ঢাকা     সোমবার   ০১ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

কাজ বুঝে না নিয়েই সাব-স্টেশন ও মিলনায়তন ব্যবহার করছে রামেক

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩৬, ১৩ জুন ২০২৪  
কাজ বুঝে না নিয়েই সাব-স্টেশন ও মিলনায়তন ব্যবহার করছে রামেক

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) ড. কাইছার রহমান চৌধুরী মিলনায়তন

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) ড. কাইছার রহমান চৌধুরী মিলনায়তনের সংস্কার শুরু হয়েছিল তিন বছর আগে। কাজ শেষ হয়েছে দুই বছর আগে। বর্তমানে মিলনায়তনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) ও সাউন্ড সিস্টেম সচল রয়েছে। মঞ্চে হচ্ছে নানা অনুষ্ঠানও। মিলনায়তনের চেয়ারগুলো দর্শকে দর্শকে ভরে যাচ্ছে। অথচ এখন পর্যন্ত ঠিকাদারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ বুঝে নেয়নি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। কাজ বুঝে না নিয়েই গত এক বছর ধরে মিলনায়তনটি ব্যবহার করা হচ্ছে।

একইভাবে কলেজে নতুন করে স্থাপন করা ৫০০ কেভি জেনারেটরসহ এক হাজার কেভির একটি বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশনও প্রায় ১০ মাস ধরে ব্যবহার করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এই কাজটিও আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝে নেওয়া হয়নি। সাব-স্টেশন স্থাপন ও মিলনায়তন সংস্কারের এই কাজ করতে এসে দুজন ঠিকাদার বেকায়দায় পড়েছেন। তাদের কিছু বিল এবং সিকিউরিটি হিসেবে জমা দেওয়া টাকা আটকে আছে। কাজ দুটি বাস্তবায়ন করেছে রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২।

গণপূর্ত বিভাগ থেকে জানা গেছে, প্রায় ১১ কোটি টাকায় মিলনায়তন সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে। সংস্কারের আওতায় সেখানে নতুন চেয়ার স্থাপন করা হয়। বৈদ্যুতিক বাতি, সেন্ট্রাল এসি এবং সাউন্ড সিস্টেমও দেওয়া হয় নতুন করে। প্রায় দুই বছর আগেই এসব কাজ শেষ হয়েছে। মোনালিসা-বাবর অ্যাসোসিয়েট নামের ঢাকার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি করেছে।

বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন স্থাপনের কাজ পেয়েছিল রংপুরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সৈয়দ সাজ্জাদ আলী। কাজের চুক্তিমূল্য ছিল ২ কোটি ৬৭ লাখ ৬৬ হাজার ৬৫৭ টাকা। ২০২০ সালের ২২ এপ্রিলে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল। এরপর কাজ শেষে প্রায় ১০ মাস আগে নেসকো এই সাব-স্টেশনে বিদ্যুতের নতুন সংযোগ দেয়। তখন থেকেই কলেজ কর্তৃপক্ষ এটি ব্যবহার করছে।

বুধবার (১২ জুন) সকালে কলেজে গিয়ে দেখা যায়, মিলনায়তনটি পুরোপুরি প্রস্তুত। সাব-স্টেশনেও একটি ট্রান্সফরমারসহ দুটি সাব-স্টেশন যন্ত্র বসানো হয়েছে। এগুলো চলমান থাকায় কিছুটা শব্দ হচ্ছিল। সাব-স্টেশন কক্ষেই আছে ইংল্যান্ড থেকে আনা হিমনশা ব্র্যান্ডের একটি জেনারেটর।

ঠিকাদারের সাইট প্রকৌশলী রাজু আহমেদ জানান, সাব-স্টেশনটি তারা চালাচ্ছেন। এখান থেকেই পুরো কলেজে বিদ্যুৎ যাচ্ছে। জেনারেটরে ৫০০ লিটার ডিজেলও দেওয়া আছে। কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝে না নেওয়ায় তেল পুড়িয়ে জেনারেটরটি চালানো হচ্ছে না। বিদ্যুৎ চলে গেলে এ জেনারেটর স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্টার্ট হবে। বিদ্যুৎ এলে আবার তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।

 

রাজু আহমেদ বলেন, ‘কাজ শেষ হওয়ার বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তাদের বুঝে নেওয়ার সময় হচ্ছে না। ফলে চুক্তিমূল্যের ১০ শতাংশ হিসেবে জমা রাখা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটির প্রায় ২৬ লাখ টাকা আটকে আছে।’

মিলনায়তন সংস্কার কাজের ঠিকাদারের প্রতিনিধি শাকিল আলম সিদ্দিক বলেন, ‘দুই বছর আগেই সমস্ত কাজ শেষ হয়েছে। গত বছরের জুনে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় মিলনায়তনে অন্তত ৫০টি মতবিনিময় সভা হয়েছে। এখনও প্রায়ই বিভিন্ন অনুষ্ঠান হচ্ছে। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে এটি বুঝে নেয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রায় ৫০ লাখ টাকা বিল তাদের আটকে আছে। পাশাপাশি ১০ শতাংশ হিসেবে সিকিউরিটি আটকে আছে আরও ১ কোটি ১০ লাখ টাকা। কলেজ কর্তৃপক্ষ কাজ বুঝে নেওয়ার সনদ না দেওয়ায় এ টাকা তারা তুলতে পারছেন না। এতদিন পর্যন্ত কলেজ কর্তৃপক্ষ কেন কাজ বুঝে নিচ্ছে না তা তারা জানেন না।’

রামেকের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, ‘নির্মাণ ও মেরামত পর্যবেক্ষণ এবং পরিদর্শন কমিটি কাজ বুঝে নেবে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দুটি অনেক দিন ধরেই কাজ বুঝে নিতে বলছে। কাজ বুঝে নিতে তাদের কাছে স্পেশিফিকেশন বুক চাওয়া হয়েছে। সেটি তারা দিলে কাজ ঠিকঠাক হয়েছে কি না তা দেখে বুঝে নেওয়া হবে।’ 

তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দুটি দাবি করেছে, স্পেশিফিকেশন বুক কলেজ কর্তৃপক্ষকে অনেক আগেই দেওয়া হয়েছে।

এই কাজ তদারকির দায়িত্বে ছিলেন রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আয়াতুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘দুটি কাজই ভালভাবে শেষ হয়েছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পরিদর্শনে এসে প্রশংসা করেছেন। কাজ বুঝে নেওয়ার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই তারা কাজ বুঝে নেবেন।’

কেয়া/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়