ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৪ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২০ ১৪৩১

যেমন আছেন রাসেলস ভাইপারের কামড় খেয়ে বেঁচে ফেরা হেফজুল 

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:১১, ২৩ জুন ২০২৪   আপডেট: ২২:৫০, ২৩ জুন ২০২৪
যেমন আছেন রাসেলস ভাইপারের কামড় খেয়ে বেঁচে ফেরা হেফজুল 

রামেক হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ ডা. আবু হেনার ডানে রাসেলস ভাইপারের কামড়ে সুস্থ হয়ে ওঠা কৃষক হেফজুল

গত ৩১ মে মাঠে ধান কাটছিলেন কৃষক হেফজুল আলী। হঠাৎ একটি রাসেলস ভাইপার দেখে তাকে মারতে যান তিনি। নিচু অবস্থা থাকায় হেফজুলের ডান চোয়ালে কামড় দেয় প্রাণঘাতি সাপটি। এরপর হেফজুল সাপটিকে মেরে সঙ্গে নিয়ে চলে যান রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। তিন দিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) থাকার পরে তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন।

কৃষক হেফজুল ২০ দিন পর রোববার (২৩ জুন) সকাল ১১টার দিকে রামেক হাসপাতালে আসেন চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে। সঙ্গে স্ত্রী তানিয়া আক্তার ও তার দুই ছেলেকেও নিয়ে যান তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া নানা ধরনের পোস্ট দেখে আতঙ্কিত হয়ে স্বামী হেফজুলকে হাসপাতালে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে নিয়ে যান স্ত্রী তানিয়া আক্তার।

আরও পড়ুন: দংশনের পরে রাসেল ভাইপার নিয়ে হাসপাতালে কৃষক

হাসপাতালে কথা হয় তানিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, গত ৩১ মে সকালে তার স্বামী হেফজুল জমিতে ধান কাটতে যান। সেখানে তিনি রাসেলস ভাইপার দেখতে পান।  মারতে গেলে সাপটি তার চোয়ালে কামড় বসায়। একজন বাড়ি গিয়ে তাকে জানান, সাপে কেটে তার স্বামী মারা গেছেন। হাউমাউ করে কেঁদে উঠে তানিয়া পদ্মার চরের দিকে দৌড় দেবেন, ঠিক এমন সময় হাতে মৃত সাপ নিয়েই বাড়ি ফেরেন হেফজুল। তখন তার সঙ্গে তানিয়ার কোন কথা হয়নি। হেফজুল সাপ নিয়েই মোটরসাইকেলে চড়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চলে যান।

তানিয়া জানান, তিনদিন আইসিইউতে থাকার পরে তার স্বামীকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এরপর থেকে তিনি বাড়িতেই আছেন। স্বামীকে কোনো কাজ করতে দেননি। কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে দেখছেন, রাসেলস ভাইপারে কামড় দেওয়া ব্যক্তি সুস্থ হয়ে গেলেও পরে নাকি মারা যান। এতে তিনি আতঙ্কিত হয়ে উঠেছিলেন। তাই স্বামীকে নিয়ে আবার হাসপাতালে এসেছেন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে।

হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, সাপে কাটার দেড় ঘণ্টার মধ্যে হেফজুল হাসপাতালে এসেছিলেন। তাই তার কোনো সমস্যা নেই। তিনি এখন পুরোপুরি সুস্থ। কাজ করতে পারবেন। পরে হেফজুল স্বস্তি নিয়ে তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ফেরেন।

হেফজুলের বাড়ি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার পিরোজপুর গ্রামে। রোববার হেফজুল ও তার স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে তোলা একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন আইসিইউ ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। এতে তিনি লেখেন, ‘হেফজুল সাপটিকে মেরে পলিথিন ব্যাগে করে একজনের মোটরসাইকেল যোগে প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চলে আসেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাৎক্ষণিকভাবে আইসিইউতে অনুরোধ করায় ভর্তির ব্যবস্থা হয়েছিলো। সাপের কামড়সহ আইসিইউতে আাসতে সময় লেগেছিল দেড় ঘণ্টা। দ্রুত সময়ে আইসিইউতে আমরা নিয়ম মাফিক চিকিৎসা দেওয়ায় সে (হেফজুল) সম্পূর্ন সুস্থ হয়ে যান।’

তিনি আরও লেখেন, ‘২০১২ সাল থেকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে প্রতি বছর রাসেলস ভাইপার সাপে কামড়ানো অসংখ্য রোগী চিকিৎসা পেয়ে চলেছেন। সাপে কামড়ানোর ২ ঘন্টার মধ্যে যারা আমাদের এখানে আসতে পেরেছেন, তাদের প্রায় সবাই সম্পূর্ন সুস্থ হয়ে গেছেন। দেরিতে চিকিৎসা পাওয়া রোগীদের প্রায় সবার ডায়ালাইসিস লেগেছে। আক্রান্ত স্থানে পচন ধরেছে।’

তিনি আহ্বান জানান, এই (রাসেলস ভাইপার) সাপে কাটলে ওঝার কাছে না গিয়ে সবাই যেন অতিদ্রুত হাসপাতালে যান। তিনি লেখেন, ‘রাসেলস ভাইপার নিজে আক্রান্ত না হলে সাধারণত কাউকে কামড় দেয় না। আমাদের আইসিইউর সব ভর্তি রোগীরা এ তথ্য দিয়েছেন। সুতরাং, ভয় বা ঘাবড়ানোর কিছু নেই। সাপে কামড়ানোর যে কোনো রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে আনুন। নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের কৃষক ভাইদের গামবুট পায়ে মাঠে কাজ করতে উৎসাহিত করুন।’

জানতে চাইলে ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘কৃষক হেফজুল আলীর চোয়ালে কামড় দিয়েছিল সাপ। এই স্থানটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বিষ দ্রুত সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি দ্রুত হাসপাতালে এসেছিলেন বলে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। তারপরও তিনদিনে এ রোগীকে ৩০ ভায়াল এন্টিভেনম প্রয়োগ করতে হয়েছিল। ২০১২ সাল থেকে এ সাপে কাটা রোগী আমরা পাচ্ছি। একজন রোগীকে সর্বোচ্চ ৯০ ভায়াল পর্যন্ত এন্টিভেনম প্রয়োগ করতে হয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘রাসেলস ভাইপার সাপের জন্য আলাদা কোনো এন্টিভেনম এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। সব বিষধর সাপের জন্য একটা কমন এন্টিভেনম আছে। সেটাই প্রয়োগ করা হয়। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে রাসেলস ভাইপারের জন্য আলাদা এন্টিভেনম তৈরির চেষ্টা চলছে। সেটা হলে হয়ত তখন আর বেশি এন্টিভেনম প্রয়োগের দরকার পড়বে না।’

কেয়া/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়