ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

হু হু করে পানি বাড়ছে যমুনায়, নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে ঘর-বাড়ি

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫২, ২১ জুন ২০২৪   আপডেট: ১৬:৫০, ২১ জুন ২০২৪
হু হু করে পানি বাড়ছে যমুনায়, নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে ঘর-বাড়ি

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জের যমুনাসহ সবকটি নদীতে পানি বাড়ছে। ফলে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। বিগত ভাঙনের পর যেটুকু সম্বল ছিল, নতুন করে ভাঙন শুরু হওয়ায় সেটুকুও নিশ্চিহ্ন হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। 

এ দিকে, ইতোমধ্যে চর ও নিচু এলাকায় যমুনার পানি প্রবেশ করেছে। দ্রুতগতিতে পানি বাড়ার কারণে যমুনা নদীর চরাঞ্চলে ফসলি জমি তলিয়ে যাচ্ছে। একদিকে ঘর-বাড়ি নদীতে বিলীন হচ্ছে, অন্যদিকে ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তার পাশাপাশি বন্যা আতঙ্ক বিরাজ করছে চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে।   

শুক্রবার (২১ জুন) সকালে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৯৭ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ২০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৯০ মিটার)। 

অপরদিকে, কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৭১ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ২৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৯ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ১৪ দশমিক ৮০ মিটার)।
 
জানা যায়, যমুনা নদীতে আশঙ্কাজনকভাবে পানি বাড়ায় শাহজাদপুরের জালালপুর, খুকনী ও কৈজুরী ইউনিয়নে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। কয়েকদিনের ব্যবধানে দেড় শতাধিক ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভাঙন কবলিতরা।

তারা জানান, শাহজাদপুরের জালালপুর, খুকনী ও কৈজুরী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলা ভয়াবহ ভাঙনে হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি-জমি হারিয়েছেন। অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, রাস্তাঘাট নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। দীর্ঘ আন্দোলন ও প্রতীক্ষার পর সরকার এ অঞ্চলে ভাঙনরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটির কাজ শুরু হলেও ঠিকাদার ও পাউবোর গাফিলতিতে দ্রুত কাজ সম্পন্ন হচ্ছে না। ফলে আবার ভাঙনের কবলেই পড়েছে এসব অঞ্চল। চলতি মৌসুমে জালালপুর ও কৈজুরী ইউনিয়নের শতাধিক বাড়িঘর ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান। নদীতে সব কিছু হারিয়ে বাস্তুহারা ও নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন ভাঙন কবলিত এসব মানুষ।

শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের ভাঙন কবলিত মোতালেব ও আব্দুস সালাম বলেন, জরুরি ভিত্তিতে ভাঙনরোধ করা না হলে আরও শত শত বাড়িঘর ও স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।

একই উপজেলার কৈজুড়ি ইউনিয়নের পাঁচিল গ্রামের কৃষক ফরহাদ হোসেন বলেন, চরের জমিতে চাষাবাদ করে সারা বছর চলতে হয়। প্রত্যেক বছর বন্যায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। এক বিঘা জমিতে তিলের আবাদ করছি। এখন দেখি পানি বাড়ছে। এভাবে পানি বাড়লে ৪-৫ দিনের মধ্যে জমি তলিয়ে যাবে।

কাজীপুর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর এলাকার কৃষক আলতাব হোসেন বলেন, বন্যার পানি দেখলেই ভয় করে। চরের নিচু জমিতে পানি উঠতে শুরু করেছে। দুই বিঘা জমিতে তিলের আবাদ করা হয়েছে। যেভাবে নদীর পানি বাড়ছে তাতে ফসল ঘরে তুলতে পারবো কি না জানি না। এছাড়া পাট নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছি।

সদর উপজেলা কৃষি অফিসার আনোয়ার সাদাত বলেন, এই মুহূর্তে চরের জমিতে তিল ও পাট চাষ করা রয়েছে। কয়েকদিন ধরে যমুনা নদীতে পানি বাড়ছে। আমরা সব সময় খোঁজ খবর রাখছি। কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, শাহজাদপুর উপজেলায় যমুনার ডানতীর সংরক্ষণের জন্য সাড়ে ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ কাজ চলছে। কাজের মেয়াদ যদিও চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। তবে কাজ শেষ না হওয়ায় আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

অদিত্য/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়