ঢাকা     রোববার   ০৭ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২৩ ১৪৩১

আড়াই মাসের শিশুকে হত্যা করেছেন মা, আদালতে স্বীকারোক্তি 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১০, ১৫ জুন ২০২৪   আপডেট: ১২:১৭, ১৫ জুন ২০২৪
আড়াই মাসের শিশুকে হত্যা করেছেন মা, আদালতে স্বীকারোক্তি 

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে গর্ভধারিণী মায়ের বিরুদ্ধে আড়াই মাসের শিশু হত্যার অভিযোগ উঠেছে। হত্যার পর মা শিশুসন্তান ইসরাফিলের লাশ বিলে ফেলে এসেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গর্ভধারিণী মা রেহেনা খাতুনকে অভিযুক্ত করে পুলিশ জানায়, তিনি সন্তানকে ঠিকঠাক বুকের দুধ পান করাতে পারতেন না- এ নিয়ে হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। এ থেকেই সন্তানের লাশ গোপন করে তিনি চুরির নাটক সাজান।

রেহেনারা বাবা মোহন মন্ডল বলেছেন, তার মেয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ। তিনিই সন্তানকে হত্যা করেছেন।

এদিকে শুক্রবার (১৪ জুন) বিকেলে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে লাশ গোপন করার দায় স্বীকার করেছেন রেহেনা খাতুন। 

শুক্রবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কুমারখালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. ইকরামুল হক।

ইকরামুল হক জানান, রেহেনার দুটি সন্তান বুকের দুধ পান করতো। তারা সব সময় ঠিকঠাক দুধ পেত না। এ নিয়ে রেহেনা খাতুন সব সময় মানসিকভাবে অশান্তিতে থাকতেন।

রেহেনাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে এসআই ইকরামুল জানান, ঘটনার দিন (গত সোমবার) রাতে আড়াই মাসের শিশু ইসরাফিল বিছানা থেকে ইটের ওপর পড়ে যায়। এতে তার মাথা থেঁতলে গিয়ে মারা যায়। সে সময় দিশেহারা হয়ে রেহেনা শিশুটিকে প্রথমে একটি পরিত্যক্ত টয়লেটের স্লিপারের ভেতরে রাখেন। পরে বাড়ির পাশে বিলে ফেলে দিয়ে আসেন।

শিশু ইসরাফিলের বাবা কুমারখালী উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের আনন্দনগর গ্রামের কৃষক জিয়াউর রহমান। জিয়া ও রেহেনা দম্পতির তিন কন্যা সন্তানের পর একমাত্র ছেলে সন্তান ইসরাফিলের জন্ম হয়।

নিখোঁজের প্রায় ৪২ ঘণ্টা পরে গত বুধবার বিকেলে উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের আদাবাড়িয়া গ্রামের বুড়িমারা বিল থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় পুলিশ। 

গত সোমবার সকালে রেহেনা খাতুন শিশু ইসরাফিলকে নিয়ে বাবা মোহন মন্ডলের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। রাতে ইসরাফিল, রেহেনা ও তার নানি রেনু খাতুন দরজা বন্ধ না করেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। রাত ১০টা থেকে শিশুটি নিখোঁজ ছিল বলে দাবি করেছিলেন স্বজনেরা। গত মঙ্গলবার সকালে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় শিশু চুরির মামলা করেন শিশুটির বাবা জিয়াউর রহমান।  

এ ব্যাপারে শিশুটির নানা মোহন মন্ডল বলেন, ‘নাতিকে আমার মেয়েই হত্যা করেছে। ওর (রেহেনা) মাথা ঠিক নেই, পাগল। মানসিক রোগী। উপরি (জিনে ধরা) দোষ আছে। প্রায়ই জিনে ধরে। সে জন্য বেহুঁশভাবে ছেলেকে হত্যা করেছে।’ মেয়েকে পুলিশের কাছ থেকে নিয়ে এসে চিকিৎসা করাবেন বলেও জানান মোহন। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রেহেনা খাতুনকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করেন। এরপর পুলিশ শুক্রবার বিকেলে তাকে আদালতে পাঠায়। আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আকিবুল ইসলাম জানান, ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন শিশুটির মা। পরে আরও বিস্তারিত জানানো যাবে।

কাঞ্চন/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়