ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

নরসিংদীতে ট্রেনে কিল-ঘুষিতে মৃত্যু

দুই কন্যাসন্তান, শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে দিশেহারা স্ত্রী

নরসিংদী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫৪, ১২ জুন ২০২৪   আপডেট: ১৮:০৭, ১২ জুন ২০২৪
দুই কন্যাসন্তান, শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে দিশেহারা স্ত্রী

নিহত ঝুমুর কান্তি বাউল ও তার স্ত্রী বন্যা বাউল

‘পৃথিবীতে যার স্বামী নেই সেই বোঝে কষ্ট কতটুকু। আমার ছোট ফুটফুটে দুই মেয়ে প্রতিদিন মোবাইল হাতে নিয়ে বসে থাকে বাবা কখন ফোন দেবে। কিন্তু তাদের বাবা তো আর ফোন দিবে না, সেটা তারা বুঝতে চায় না। এই শিশুদের মুখের দিকে তাকালে আমার বুক ফেটে যাচ্ছে।’

এমন সব কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন নরসিংদী ট্রেনের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের শিকার নিহত ঝুমুর কান্তি বাউল’র (৪৭) স্ত্রী বন্যা বাউল।
গত বৃহস্পতিবার (৬ জুন) সকালে নরসিংদী রেলস্টেশনে ঢাকা মেইল ট্রেনের ভিতরে জানালার পাশে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে ট্রেনের যাত্রী অভিযুক্ত মঞ্জুর কাদেরের এলোপাতাড়ি লাথি, কিল, ঘুষিতে মারা যান ট্রেনের আরেক যাত্রী ঝুমুর কান্তি বাউল।

বন্যা বাউল আরও বলেন, আমার শাশুড়ি প্রতিদিন সন্ধ্যায় দরজার পাশে গিয়ে বসে থাকে ছেলে আসবে বলে। কিন্তু উনি তো আর আসবেন না। ছেলে হারানোর বেদনায় আমার শাশুড়ি উন্মাদের মতো হয়ে গিয়েছেন। আমার শ্বশুরের বয়স ৭০ এর কাছাকাছি। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তিনি।  প্রতিদিন রাতে ছেলের জন্য হাউমাউ করে কান্না করেন। ছেলের কথা বলে চিৎকার করে ওঠেন। কাঁদতে কাঁদতে কয়েক দফা জ্ঞান হারিয়েছেন। ছেলের ছবি বুকে নিয়ে সারাদিন কাটিয়ে দেন বাবা। ছেলেকে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন আমার শ্বশুর। আমার স্বামী সংসারের বড় ছেলে ছিলেন, পরিবারের সবকিছু একা হাতে সামাল দিতেন। তার এমন মৃত্যু আমি কল্পনাও করতে পারছি না। কোনোভাবে বিশ্বাসই হচ্ছে না, উনি নেই। সামান্য ট্রেনে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে কি কাউকে নির্মমভাবে মেরে ফেলতে পারে কেউ। আমি তেমন পড়াশোনা করিনি। নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। এখন এই পরিবার নিয়ে কিভাবে বাকি জীবন কাটাবো।

ঝুমুর কান্তি বাউল ঢাকায় একটি বায়িং হাউসে সিনিয়র মার্চেন্ডাইজার হিসেবে কাজ করতেন। নরসিংদী থেকে ঢাকায় ট্রেনে যাতায়াত করতেন। চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ট্রেন ধরতে প্রতিদিনের মতো ৬ জুন বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন ভোরে। একপর্যায়ে ট্রেনে জানালার পাশে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে মঞ্জুর কাদেরের সঙ্গে তার হাতাহাতি হয় এবং পরবর্তীতে তাকে আহত অবস্থায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। নিহত ঝুমুর কান্তি বাউল স্ত্রী, দুই মেয়ে, বাবা প্রদ্যুৎ কুমার বাউল ও মা মিনতি বাউলকে নিয়ে নরসিংদীর শহরের বীরপুরে থাকতেন। ঝুমুর কান্তি বাউলের ছোট দুই বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে এবং ছোট এক ভাই রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে নিহতের ভাই রুমুর বাউল থানায় হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন।

নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, এই ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই ও তদন্ত শেষে কোর্টে কাগজপত্র জমা দেওয়া হবে। এই ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজসহ বিভিন্ন আলামত আমরা ইতোমধ্যে সংগ্রহ করে রেখেছি।

আরও পড়ুন: নরসিংদীতে ট্রেন যাত্রীর কিল-ঘুষিতে আরেক যাত্রীর মৃত্যু

হৃদয়/ফয়সাল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়