ঢাকা     রোববার   ০৭ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২৩ ১৪৩১

পর্নোগ্রাফি মামলায় কিশোরগঞ্জ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি গ্রেপ্তার

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৭, ২৪ জুন ২০২৪  
পর্নোগ্রাফি মামলায় কিশোরগঞ্জ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি গ্রেপ্তার

পর্নোগ্রাফি মামলায় কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নাজমুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে

কিশোরগঞ্জে এক তরুণীর করা পর্নোগ্রাফি আইনের মামলায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নাজমুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার রাত দেড়টার দিকে ময়মনসিংহ শহরের গাঙিনাপাড় এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার (২৪ জুন) দুপুরে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল বলেন, পর্নোগ্রাফি মামলা ছাড়াও নাজমুল হোসেনের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ আছে। সবকিছুই প্রকাশ করা হবে এবং এ বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

এর আগে, গতকাল দুপুরে ভুক্তভোগী তরুণী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন, তার ভাই মোশারফ হোসেন মোল্লা বাবুল ও ভাগ্নে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নাজমুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কিশোরগঞ্জের ১ নম্বর আমলি আদালতে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলাটি হয়। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ইন্টারনেটে অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া, ভয় দেখিয়ে ৮ লাখ টাকা আদায়সহ নানাভাবে ভুক্তভোগীকে হয়রানি করার অভিযোগ করা হয়েছে।

মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, ভুক্তভোগী তরুণী একটি কলেজের শিক্ষার্থী। বাড়ি হাওর এলাকায় হওয়ায় কলেজের কাছে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন তিনি। কলেজে যাওয়া-আসার পথে ছাত্রলীগ সভাপতির ভাগ্নে নাজমুল হোসেন প্রায় তাকে প্রেম নিবেদন করতেন। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নাজমুল তার মামা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের ভয় দেখিয়ে কলেজে যাওয়া-আসার পথ বন্ধ করে দেবেন বলে হুমকি দেন। এরপর নাজমুলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ওই তরুণীর। একপর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই তরুণীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন নাজমুল। নাজমুল তার মুঠোফোনে এসবের স্থির চিত্র ও ভিডিও ধারণ করেন।

একপর্যায়ে ওই তরুণী বিষয়টি ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন ও তার বড় ভাই মোশারফ হোসেনকে মুঠোফোনে জানান। তারা তরুণীকে কিশোরগঞ্জ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। নাজমুল হোসেন মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখেন। পরে ভুক্তভোগী ওই তরুণী চাপ সৃষ্টি করলে এক কাজির মাধ্যমে ২০২৩ সালের ৮ জুন নাজমুলের বিয়ের নিবন্ধন করা হয়। বিয়ে নিবন্ধনের কোনো অনুলিপি তরুণীকে দেওয়া হয়নি। পরে তরুণী জানতে পারেন, নাজমুল হোসেন আগেও বিয়ে করেছেন এবং তার দুটি সন্তান আছে। বিষয়টি জানার পর তরুণী নাজমুলকে মৌখিকভাবে তালাক দেন। ক্ষিপ্ত হয়ে নাজমুল তার মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেন এবং দুইবার ওই তরুণীর কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এ ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন ও তার বড় ভাই মোশারফ হোসেনও তরুণীকে ভয়ভীতি দেখান। পরে অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে দুটি দামি মুঠোফোন কেনেন। মোশারফ হোসেনও একই কৌশলে ওই তরুণীর কাছ থেকে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। সবশেষ গত ১৯ এপ্রিল নাজমুল আবারও শারীরিক সম্পর্ক করে ভিডিও ধারণ করেন।

এসব ঘটনায় তাদের সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় ধারণকৃত সব ভিডিও, স্থির চিত্র ও অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয় বলেও মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জানান, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলার প্রধান আসামি নাজমুল হোসেন হীরাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার অপর দুই আসামি কিশোরগঞ্জ ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও তার বড় ভাই মোশারফ হোসেন মোল্লা বাবুলকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব‌্যাহত রয়েছে।

রুমন/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়