ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

লবণের দাম বাড়ায় কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিপদে

বাগেরহাট প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ২২ জুন ২০২৪   আপডেট: ১১:১২, ২২ জুন ২০২৪
লবণের দাম বাড়ায় কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিপদে

বাগেরহাটে কোরবানির পশুর চামড়া ক্রয় করে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। লবণের দাম বৃদ্ধি ও ঈদের পরে মোকাম থেকে চামড়া ক্রয়ের জন্য যোগাযোগ না করায় লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন তারা। অনেকে সংরক্ষণ ব্যয় বাঁচাতে চামড়া খালে ফেলে দিয়েছেন।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করেছেন তারা। বিগত বছরগুলোর তুলনায় কম দামে চামড়া সংগ্রহ করলেও, ব্যয় বেড়েছে লবণে। এবার ৫০ কেজি লবণের বস্তা ৭- ৮শ টাকা অতিরিক্ত দিয়ে ১৪-১৫শ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আর প্রতিটি গরুর চামড়া গড়ে ৪-৬শ টাকায় ক্রয় করা হয়েছে। এই চামড়া পরিবহন ও লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করতে আরও ৩শ টাকা ব্যয় হয়। সব মিলিয়ে ৯শ থেকে সাড়ে ৯শ টাকা ব্যয় হচ্ছে এই একটি চামড়ায়। চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার পরেও ট্যানারি মালিক ও বড় ব্যবসায়ীরা চামড়া ক্রয়ের জন্য এখনও যোগাযোগ করেনি। সময় বৃদ্ধি পেলে প্রক্রিয়াজাত ব্যয়ও বৃদ্ধি পাবে। প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী চামড়া ফেলেও দিয়েছেন। যার ফলে গেল বছরের মতো এবারও লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন প্রান্তিক এই ব্যবসায়ীরা।

বাগেরহাট শহরের চামড়া ব্যবসায়ী লোকমান শিকদার বলেন, অনেক কষ্ট করে এলাকা এলাকা ঘুরে চামড়া সংগ্রহ করি আমরা। এর পরে লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করি। পুরো প্রক্রিয়াটি খুবই জটিল। এরপরেও আমরা দাম পাই না। সবই বড় ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকদের পকেটে চলে যায়। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা করা কঠিন হবে।

মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী দিপু রবি দাস বলেন, একটি চামড়া এলাকা থেকে কিনে, লবণ দেওয়া-সংরক্ষণ করাসহ আমাদের প্রায় ৯শ থেকে এক হাজার টাকা পড়ে যায়। কিন্তু এই চামড়া যখন নাটোরসহ বিভিন্ন ট্যানারিতে নিয়ে যাই, তখন দাম কম বলে। আবার কিছু চামড়া বাদ দেয়। নানা অজুহাত দেখায়। আবার কোরবানি আসলেই লবণের দাম বেড়ে যায়। আগে যে লবণের বস্তা ৬-৭শ টাকায় কিনতাম এখন তা ১৪-১৫শ টাকা। এসব কারণে কয়েক বছর ধরে আমাদের লোকসান হচ্ছে। এবার কি হবে জানি না।

এদিকে মাদরাসা শিক্ষকরা বলছেন, এতিমদের জন্য সংগ্রহ করা চামড়ারও তেমন দাম পাননি। কিছু চামড়া ফেলে দিয়েছেন, আর নামমাত্র ২-৩শ টাকা মূল্যে বিক্রি করেছেন। এতিম শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা স্বাভাবিক রাখতে সঠিক মূল্যে চামড়া বিক্রির নিশ্চয়তা চান শিক্ষকরা।

বাগেরহাট শহরের মাদরাসা-ই-তালিমুল কুরআনের মুহতামিম মাওলানা মুহাম্মাদ উল্লাহ আরেফী বলেন, মাদরাসায় পড়াশুনা করা এতিম শিশুদের খাবার ও পোশাকের একটা বড় অংশ আসে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রয়ের টাকা থেকে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে চামড়ার দাম নাই বললেই চলে। এবার চামড়া বিক্রি করেছি মাত্র ২শ টাকা করে। লবণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনছেন না।

বাগেরহাটের সব থেকে বড় চামড়া ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম খান বলেন, বাগেরহাটে লক্ষাধিক পশু জবাই হয়েছে। কয়েক বছর আগেও ১৫শ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা দরে যে গরুর চামড়া কিনেছি এবার তা ৪শ থেকে ৬শ টাকায় কিনেছি। তারপরও লোকসান হবে, কারণ লবণের দাম বেড়েছে কোরবানির আগের দিন। এখন পর্যন্ত মোকাম থেকে চামড়ার জন্য কেউ যোগাযোগ করেননি। লবণ সিন্ডিকেটের কারণে চামড়া সংরক্ষণ করা কঠিন। বাধ্য হয়ে ছাগল ও গরুর হাজার খানেক চামড়া খালে ফেলে দিয়েছি। আবার নাটোরসহ বড় মোকামে নিয়ে গেলে তারা সিন্ডিকেট করে কম দামে প্রক্রিয়াজাত করা চামড়া কেনে। যার ফলে প্রতিবছর চামড়ার ব্যবসায় লোকসান হচ্ছে। চামড়া শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের পৃষ্টপোষকতা দাবি করেন এই ব্যবসায়ী।

শহিদুল/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়