ঢাকা     শুক্রবার   ১৮ অক্টোবর ২০২৪ ||  কার্তিক ২ ১৪৩১

ঘাসে ঢাকা মাঠ মনে হলেও আসলে পানিতে ভাসছে ক্ষুদিপানা

শেরপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৫, ১৩ জুন ২০২৪  
ঘাসে ঢাকা মাঠ মনে হলেও আসলে পানিতে ভাসছে ক্ষুদিপানা

দূর থেকে স্কুল মাঠের দিকে তাকালে মনে হবে যেন সবুজ ঘাসের চাদর। কিন্তু আদতে এগুলো ঘাস নয়, পানির উপর চাদরের মতো বিছিয়ে আছে ঘন ক্ষুদিপানা। 

এই দৃশ্য চোখে পড়ে শেরপুর সদর উপজেলার গাজির খামার ইউনিয়নের খাটুয়া কুমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে। চারপাশের যায়গায় তুলনায় মাঠ নিচু হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতে পানি আটকে থাকে। তাতেই বংশবিস্তার করেছে এই কচুরিপানা। এ ছাড়াও বৃষ্টির পানি বের করার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বছরের ৬ মাস মাঠ থাকে পানির নিচে। ফলে শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ এখন স্কুলের বারান্দা।

জানা যায়, বিদ্যালয়টি ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত। এটি এই এলাকার একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা পৌনে ২ শ এবং শিক্ষক রয়েছেন ৬ জন। অ্যাকাডেমি শিক্ষার মান ভালো হলেও খেলার মাঠ এবং অন্যান্য সহশিক্ষা কার্যক্রম চালানোর মতো আনুষাঙ্গিক সুযোগ-সুবিধার অভাবে পিছিয়ে পড়ছে এখানকার শিক্ষার্থীরা। 

শিক্ষার্থীদের দাবি, বর্ষা মৌসুমে অধিকাংশ সময় মাঠে পানি জমে থাকায় তাদের খেলাধুলার ব্যাঘাত হয়। দ্রুত মাটি ভরাটের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবি তাদের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের সামনের ছোট মাঠটি পুরোটাই পানিতে ডুবে আছে। দ্রুত বর্ধনশীল ক্ষুদিপানায় ঢেকে আছে পুরো মাঠ। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের বারান্দায় খেলাধুলা করছে, কয়েকজন খেলছে ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাস্তায়। এমনকি একটি বল নিয়ে ক্লাসরুমে ফুটবল খেলতেও দেখা গেছে কয়েকজনকে।

এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক আক্তারুজ্জামান বলেন, সরকারি চাকরি করি তাই অফিসিয়াল বক্তব্য দিতে পারবো না। তবে, বাচ্চাদের কষ্ট আমার আর ভালো লাগেনা। সামান্য বৃষ্টি হলেই স্কুল মাঠে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারেনা। ক্লাসরুম আর বারান্দায় আবদ্ধ হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এতে কোমলমতি শিশুদের মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। 

তিনি বলেন, ড্রেন খুঁড়ে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করেও পার্শ্ববর্তী জমির মালিকদের বাধার মুখে তিনি তা করতে পারিনি। বিষয়টি নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ৬ জুন শেরপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত আবেদন করেছি।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি লুৎফর রহমান জানান, বিদ্যালয়ের মাঠটি নিচু হ‌ওয়ায় বৃষ্টির সময় আশেপাশের পানি নেমে এসে মাঠে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তাছাড়াও এই এলাকায় আলাদা ঈদগাহ মাঠ না থাকায় স্কুলমাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের বাকি আছে মাত্র ৪ দিন। এর মধ্যে আবারও বৃষ্টি হলে ঈদের জামাত আদায় করতে অন্য কোনো গ্রামে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। তাই বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। তবে স্থায়ীভাবে সমস্যা নিরসনে মাঠে মাটি ভরাটের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানান তিনি।

অভিভাবক মিয়ার আলী জানান, সরকারি জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। কিন্তু আমাদের সন্তানরা প্রথম রাউন্ড থেকেই বাদ পড়ে যায়। পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলায় প্রতিযোগিতা আনতে গেলে নিয়তির অনুশীলন অপরিহার্য। কিন্তু মাঠ ছাড়া কি খেলাধুলা সম্ভব? তার দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই মাঠ সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করুক কর্তৃপক্ষ।

শেরপুর সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আক্রাম হোসেন বলেন, মাঠের পানি দূর করে মাঠ ভরাটের জন্য প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে একটা আবেদন পেয়েছি। ঈদের ছুটি শেষে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তারিকুল/টিপু


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়