ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

‘কালকের পানিভাত আজকে গরম করে খাচ্ছি’ 

মনোয়ার চৌধুরী, সুনামগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫১, ২২ জুন ২০২৪   আপডেট: ১৮:৩৪, ২২ জুন ২০২৪
‘কালকের পানিভাত আজকে গরম করে খাচ্ছি’ 

সুমন মিয়া

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সুলতানপুর এলাকার দিনমজুর সুমন মিয়া (৪২)। পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে সৃষ্টি হওয়া বন্যায় তলিয়ে গেছে তার ঘর। বন্যা থেকে রক্ষা পেতে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তিনি উঠেছেন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের আশ্রয়কেন্দ্রে। বানের জল থেকে বাঁচলেও তীব্র খাদ্য সংকটে পড়তে হয়েছে তাকে।

সুমন মিয়া রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‌‘ঘরে বুক পানি। ঘরে থাকা যায় না। ঘরের জিনিসপত্র সব রেখে বাঁচার জন্য বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে (আশ্রয়কেন্দ্র) উঠেছি। তিন দিন থেকে কোনো খাবার নেই। দুই বার খিচুড়ি দিছে তাও খাওয়া যাইনি। খিচুড়ির ডাল-চাল ছিল কাঁচা, আমরা তা ফেলে দিছি। আজ পর্যন্ত আর আমাকে কেউ খাবার দেইনি। এই দেখেন, কালকের পানিভাত আজকে গরম করে খাচ্ছি। এ অবস্থায় চলবো কীভাবে? চেয়ারম্যান-মেম্বার কোনো নেতাই এসে দেখেনি আমরা যে কষ্টে আছি।’ 

শুধু সুমন মিয়া একা নন, তার মতো একই অবস্থা রাখাল বিশ্বাসের। তিনি সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিন ছেলে ও দুই মেয়ে এবং স্ত্রীসহ সাত সদস্যের পরিবার নিয়ে ছোট একটি ঘরে বসবাস করেন। হাওর এলাকায় বসতি হওয়ায় দূরের কোনো আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেননি তিনি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটি খাটের ওপর আরেকটি খাট রেখে তার ওপর টিকে আছেন। গত পাঁচ দিন পানিবন্দি থাকায় খাদ্যের অভাবে ভুগছে পরিবারটি। 

রাখাল বিশ্বাস বলেন, ‘ঈদের দিন থেকে আমার বাড়িতে পানি। আজও সেই পানি নামেনি। পানি কিছু কমেছে, কিন্তু ঘরের ভেতর বা বাইরে কোথাও রান্নার সুযোগ নেই। চুলা এখনো পানির নিচে। বন্যার জন্য কোনো কাজ নেই, তাই খাবার কিনে খেতে পারছি না। কেউ ত্রাণ দেয়নি। বাচ্চাদের নিয়ে কোনো রকমে চিড়া-মুড়ি খেয়ে বেঁচে আছি। সরকারিভাবে বা কেউ নিজ উদ্যেগে খাদ্য না দিলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।’

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক অফিস সূত্রে জানায়, বন্যা কবলিতদের সরকারি ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতিতে সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি ছিলেন। বর্তমানে বন্যার পানি কমে যাওয়ায় পানিবন্দির পরিমাণও কমেছে। জেলার ৫৩১টি আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ১৮ হাজার ৪২৯ জন মানুষ। 

 রাখাল বিশ্বাস

সিলেট বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দীকী বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নজর রয়েছে সিলেটবাসীর প্রতি। শুধু সুনামগঞ্জেই দেওয়া হয়েছে ১১ হাজার মেট্রিক টন চাল। সঙ্গে শিশু খাদ্য, গো-খাদ্য এবং ক্যাশ (টাকা) দেওয়া হয়েছে। আপাতত বৃষ্টি নেই, পানি নেমে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী বন্যা পরবর্তীতেও ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’ 

এদিকে গতকাল শুক্রবার থেকে সুনামগঞ্জের সুরমা, কুশিয়ারা ও  সীমান্ত নদী যাদুকাটা, চলতি, চেলা, খাসিয়ামারা নদীসহ সব নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। আজ শনিবার (২২ জুন) সুনামগঞ্জ পৌরশহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এখনও সুরমা নদীর ছাতক- দিরাই পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। কিছু জায়গা থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেও জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলার নিচু এলাকায় মানুষের বাড়িতে পানি রয়েছে। ফলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। 

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ‘গত তিনদিন থেকে কোনো বৃষ্টি না হওয়ায় জেলার সব নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে আজ শনিবার সকাল ৯টা) পর্যন্ত সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ১০ মিলিমিটার। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি কম হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’  

মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়