লালমনিরহাটে তিস্তায় পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
লালমনিরহাট প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে তিস্তার ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে পানি কমলেও নিম্নাঞ্চলে এখনো পানিবন্দি রয়েছে অন্তত ৩ হাজার পরিবার।
শুক্রবার (২১ জুন) বিকেল ৩টায় লালমনিরহাটের হাতিবান্ধায় অবস্থিত তিস্তার ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১.৬৮ মিটার। যা বিপদসীমার মাত্র ৪৭ সেন্টিমিটার নিচে। তবে তিস্তার রেলসেতু পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ২৯.৩০ মিটার যা বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে।
লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গরীবুল্লাহ পাড়া, বারোঘরিয়া, গোবরধন, সদর উপজেলার কালমাটি এলাকার বাসিন্দাদের বাড়িঘরে পানি থাকায় বন্ধ রয়েছে রান্না, দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। এ ছাড়া পানি বন্দি হয়ে পড়া এসব নিম্নাঞ্চলে তলিয়ে গেছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট, কৃষকের ধান, বাদাম, মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের খেত। গত তিনদিন ধরে পানিবন্দি থাকা এসব মানুষের ভোগান্তি এখন চরমে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার কালমাটির বাসিন্দা শফিয়ার রহমান বলেন, গত চারদিন ধরে নদীর পানি বেড়েছে। আর তিনদিন হলো বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। রান্না করার জন্য চুলা জ্বালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাছাড়া খাবার পানিও সংগ্রহ করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
একই এলাকার বাসিন্দা বদিউজ্জামান বলেন, চরের জমিতে চাষ করা বাদাম এখনো ঘরে তোলা হয়নি। পানির স্থায়িত্ব আর একদিন থাকলে বাদামগুলো পচে যাবে।
সদর উপজেলার পাকারমাথার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, নদী, চর ও গ্রামে পানি থাকায় গরু ছাগল রাস্তায় রেখেছি। নিজেদের খাবারের কষ্ট তো আছেই, গরু-ছাগলের জন্যও খাবার মেলানো যাচ্ছে না।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের আবলার বাজার এলাকার বাসিন্দা রুপন মিয়া বলেন, তিনদিন ধরে বাড়িতে পানি। স্ত্রী সন্তানকে শ্বশুর বাড়িতে রেখে এসেছি। শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটছে।
নদীতে পলি পড়ে নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় অল্প পানিতে বন্যা ও নদী ভাঙনের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বন্যা সমস্যা সমাধানে তিস্তা নদী খনন বা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার রায় বলেন, টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তাসহ লালমনিরহাটের সবক’টি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও তিস্তা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পানি কমে গেলে কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিতে পারে। নদী ভাঙন ঠেকাতে জরুরি আপদকালীন কাজ হিসেবে জিও ব্যাগ ফেলা হবে। পানি আজ সকাল (২১ জুন) থেকে কমতে শুরু করেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, আগামী ২৪ জুন থেকে আবারো তিস্তার পানি বাড়তে পারে।
জামাল/ফয়সাল