সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণ সংকটে বানভাসিরা
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
![সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণ সংকটে বানভাসিরা সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণ সংকটে বানভাসিরা](https://cdn.risingbd.com/media/imgAll/2024June/Untitled-4-copy-2406201553.jpg)
উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে তলিয়ে গেছে সুনামগঞ্জ পৌর এলাকাসহ ১১টি উপজেলা। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে খাদ্যের অভাবে ছেলেমেয়ে নিয়ে মহাসংকটে পড়েছেন পানিবন্দি মানুষজন। বানের জলে বসতঘর-রান্নাঘর ও শৌচাগার ডুবে যাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন বন্যার্ত এলাকার শিশু থেকে শুরু করে পরিবারের বয়স্ক সদস্যরা।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ভারি বৃষ্টিপাত ও উজানের পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতিতে পানিবন্দি হয়েছেন প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষ। যদিও বানভাসিরা বলছেন পুরো জেলায় পানিবন্দির সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। এদিকে ৫৩১টি আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ১৮ হাজার ৪২৯ জন বন্যার্ত মানুষ। কিন্তু বানভাসিদের বেশিরভাগ নিজের বসতঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চান না। তারা নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন।
সরকারি এবং বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে পানিবন্দি অনেক পরিবারের অভিযোগ এখনও কোনো ধরনের ত্রাণসামগ্রী পাননি তারা। বানভাসিদের অভিযোগ গত তিন দিন ধরে তারা বন্যায় আক্রান্ত হলেও জনপ্রতিনিধি-প্রশাসন বা কোনো সামাজিক সংগঠন থেকে তাদের কোনো ধরনের ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়নি। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে কষ্টে রয়েছেন এমন অভিযোগ করেছেন পানিবন্দি অনেক পরিবার।
ক্ষোভ প্রকাশ করে আমির হোসেন নামের বন্যায় আক্রান্ত এক ব্যক্তি বলেন, চার দিন থেকে আমার বাড়িতে পানি। একটা মানুষও আমাদেরকে গিয়ে দেখলো না। অথচ আমার বাড়িতে কোমর সমান পানি। আমরা অন্য একটা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। বন্যার পানি আমার ঘরের বারান্দা ভেঙে নিয়েছে, ঘরের অবস্থাও শেষ। চেয়ারম্যান মেম্বার কেউই দেখলো না।
দোয়ারাবাজার উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের করিমপুর গ্রামের নূর হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, বন্যায় ঘরবাড়ি ভেঙে নিয়ে গেছে। আমার ঘরের ভিতরে বুক সমান পানি, বাচ্চাদের নিয়ে কোনোমতে বাজারের দু’তলা একটি বিল্ডিং-এ উঠেছি। আমার বাড়িঘর এখন পানির নিচে। কিন্তু এমপি-চেয়ারম্যানরা কোনো খোঁজখবর নিলো না। এমনকি মেম্বারও জিজ্ঞাসা করলো না আমরা কেমন আছি না মরে গেছি। আমরা এখন অসহায়ের মতো ঘুরপাক খাচ্ছি।
জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালি ইউনিয়নের গাজীপুর গ্রামের আসমা উল হুসনা (ইমা) রাইজিংবিডিকে বলেন, আজকে প্রায় এক সপ্তাহ হবে আমাদের গ্রামে পানি। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ, সবাই খুব কষ্টের জীবন যাপন করছে। মাটির বাড়িঘরে পানি ঢুকছে, কিন্তু নিরাপদ কোনো স্থান পাওয়া যাচ্ছে না। ঘরে এখন কোনো খাবার নেই, কেউ যদি খাবার দিয়ে সহযোগিতা করতো।
গাজীপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের গ্রামের অনেক মানুষের বাড়িঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যায় গ্রামের গরীব পরিবারগুলো খাদ্যের ভয়াবহ সংকটে। আমি মেম্বারকে কল দিলাম, মেম্বার আমাকে বলে ভাই এই দুর্যোগের মধ্যে কিভাবে আসবো।
জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুশফিকীন নূর রাইজিংবিডিকে বলেন, ত্রাণের সংকট নেই, পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার জন্য সব জায়গায় বলা হয়েছে। যেসব গ্রামে খাবার যায়নি আমরা সেটি দেখবো।
মনোয়ার/ফয়সাল
আরো পড়ুন