পর্যটক নেই বান্দরবানে
‘ব্যবসা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় দেখছি না’
বান্দরবান প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রতি বছর ঈদের ছুটিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা বান্দরবানে ভ্রমণে আসেন বিভিন্ন জেলার পর্যটক। এ সময় পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায় জেলার বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে। কিন্তু এবার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের।
বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচিতে যৌথ অভিযান চলমান থাকায় ওইসব পর্যটনকেন্দ্র এড়িয়ে চলার কথা বলেছে প্রশাসন। তবে বান্দরবান সদরে নীলাচল, মেঘলা, গোল্ডেন টেম্পল, নীলগিরি, শৈলপ্রপাত ও প্রান্তিক লেক ভ্রমণে সমস্যা নেই। এ ছাড়া আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় রয়েছে বেশ কয়েকটি পর্যটনকেন্দ্র। এসব পর্যটনকেন্দ্র ভ্রমণে বাধানিষেধ নেই। তারপরও ঈদের ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটক সাড়া না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ে কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সদস্যদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এবং গত ২-৩ এপ্রিল রুমা-থানচির সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি, ব্যাংক ব্যবস্থাপককে অপহরণ, পুলিশ ও আনসারের ১৪টি অস্ত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। কেএনএফ এ সব ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কেএনএফ-এর সন্ত্রাসী তৎপরতা দমন ও লুট হওয়া অস্ত্র, টাকা উদ্ধারসহ সন্ত্রাসীদের নির্মূলে পাহাড়ে যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান চলমান রয়েছে। অভিযানে উভয় পক্ষের হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। ইত্যাদি কারণে বান্দরবানে পর্যটন ব্যবসায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, পাহাড়ের নানা সমস্যার কারণে হোটেল-মোটেল প্রায় শূন্য। গত বছর কিছুটা বুকিং থাকলেও এবার ঈদে তেমন অগ্রীম বুকিং নেই। অর্থ উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মচারীদের ছাঁটাই করেছেন হোটেল মালিকরা। বিপাকে পড়েছেন টুরিস্ট গাইড, চাঁদের গাড়ির চালক, আবাসিক হোটেলের কর্মচারীসহ অনেকেই। তারা পাহাড়ে সন্ত্রাস নির্মূল করে দ্রুত জেলার সব পর্যটনকেন্দ্র ভ্রমণের উপযোগী করার দাবি জানিয়েছেন।
মাহিন্দ্রা (থ্রি হুইলার) চালক মং সা সিং মার্মা বলেন, বান্দরবানে নীলাচল, মেঘলা, নীলগিরি, চিম্বুক পাহাড়, গোল্ডেন টেম্পল, প্রান্তিক লেক ও শৈলপ্রপাত পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটক ভ্রমণে আসতে পারে। এ সব এলাকায় সমস্যা নেই। তারপরও জটিল পরিস্থিতি এড়াতে অনেকেই বান্দরবান আসছেন না।
শহরের পূরবী মার্কেটের সাধারণ ব্যবসায়ী হ্লায়ই রাখাইন বলেন, এবার ঈদে পর্যটক আসবে কিনা জানি না। রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচিতে যৌথ অভিযান চলমান রয়েছে। বান্দরবান সদর, আলীকদম, লামা উপজেলায় ভ্রমণে বাধানিষেধ নেই, তারপরও পর্যটক আসছে না কেন বুঝতে পারছি না। আর কত দিন দোকানে জিনিসপত্র এভাবে সাজিয়ে রাখবো?
হোটেল গার্ডেন সিটির মালিক জাফর আলম বলেন, পাহাড়ের বিভিন্ন সমস্যার কারণে হোটেলে তেমন বুকিং হচ্ছে না। এভাবে চললে ব্যবসা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না।
গ্রীন পিক রিসোর্টের ব্যবস্থাপক শাহ নেওয়াজ নাহিদ বলেন, কেএনএফের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের প্রভাব গোটা জেলায় পড়েছে। এই ঈদেও আমরা আশানুরূপ পর্যটকের সাড়া পাইনি। পর্যটক তো জানে না, যেসব এলাকায় যৌথ অভিযান বা সমস্যা হচ্ছে ওই এলাকা বান্দরবান সদর থেকে ৬০-১০০ কিলোমিটার দূরে। বান্দরবান সদরের আশেপাশে সব পর্যটন কেন্দ্র নিরাপদ।
দুর্গম এলাকার পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটক যেতে না পারলেও জেলা সদর এবং এর আশপাশে ঘুরে বেড়াতে বাধা নেই বলে জানান বান্দরবান ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মঞ্জিল মোরশেদ। তিনি বলেন, পর্যটকদের সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন পাহাড়ে যৌথ বাহিনীর যেসব এলাকায় অভিযান চলমান রয়েছে সেসব এলাকা এড়িয়ে চলার জন্য সকল পর্যটকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে জেলার প্রতিটি স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
তারা//