ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

ঈদের ছুটিতে এসে বাড়ি রক্ষার যুদ্ধে নেমেছেন রশিদা 

রংপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৪, ২০ জুন ২০২৪   আপডেট: ১৭:০০, ২০ জুন ২০২৪
ঈদের ছুটিতে এসে বাড়ি রক্ষার যুদ্ধে নেমেছেন রশিদা 

ঈদুল আজহার ছুটিতে ঢাকা থেকে বাড়ি এসেছেন রশিদা বেগম। তিনি পোশাক শ্রমিক। এমনিতেই ছুটি কম মেলে। ভেবেছিলেন বাড়িতে অন্তত ছুটির সময়গুলো আনন্দে কাটাবেন। মিলবে বিশ্রাম। কিন্তু বিধিবাম। বাড়ি ফিরেই নদী ভাঙনের মুখে পড়েছেন তিনি। আরেকটু পানি বাড়লেই রশিদা বেগমের ভিটেমাটি ঘরসহ বিলীন হবে নদীগর্ভে। পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে এসে রশিদা এখন যুদ্ধে নেমেছেন ভিটেমাটি বাঁচানোর। পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তিনিও বালু ভরাট করে বস্তা ফেলছেন নদীর পাড়ে। তাতে যদি অন্তত ভাঙন থেকে রক্ষা মেলে!

গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ আর উজানের ঢলে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। রংপুরের কাউনিয়ার অংশে দক্ষিণ তীর ভাঙতে ভাঙতে তিস্তা চলে এসেছে রশিদার আধাপাকা ঘরের কোণে। 

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) কাউনিয়া উপজেলার তিস্তার তীরবর্তী গদাই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রশিদার মতো প্রায় অর্ধশত বসতবাড়ি নদীর কিনারায় ভাঙনের মুখে রয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে বাড়িগুলো নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে। ফলে অনেকে বাড়ি ভেঙে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনেকে নিজ উদ্যোগে বস্তায় বালু ভরাট করে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। তাদের অভিযোগ, বর্ষা মৌসুমে ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তারা সরকারকে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ নদীর দক্ষিণ তীরে সুরক্ষিত বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। 

এ দিকে গত কয়েকদিনে টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফুলেফেপে উঠেছে তিস্তার পানি। গতকাল বুধবার ভোর থেকে তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও আজ সেটি কিছুটা কমে ১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ও টেপা মধুপুর ইউনিয়নের তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের বেশ কয়েকটি এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। ক্ষতি হয়েছে চরের বাদামসহ নানাবিধ ফসলের। ভেসে গেছে অনেকের পুকুরের মাছ।

কাউনিয়ার বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনছার আলী জানান, গতকাল থেকে তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তা নদীর বুক গতবারের উজানের ঢলে ভারতীয় পলিমাটি দ্বারা ফুলে উঠেছে। যে কারণে পানি বাড়লেই দক্ষিণ তীরের পাড় ভাঙতে থাকে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এলাকার অসংখ্য পরিবার। 

ইউনিয়ন পরিষদ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে সমন্বয় করে জিওব্যাগ ফেলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে বলে জানান তিনি।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, উজানের ঢল আর গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাতের কারণে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ডালিয়া ব্যারেজের সব কটি গেট খুলে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ভাটি অঞ্চলে সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা ভাঙন কবলিত এলাকার কথা শুনেছি। আমরা এই কাজের ঠিকাদারকে জানিয়েছি। তাদের গাফিলতির বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব‍্যবস্থা নেব। আশা করি দ্রুত এটি সমাধান করা যাবে।
 

আমিরুল/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়