ঢাকা     শনিবার   ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২০ ১৪৩১

সুন্দরবনে পর্যটন শিল্প সচল রাখতে মত বিনিময় সভা

নিউজ ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১৩, ১০ জুন ২০২৪   আপডেট: ২০:১৩, ১০ জুন ২০২৪
সুন্দরবনে পর্যটন শিল্প সচল রাখতে মত বিনিময় সভা

বানিশান্তা পর্যটন শিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেডের উদ্যোগে সুন্দরবনের বিশেষ প্রভাব অঞ্চলে পর্যটন শিল্প সচল রাখতে এবং পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন বিষয়ক মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হয়েছে।

শনিবার (৮ জুন) বিকেল ৫টায় দাকোপ উপজেলার বানিশান্তা ইউনিয়নের পশ্চিম ঢাংমারী এলাকায় অবস্থিত পিয়ালী ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড কালচারাল সেন্টারে এ সভার আয়োজন করা হয়।

গত ১ জুন থেকে আগামী ৩ মাসের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধ করে বনবিভাগ। এ সময় সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশ, সাধারণ মানুষের চলাচলসহ নদী ও খালে মাছ ধরাও নিষিদ্ধ করা হয়।

আরো পড়ুন:

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মো. আসাদুজ্জামান, পুলিশ সুপার, ট্যুরিস্ট পুলিশ, খুলনা রিজিয়ন। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাণিসম্পদ বিভাগের প্রাক্তন পরিচালক ডা. সুখেন্দু শেখর গায়েন।

সভায় মুখ্য আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো. মোখলেছুর রহমান। সভায় সভাপতিত্ব করেন বানিশান্তা পর্যটন শিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেডের কামাল খান। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন রিসোর্ট মালিক অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের (রোয়াস) সাধারণ সম্পাদক ইমোনুল ইসলাম ইমন, বানিশান্তা ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দাগণ, বানিশান্তা ইউনিয়নে অবস্থিত রিসোর্টের মালিকগণ।

প্রস্তাবিত বানিশান্তা পর্যটন শিল্প সমবায় সমিতির সদস্য হিমাংশু বাছাড় বলেন, সুন্দরবন সংলগ্ন এই গ্রাম আপনাদের মতে বিশেষ প্রভাব অঞ্চল, অর্থাৎ সুন্দরবনের ভেতর নয়। সুন্দরবনের ভেতরটাকে বলা হয় মূল অঞ্চল। আমরা জীবিকার প্রয়োজনে বনের ভেতরে ঢুকতাম, এই ঢাংমারী খালের এপার থেকে ওপারে গিয়ে চুরি করে কাঠ কাটতাম। কিন্তু গত কয়েক বছর যাবৎ কেউ বনে ঢুকে এই কাজ করে না। রিসোর্ট হবার পরে গ্রামের অধিকাংশ বনজীবী এই সকল রির্সোটগুলোতে নির্মাণের কাজ করছে, ট্রলার চালাচ্ছে, হাতে বাওয়া নৌকা চালাচ্ছে। রিসোর্টগুলো বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের মধ্যে অনেকে ভাতে মারা পড়বে।

তিনি আরও বলেন, বাইরের লোক আমাদের গ্রাম দেখতে আসে এজন্য আমরা খুশি। আমরা গ্রামে যারা এই পর্যটনের সাথে যুক্ত আছি, তারা সবাই মিলে এই সমিতিটা দাঁড় করাচ্ছি। আশা করি আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকবেন।

বানিশান্তা পর্যটন শিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেডের প্রস্তাবিত সভাপতি দীনবন্ধু মিস্ত্রি বলেন, অনেক পর্যটক এসে আমাদের বাড়ির পালা হাঁস-মুরগি কিনে নেয়। এছাড়া রিসোর্ট মালিকগণও আমাদের হাঁস, মুরগি, শাকসবজি কেনেন। জেলেরা মাছ বিক্রি করে রিসোর্টগুলোতে। দাদনদারের কাছ থেকে টাকা ধার করে আগের মতো আমাদের চলতে হয় না। এই রিসোর্টগুলোতে প্রায় ২০০ লোক আমরা কাজ করি। রিসোর্ট বেশি হলে পরিবেশের ক্ষতি হবে বুঝতে পারছি। এ বিষয়ে সরকারের নীতিমালা প্রণয়ন করা দরকার। কিন্তু এই এলাকার পর্যটন বন্ধ করে আমাদের কর্মসংস্থান নষ্ট করা যাবে না।

পশ্চিম ঢাংমারি গ্রামের অধিবাসী মহিতোষ বীর বলেন, ওই যে খালডা দেখতেছেন তার পাশ দিয়ে যে বন, ওইখানে আমরা ৫০০ ফিট কম হলেও রোজ কাঠ কাটতাম, এখন ৫ ফিটও কাটা পড়ে না। একসময় আমরা অনেকে মিলে নদীতে বিষ মিশিয়ে মাছ মেরেছি। গত তিন বছরের মধ্যে আমি বনে ঢুকিনি, নদীতে বিষ দেইনি, এমনকি কেউ দিলেও তা বন বিভাগের কাছে বলে দিয়েছি। গত এক বছর ধরে এই পিয়ালী রিসোর্টে কমপক্ষে ৩০ জন আমরা কাজ করেছি। প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা রোজ। টাকা জমিয়ে আমরা কেউ ঘর বানিয়েছি, গরু কিনেছি, ছাগল কিনেছি। প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো আমাদের মারেই। সরকার তিন মাস সুন্দরবন বন্ধ রাখে। এমন সময় বন্ধ রাখে যে সময় বন্ধ রাখা উচিত না। এই এলাকায় লোকজন আসলে, পর্যটন হলে আমাদের জীবিকা ঠিকঠাক মতো হয়; ছেলেমেয়ে নিয়ে আমরা ভালো থাকতে পারি।

মুখ্য আলোচক মোখলেছুর রহমান তার আলোচনায় মূল অঞ্চলে পর্যটক প্রবেশের ক্ষতিকর দিকসহ সুন্দরবনের বিশেষ প্রভাব অঞ্চলে পর্যটনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। পর্যটন একটি শিল্প, সেই শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে বানিশান্তা পর্যটন শিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেডের গুরুত্ব তুলে ধরে এই বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ইউনিয়নের অগ্রগণ্য অধিবাসীকে অভিনন্দন জানান এবং সকলের উদ্দেশে এই জোনে পর্যটন পরিচালনার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করার পরামর্শ দেন।

প্রধান অতিথি পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এই প্রত্যন্ত সুন্দরবন সংলগ্ন স্থানীয় গ্রামবাসী পর্যটনে এতোটা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে জেনে আমি অভিভূত।

সুন্দরবনে বিশেষ প্রভাব অঞ্চলে পর্যটনের সম্ভাবনা ও উন্নয়নের জন্য কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজমের ওপর জোর দিয়ে বলেন, স্থানীয় বাসিন্দারাই মূলত এই ট্যুরিজমকে টিকিয়ে রাখতে পারেন।

তিনি গ্রামবাসীকে আশ্বস্ত করে আরও বলেন, আমি পরিবেশ অধিদপ্তর, বনবিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে সুন্দরবনের বিশেষ প্রভাব অঞ্চলে পর্যটনের সার্বিক উন্নয়নে আরও ভূমিকা কিভাবে রাখা যায় সে বিষয়ে আলোকপাত করবো।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট পুলিশ সবসময় স্থানীয় বাসিন্দা, পর্যটক ও পর্যটনের সাথে জড়িত সকলের সঙ্গে থাকবেন। সুন্দরবন ভ্রমণ নীতিমালা-২০১৪ কে সামনে রেখে সুন্দরবনের বিশেষ প্রভাব অঞ্চলে পর্যটন রোডম্যাপসহ সুন্দরবন পর্যটন গাইড প্রকাশের বিষয়ে কথা বলবো।

এসময় তিনি পরিবেশ, বন, নদী সব বাঁচিয়ে সফল এক পর্যটনের বিষয়ে দিক নিদের্শনা দেন রিসোর্ট মালিক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের। সবশেষে পিয়ালী ইকো রিসোর্টে গ্রামীণ পর্যটন উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি ‘পর্যটন সম্প্রসারণ স্কুল’ উদ্বোধন করেন।

বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান বলেন, এই ধরনের স্কুল কেবল বাংলাদেশে নয় পৃথিবীতেই প্রথম।
সুন্দরবনের বিশেষ প্রভাব অঞ্চলে পর্যটনের উন্নয়ন বিষয়ক মত বিনিময় সভাটি সঞ্চালনা করেন পিয়ালী ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড কালচারাল সেন্টারের চেয়ারম্যান কবি আঁখি সিদ্দিকা।

/ফয়সাল

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়