ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

‘গাছে কোপ দেওয়ার আগে আমার হাতে কোপ দাও’

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:২৩, ১৩ জুন ২০২৪  
‘গাছে কোপ দেওয়ার আগে আমার হাতে কোপ দাও’

রাজশাহীতে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার নির্মাণের জন্য কাটা হচ্ছিল গাছ। এ সময় এক পরিবেশবাদী বলে ওঠেন, ‘গাছে কোপ দেওয়ার আগে আমার হাতে কোপ দাও’। তার এ কথা শোনার পর শ্রমিকরা গাছ কাটা বন্ধ করে দেন।

নগরীর সোনাদীঘি এলাকায় প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা খরচ করে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার নির্মাণের এ উদ্যোগ নিয়েছে জেলা পরিষদ। এ স্থানটিতে আগে ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভে ইনস্টিটিউট। অনেক আগে থেকেই এখানে ২০-২২টি গাছ আছে। এরমধ্যে কয়েকটি শতবর্ষী। পরিবেশবাদীরা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার নির্মাণকে স্বাগত জানালেও তারা গাছ হত্যার বিপক্ষে।

গাছগুলো কেটে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত জানতে পেরে বেশ কিছুদিন ধরেই এর প্রতিবাদ করে আসছিল রাজশাহী পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদ। ২২ মে তারা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার নির্মাণের নির্ধারিত স্থানে সমাবেশ করেন। এরপর গত ২৫ মে সংগঠনের সদস্যরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবালের সঙ্গে দেখা করেন। গাছ না কাটার দাবিতে স্মারকলিপি দেন। সংগঠনের সদস্যদের দাবি, সেদিন চেয়ারম্যান গাছ রেখেই নকশা বদলে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। সে কথা তিনি রাখেননি।

গত ৬ জুন জেলা পরিষদ পাঁচটি বড় গাছ বিক্রির দরপত্র আহ্বান করে। দরপত্রে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকায় গাছগুলো মেসার্স মেঘনা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান কিনে নেয়। ১১ জুন প্রতিষ্ঠানটিকে গাছ কাটার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এতে সাতদিনের মধ্যে গাছ কেটে নিতে বলা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গাছের ক্রেতা নগরীর সাগরপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. সুমন শ্রমিকদের নিয়ে গাছ কাটা শুরু করেন। দুপুরে খবর পান পরিবেশবাদীরা।

এরপর হ্যান্ডমাইক নিয়ে সেখানে ছুটে যান সংগঠনের এক সদস্য। অন্য সদস্যরাও একে একে জড়ো হতে থাকেন। এরমধ্যেই রাজশাহী পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব নাজমুল হোসেন রাজু ছুটে এসে গাছ কাটতে বারণ করেন। তিনি বলেন, ‘গাছে কোপ দেওয়ার আগে আমার হাতে কোপ দিতে হবে।’ তার এ কথা শোনার পর শ্রমিকরা গাছ কাটা বন্ধ করে দেন।

তবে দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করা ৫টি গাছের মধ্যে একদিনেই ৩টি কেটে ফেলা হয়েছে। অন্য দু’টির মধ্যে একটি কড়ই গাছের ডালপালা ছেঁটে ফেলার পর শেকড় কাটা শুরু হয়েছিল। এই গাছটি এখনও দাঁড়িয়ে আছে। পাকা জাম ধরে থাকা আরেকটি গাছ কাটতে গোড়া থেকে মাটি সরানো হচ্ছিল। পরিবেশবাদীদের বাধায় এ দু’টি গাছ প্রাণে বেঁচেছে।

নাজমুল হোসেন রাজু বলেন, ‘এই গাছগুলোর কোনো কোনোটির বয়স ১০০ বছরের বেশি। অনেক ইতিহাস জড়িয়ে আছে এই গাছগুলোকে ঘিরে। এগুলো কাটা হবে না বলে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সে কথা রাখলেন না। এটা দুঃখজনক। আমরা আর একটি গাছও কাটতে দেব না। কেউ গাছ কাটতে এলে আমরা রুখে দাঁড়াবো।’

প্রতিশ্রুতি ভেঙে গাছ কাটার বিষয়ে কথা বলতে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবালকে বিকেলে ফোন করা হয়। তার সহধর্মিনী ফোন ধরে জানান, চেয়ারম্যান ঘুমাচ্ছেন। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা হাসানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

কেয়া/ফয়সাল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়