ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

৩৬ দিন পর লাশ উত্তোলন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

নোয়াখালী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০৪, ১২ জুন ২০২৪  
৩৬ দিন পর লাশ উত্তোলন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান একেএম সিরাজ উল্যাহ

নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় মৃত্যুর ৩৬ দিন পর মো. আলাউদ্দিন (২৫) নামে এক যুবকের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।

বুধবার (১২ জুন) দুপুরের দিকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অমৃত দেবনাথের উপস্থিতিতে উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বাটইয়া গ্রামের একটি কবরস্থান থেকে লাশটি উত্তোলন করা হয়।

এরআগে, গত ১ মে উপজেলার যাদবপুর গ্রামে কবিরহাট উপজেলার নরোত্তমপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান একেএম সিরাজ উল্যাহর বাড়িতে আলাউদ্দিনকে নির্যাতন করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ মে চট্রগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। নিহত আলাউদ্দিন উপজেলার বাটইয়া গ্রামের মহিন উদ্দিনের ছেলে।

এ ঘটনায় গত ৩ জুন নিহতের মা নুরজাহান বেগম বাদি হয়ে নরোত্তমপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান একেএম সিরাজ উল্যাহকে প্রধান আসামি করে নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪নং আমলী আদালতে সিআর মামলা দায়ের করেন। মামলায় চেয়ারম্যানের সহযোগী নিশান (২২) ও কবির’র (৩০) নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ৫/৬ জনকে আসামি করা হয়। পরে আদালতের নির্দেশে কবিরহাট থানার পুলিশ হত্যা মামলা রুজু করেন।

নিহতের বাবা মহিন উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, আমাদের বাড়ির জায়গা নিয়ে সমস্যা হলে নরোত্তমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একেএম সিরাজ উল্যাহর কাছে বিচার প্রার্থনা করি। এরপর তিনি জায়গাটি কিনে নিতে চান। কিন্তু আমরা জায়গাটি বিক্রি করতে অপারগতা প্রকাশ করি। গত ১ মে রাত ৯টার দিকে চেয়ারম্যান সিরাজ আমার ছেলে আলাউদ্দিনকে তার বাড়িতে ডেকে নেয়। এরপর সেখানে দুই দিন আটকে রেখে তার অনুসারী নিশান ও কবিরসহ আরও কয়েকজন আমার ছেলেকে বেধড়ক পিটিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় আলাউদ্দিনকে কবিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তার অবস্থার অবনতি হলে ৫ মে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে চট্রগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। ৬ মে ভোর রাতে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ৭ মে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

তিনি আরও বলেন, আমার ছেলের মৃত্যুর সংবাদ সিরাজ চেয়ারম্যানের বড় ভাই আওয়ামী লীগ নেতা ডা. জাফর উল্যাহকে জানালে তিনি বিষয়টি বাড়িতে এসে সুরাহা করবেন বলে জানান। কিন্তু তিনি চট্রগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করে চিকিৎসার কাগজপত্র না দিয়ে শুধুমাত্র আমার ছেলের মৃত্যুর সনদ দিয়ে রিলিজ করে দেয়। ডা. জাফরের কালক্ষেপণের কারণে আমাদের মামলা করতে বিলম্ব হয়। তিন বছর আগে এই সিরাজ চেয়ারম্যান আমাকেও তুলে নিয়ে মারধর করে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. জাফর উল্যাহ বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমার এলাকার লোকজন আমার কাছে কোনো কাজে আসলে আমি সাহায্য করি।

নরোত্তমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সিরাজ উল্যাহ বলেন, এক সময় তারা জমি বিক্রি করতে চাইলে আমি ক্রয় করিনি। আমি একজন জনপ্রতিনিধি। আমার কাজ হচ্ছে মানুষের জানমাল রক্ষা করা। আমি কোনোভাবেই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। ইনশাআল্লাহ একদিন এটা প্রমাণ হবে।

কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, নিহতের মা আদালতে মামলা দায়ের করলে আদালত থানায় মামলাটি রুজু করার নির্দেশ দেয়। আদালতের আদেশে তিনজনকে আসামি করে থানায় মামলা রের্কড করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তের স্বার্থে কবর থেকে ভিকটিমের মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। মৃতদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সুজন/ফয়সাল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়