ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

২০ জুন থেকে বাজারে মিলবে হাঁড়িভাঙ্গা আম

রংপুর প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৫, ১২ জুন ২০২৪  
২০ জুন থেকে বাজারে মিলবে হাঁড়িভাঙ্গা আম

স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় জিআই পণ্য স্বীকৃত উত্তরের সুস্বাদু হাঁড়িভাঙ্গা আম পাড়া শুরু হবে আগামী ২০ জুন থেকে। এরপরই শুরু হবে হাঁড়িভাঙ্গার আনুষ্ঠানিক বাজারজাত। এ বছর প্রায় দুই হাজার হেক্টর বাগানে হাঁড়িভাঙ্গার ফলন হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে দেড়শ কোটি টাকার ওপরে হাঁড়িভাঙ্গা আম বিক্রি হবে বলে জানিয়েছে চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

এদিকে হাঁড়িভাঙ্গা পাকলে এই আম ৩-৪ দিনের বেশি রাখা যায় না। সংরক্ষণের জন্য নেই কোনো পদ্ধতি। এই আম সংরক্ষণ করার প্রক্রিয়া চাষিরা পেলে স্থানীয় পর্যায়ে চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও পাঠানো সহজ হত, এমনটাই মনে করছেন আমচাষীরা। 

হাঁড়িভাঙ্গা আমের গোঁড়া পত্তনকারী নফল উদ্দিন পাইকারের ছেলে আম চাষি আমজাদ হোসেন পাইকার বলেন, দীর্ঘদিন থেকে শুনে আসছি এই হাঁড়িভাঙ্গা আমের লাইফ লাইন নিয়ে কাজ করছে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। সেটির অগ্রগতির কোন সুফল আমরা দেখছি না। সম্প্রতি এই হাঁড়িভাঙ্গা আম জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে কোনো অধিদপ্তর থেকে এর কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। অনেক চাষী ও ব্যবসায়ী জিআই পণ্যের সুফল সম্পর্কেও অবগত না। হাঁড়িভাঙ্গা আমের প্রসিদ্ধ এলাকা পদাগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা। নেই আবাসিক সুবিধা, ব্যাংকিং ব্যবস্থাসহ আমের স্থায়ী সেডযুক্ত বাজার। 

কৃষি বিভাগ ও আমচাষীরা বলছেন, জুনের শেষ সপ্তাহে বাজারে মিলবে পরিপক্ক হাঁড়িভাঙ্গা আম। এর আগে বাজারে এ আম পাওয়া গেলেও তা অপরিপক্ক হবে। হাঁড়িভাঙ্গার প্রকৃত স্বাদ পেতে জুনের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে। বর্তমানে বাগানগুলোতে আমের পরিচর্যা চলছে। 

জানা যায়, রংপুর অঞ্চলে হাঁড়িভাঙ্গা আমের ফলন বেশি হলেও ফজলি, সাদা ল্যাংড়া, কালা ল্যাংড়া, মিশ্রিভোগ, গোপালভোগ, আম্রপালিসহ আরও নানা প্রজাতির আম উৎপাদন হয়ে আসছে। এসব আমের ভিড়ে এখন সবচেয়ে বেশি চাহিদা হাঁড়িভাঙ্গার। সম্প্রতি চলতি বছরে হাঁড়িভাঙ্গা আম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। 

এদিকে হাঁড়িভাঙ্গা আম সংরক্ষণে গবেষণা জরুরি বলে দাবি করা চাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই আম পরিবহনের জন্য বিশেষ বাস ও ট্রেন সার্ভিস চালু করা দরকার। একই সঙ্গে ন্যায্য দাম নিশ্চিতকরণে প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে। হাঁড়িভাঙ্গা আমের রাজধানী খ্যাত পদাগঞ্জ হাটের রাস্তাঘাটের সংস্কার এবং হাটে আম বিক্রির শেড নির্মাণ, ব্যাংকিং সুবিধা বাড়ানো, পাবলিক টয়লেট স্থাপন ও বৃষ্টির সময় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার জোর দাবি তাদের। 

রংপুর কৃষি বিভাগের দাবি, হাঁড়িভাঙ্গা আম সংরক্ষণে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট গবেষণা করছে। তবে কবে নাগাদ গবেষণার ফলাফল পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত বলতে পারছে না অধিদপ্তরটি। এই আমের লাইফলাইন নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে গবেষণামূলক কাজ করা হচ্ছে। হাঁড়িভাঙ্গা আম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, এ কারণে সংরক্ষণে গবেষণার দাবি এখন আরও বেশি গুরুত্ব বহন করে। 

হাঁড়িভাঙ্গা আমের বৈশিষ্ট্য হলো এটি আঁশবিহীন, মিষ্টি ও সুস্বাদু। এই আমের আঁটিও খুব ছোট। ছাল পাতলা। প্রতিটি আমের ওজন হয় ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম। মৌসুমের শুরুতে হাঁড়িভাঙ্গার চাহিদা বেশি থাকায় এর দাম কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে প্রতি কেজি হাঁড়িভাঙা আকারভেদে ৬০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে পারে। 

বিষমুক্ত ও অতি সুমিষ্ট আশঁহীন হাঁড়িভাঙ্গা আমের চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। কয়েক বছর ধরে ফলন ভালো হওয়ায় বেড়ে চলেছে আম উৎপাদনের পরিধিও। রংপুর সদর, মিঠাপুকুর ও বদরগঞ্জ উপজেলার বিস্তৃত এলাকার ফসলি জমি, বাগানসহ উঁচু-নিচু ও পরিত্যক্ত জমিতে চাষ হচ্ছে এই আম। 

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, চলতি বছর জেলায় ৩ হাজার ৩৫৯ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙ্গার চাষাবাদ করা হয়েছে ১ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে। এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৭১০ মেট্রিক টন। শুরুর দিকে প্রতি কেজি আম ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। তবে আমের আকার ও পরিস্থিতির অনেক সময় দামের হেরফের হয়। 

রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, আগামী ২০ জুন থেকে বাজারে আসবে হাঁড়িভাঙ্গা আম। তাই এই আমের বাজারজাত করতে যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, তা মনিটরিং করা হবে। বিশেষ করে পরিবহনে ব্যবসায়ীদের কোনো হয়রানির শিকার হতে না হয়, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি সরকারি পরিবহন সুবিধার বিষয়টিও দেখা হবে।

আমিরুল/ইমন

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়