ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

রাসেল’স ভাইপার ধরার পুরস্কার ঘোষণা প্রত্যাহার

ফরিদপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:১২, ২৩ জুন ২০২৪   আপডেট: ২২:৩৫, ২৩ জুন ২০২৪
রাসেল’স ভাইপার ধরার পুরস্কার ঘোষণা প্রত্যাহার

ছবি- সংগৃহীত

জীবিত হোক বা মৃত, কোনো প্রকার রাসেল’স ভাইপারের জন্য কোনো পুরস্কার নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক। প্রথমে রাসেল ভাইপার সাপ মারতে পারলে এবং পরে জীবিত ধরতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে; এমন ঘোষণার পর বিষয়টি নিয়ে হুলস্থুল কাণ্ড বেধে যায়।

রোববার (২৩ জুন) দুপুরে নিজের ফেসবুক আইডিতে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট লিখে সেটি পাবলিক করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক। এরআগে বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালনের প্রস্তুতি সভার বিবিধ আলোচনায় শামীম হক ফরিদপুরে রাসেল’স ভাইপার সাপ মারতে পারলে তাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন।

এসময় সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আরিফ এই ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করে বলেন, শুধুমাত্র কোতোয়ালি থানার মধ্যে কেউ এই সাপ মারতে পারলে তাকে এই টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। আমাদের সভাপতি সাহেব এই টাকা দিবেন।

এ ঘোষণার পরে বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর ছড়িয়ে পড়ে। পুরস্কার পেতে বিভিন্ন জায়গায় সাপ মারার উৎসাহ ছড়িয়ে পড়ে। সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের দুর্গম চরে শুক্রবার (২১ জুন) সকাল ১১টার দিকে জমিতে ঘাস কাটার সময় একটি রাসেল’স ভাইপার সাপ দেখতে পেয়ে সেটি লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলেন ওই গ্রামের মুরাদ মোল্লা (৪৩) নামে এক জন কৃষক।‌ এরপর তিনি সাপটি পদ্মা পাড়ি দিয়ে সিঅ্যান্ডবি ঘাটে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন আবু ফকিরের অফিসে নিয়ে আসেন। আবু ফকির সাংবাদিকদের জানান, মুরাদ মোল্লাকে সভাপতি ঘোষিত পুরস্কার দেওয়া হবে।

তবে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের এই পুরস্কার ঘোষণার পরে বনবিভাগের পক্ষ থেকে এটি আইনসিদ্ধ নয় বলে সমালোচনা করা হয়। এরপর অবশ্য রাসেল’স ভাইপার সাপ মেরে ফেললে পুরস্কার দেওয়ার পূর্ব ঘোষণা থেকে সরে এসে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয় যে- মেরে ফেললে নয়, জীবিত অবস্থায় রাসেল’স ভাইপার ধরতে পারলে পুরস্কার দেওয়া হবে।

শুক্রবার (২১ জুন) সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ আলী আশরাফ পিয়ার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফরিদপুর সদর উপজেলাধীন কেউ যদি আত্মরক্ষাকারী পোশাক সম্বলিত হয়ে এবং সব ধরনের সাবধানতা অবলম্বনপূর্বক জনস্বার্থে রাসেল'স ভাইপার সাপ জীবিতাবস্থায় ধরতে পারেন, তবে তাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে পুরস্কৃত করা হবে।

এরপর আবার জীবিত সাপ ধরার উৎসাহ সৃষ্টি হয়। পরেরদিন শনিবার (২২ জুন) সকালে পদ্মার চর থেকে একটি জীবিত রাসেল’স ভাইপার সাপ ধরেন রেজাউল খান নামে এক যুবক।

এ ঘটনায় রেজাউল খান জানান, শনিবার বিকেলে সদর উপজেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়নের সাইনবোর্ড এলাকার ফসলি জমিতে চাষ করার সময় রাসেল’স ভাইপার সাপটি দেখতে পান। পরবর্তীতে স্থানীয়দের সহায়তায় সাপটিকে একটি অ্যালুমিনিয়ামের পাতিলে ভরে ফেলেন। এরপর প্লাস্টিকের নেটের আবরণ দিয়ে পাতিলের মুখ বন্ধ করে দেন। দুই দিন আগেও তিনি একটি রাসেল’স ভাইপার সাপ মেরেছেন। স্থানীয় মুরব্বীদের কাছে জেনেছেন, জীবিত রাসেল’স ভাইপার সাপ ধরতে পারলে ফরিদপুরের আওয়ামী লীগের নেতারা পুরস্কার দেবেন। সে জন্যই মূলত জীবিত ধরেছেন।

সাপ বাচ্চা হোক আর পূর্ণবয়স্ক হোক বিষ কিন্তু একই থাকে, সেটা জানেন কিনা এমন প্রশ্ন করলে রেজাউল বলেন, তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে নিয়েছিলাম। সমস্যা হতো না।

এই ব্যাপারে ফরিদপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুস ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এ ধরনের পুরস্কার ঘোষণা করাটাইতো অবৈধ। মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা। ওই কৃষকের উচিত হবে যেখান থেকে সাপটি ধরেছেন ওই স্থানে ছেড়ে দেওয়া।

এদিকে রোববার (২৩ জুন) দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক পুরস্কারের ঘোষণা প্রত্যাহারের বিষয়টি জানিয়ে সকলকে রাসেল’স ভাইপার সাপ মারা বা ধরার চেষ্টা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান।

শামীম হক তার ফেসবুক পোস্টে লিখেন, জীবিত বা মৃত কোনো প্রকার রাসেল’স ভাইপারের জন্য কোনো পুরস্কার নেই। বর্তমানে রাসেল’স ভাইপার একটি আলোচিত বিষয়, পাশাপাশি জনগণের জন্য হুমকি স্বরূপ। এটি অত্যন্ত বিপদজনক বিধায় যেকোনো পুরস্কার বা কৌতূহল বশত এ সাপ নিয়ে অতি উৎসাহী হবেন না। জীবিত বা মৃত কোনো প্রকার রাসেল’স ভাইপারের জন্য কোনো পুরস্কার নেই।

তিনি আরও লেখেন, সাপ দেখলে তা ধরা বা মারার চেষ্টা করবেন না। প্রয়োজনে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে কল করুন অথবা নিকটস্থ বন বিভাগের অফিসকে অবহিত করুন।

আরও পড়ুন: পুরস্কার পেতে জীবন্ত রাসেলস ভাইপার নিয়ে হাজির কৃষক

তামিম/ফয়সাল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়