‘বন্যায় ঘর তলিয়ে গেছে, এখন আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছি’
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন ৭৫ বছর বয়সী অন্তরা ময়ল
৭৫ বছর বয়সী অন্তরা ময়ল। পুত্রবধূ, নাতি ও ছেলেকে নিয়ে বসবাস করছেন সুনামগঞ্জ পৌর শহরের দুপাখালী এলাকায়। কিন্তু পাহাড়ি ঢল আর প্রবল বর্ষণের ফলে অন্তরা ময়লের বসতিঘর তলিয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়েছে। তাই কোমর পানি মাড়িয়ে ছূটছেন আশ্রয়কেন্দ্রের খোঁজে।
আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা হয় অন্তরা ময়লের। তিনি বলেন, বন্যার পানিতে ঘরের সব কিছু তলিয়ে গেছে। দুপাখালী থেকে হেঁটে বৃষ্টিতে ভিজে আশ্রয়কেন্দ্রের খোঁজে বের হয়েছেন। সড়কে পানি আর পানি। রিকশা গাড়ি কিছু চলছে না। বন্যায় ঘর তলিয়ে গেছে। এখন জান বাঁচাতে বৃষ্টিতে ভিজে আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছেন।
তার মতো আশ্রয়কেন্দ্রেরর খোঁজে বের হওয়া আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘বন্যার পানির স্রোতে আমার ঘরের বেড়া ভেঙে গেছে। ঘরের ভিতরে আর থাকার মতো না। পরিবারের সদস্য নিয়ে বিপাকে পড়েছি। আশ্রয়কেন্দ্রে দ্রুত না গেলে বন্যার পানিতে পড়ে বাচ্চাদের বড় বিপদ হতে পারে। তাই বাড়িঘরের সব ফেলে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাচ্ছি।’
গত চার দিন থেকে পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যায় সুনামগঞ্জের ৮টি উপজেলার চার লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বাড়িঘরে পানি উঠে পড়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে তারা। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বন্যা পরিস্থিতি ক্রমে খারাপের দিকে যাচ্ছে। আবহাওয়া দপ্তরের সতর্কীকরণ অনুযায়ী, আগামী কয়েকদিন ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এতে জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।
আজ বুধবার (১৯ জুন) সকাল পর্যন্ত বন্যার কবলে পড়েছে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা, দোয়ারাবাজার, ছাতক, তাহিরপুর, ধর্মপাশা-মধ্যনগর, বিশ্বম্ভরপুর, জগন্নাথপুর উপজেলার অধিকাংশ এলাকা। সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার পানি ঢুকে সুনামগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলায় ৫১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো জানায়, আজ বুধবার (১৯ জুন) সকাল ৯টায় সুনামগঞ্জ পৌরশহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া যাদুকাটা, চলতি, চেলা, রক্তি, বৌলাই, খাসীয়ামার, কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রীও রয়েছে। শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য ও গো-খাদ্যের জন্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে।
মনোয়ার/বকুল