরুটটি নদীবন্দর হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছে। নদীবন্দর দুটি ব্যবহার করে ভারত থেকে স্বল্প খরচে পাথর, পেঁয়াজ, ফল, ফ্লাইঅ্যাশ, মার্বেলসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি এবং রাজশাহী থেকে কৃষিপণ্য পাঠানোর আশা করা হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদ ও রাজশাহীর ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, রাজশাহীর সঙ্গে ভারতের এ দুটি নৌপথ চালু হলে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের যেমন প্রসার হবে, তেমনি সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‌‌‌‘ভারতের মুর্শিদাবাদ ও মালদার সঙ্গে এ পথে রাজশাহীর যোগাযোগ হলে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। ফলে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। অনেক মানুষের কর্মস্থান সৃষ্টি হবে।’

রাজশাহী শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, ‘মায়া-সুলতানগঞ্জ একটা নদীবন্দর ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। এখন রাজশাহী শহরমুখী একটা নদীবন্দর হওয়ার কথা শুনছি। সেই পোটর্টা যদি হয়, তাহলে আমরা কম খরচে পণ্য আমদানি করতে পারব। এখানে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এটা যদি রূপপুর হয়ে নগরবাড়ি-মোংলা পর্যন্ত চলে যায় তাহলে কর্মসংস্থান আরও বাড়বে।’

পদ্মার পানিসংকট নিয়ে নৌপথ চালু রাখার ব্যাপারে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে। রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে পদ্মায় এখন পানি থাকে না। ২০২৬ সালে ভারতের সঙ্গে ফারাক্কা চুক্তি শেষ হবে। নতুন করে চুক্তি না হলে পানি পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই। তাই নদীবন্দর চালুর আগে পদ্মায় পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করাটাই বড় কাজ। পানি না থাকলে নৌবন্দর চালু করে কোনো লাভ হবে না।’

বিষয়টি আঁচ করা যায় ভারত থেকে সুলতানগঞ্জে আসা এমভি রুদ্রা নামের লাইটার জাহাজটিকে দেখলে। তিন হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার এ জাহাজটি প্রায় একমাস ধরে আটকে আছে সুলতানগঞ্জে। পানির অভাবে ভারতে ফিরতে পারছে না জাহাজটি। কবে পানি বাড়বে সেই অপেক্ষায় বসে আছেন জাহাজের মাস্টার লক্ষণ দরবার। তিনি জানিয়েছেন, মাত্র ১৭ কিলোমিটার এ পথে ভারত থেকে আসার সময় পানি কমের কারণে একস্থানেই অপেক্ষা করতে হয়েছে সাতদিন। তারপর কোনমতে আসাতে পারলেও আর ফিরতে পারছেন না।

বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে চালু হওয়া এই নৌপথের এমন দুর্গতির পরও রাজশাহী শহর দিয়ে আরেকটি নৌপথ চালুর উদ্যোগের বিষয়ে রাজশাহীর সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলছেন, ‘মায়া-সুলতানগঞ্জ নৌপথে পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করা পাঁচটি নৌযানের ক্ষেত্রে যা যা প্রতিবন্ধকতা পাওয়া গেছে সেগুলোর সমাধানে কাজ চলছে। নদী ড্রেজিং করে বন্দর চালু রাখা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুলতানগঞ্জের পর রাজশাহী শহরের হাইটেক পার্ক সংলগ্ন এলাকা দিয়েও আরেকটি নদীবন্দর করতে গেজেট নোটিফিকেশন হয়ে গেছে। নৌরুট নিয়ে ভারত সরকারের আগ্রহ অনেক বেশি। ভারত তাদের বন্দরগুলো প্রস্তুত করে আমাদের জানিয়েছে। এখন পদ্মা নদীটা ক্যাপিটাল ড্রেজিং করে দিলে শুষ্ক মৌসুমে ছোট ছোট হেসেলে ৭০০ মেট্রিক টন পর্যন্ত মালামাল খুবই কম খরচে আনা যাবে। বর্ষায় সেটা দুই হাজার টন পর্যন্ত হবে। নৌরুট চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতি হবে। তাই মেয়র হিসেবে আমার আগ্রহ আছে।’

বিআইডব্লিউটিএর বন্দর ও পরিবহন শাখার পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ নদীবন্দরের প্রয়োজনীয় অবকাঠমো নির্মাণ এখনও হয়নি। বর্তমানে সেটা পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এই বন্দরের ভাটিতে রাজশাহী শহর দিয়ে আরেকটা নদীবন্দর হবে। গত ৩০ এপ্রিল এই নদীবন্দরের গেজেট হয়েছে। বন্দর দুটি চালু থাকলে অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে। তবে, সারাবছর বন্দর দুটি চালু রাখাই চ্যালেঞ্জ। এ জন্য নদীর নাব্যতা ফেরাতে হবে।’

বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং শাখার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পুর) ছাইদুর রহমান বলেন, ‘নদী ড্রেজিং করার আগে সমীক্ষা করতে হবে। সেই কাজটা এখনও হয়নি। বন্দর চালু রাখতে আশা করছি, দ্রুত সমীক্ষার কাজটা শুরু করা যাবে। এটা শেষ হলে বোঝা যাবে কতো কিলোমিটার বিস্তৃত এলাকা কী পরিমাণ ড্রেজিং করতে হবে, কত খরচ হবে। তখন প্রকল্প তৈরি করে সরকারের কাছে অনুমোদন নিতে হবে। এসব করার পরই নদীখননের কাজ করতে হবে।’

কেয়া/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়