ঢাকা     শনিবার   ২৯ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৫ ১৪৩১

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের পলায়ন

দুর্বলতা কোথায় ছিল, তদন্তের পর ব্যবস্থা: অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক

বগুড়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৪১, ২৬ জুন ২০২৪   আপডেট: ১৯:৪৫, ২৬ জুন ২০২৪
দুর্বলতা কোথায় ছিল, তদন্তের পর ব্যবস্থা: অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক

অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান বলেছেন, ‘বগুড়া কারাগার থেকে চার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা সঠিকভাবে তদন্ত করা হবে। কীভাবে তারা সবার নজর ফাঁকি দিয়ে এটা করতে সক্ষম হলো, দুর্বলতা কোথায় ছিল তদন্তের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

বুধবার (২৬ জুন) দুপুরে বগুড়া কারা ফটকে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন তিনি। 

কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর আমি ঢাকা থেকে এসেছি। কারাগার পরিদর্শন করেছি। এটি ১৮৩৩ সালে নির্মিত কারাগার। এই সেলগুলোতে ১৪০ বছর ধরে বন্দিরা থাকেন। আসামিরা রাত ২টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে ঘটনাটি ঘটায়। তারা বিছানার চাদর ব্যবহার করে জেলখানার প্রাচীর টপকাতে সক্ষম হয়। বিষয়টি জানতে পারার পর কারাগার থেকে সব কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। পরবর্তীতে বগুড়ার পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করে। আমাদের জানালে তাদেরকে শনাক্ত করা হয়। প্রাথমিকভাবে কারাগারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।’ 

কারাগার থেকে পালানো সাজাপ্রাপ্তরা হলেন, কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী থানার দিয়াডাঙ্গা গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে নজরুল ইসলাম ওরফে মজনু ওরফে মঞ্জু (৬০), নরসিংদি জেলার মাধবদী থানার ফজরকান্দি গ্রামের মৃত ইসরাফিলের ছেলে আমির হামজা ওরফে আমির হোসেন (৪১), বগুড়া কাহালু উপজেলার উলট্ট গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে জাকারিয়া (৩৪) এবং বগুড়া সদরের কুটিরবাড়ি গ্রামের ইসরাইল শেখের ছেলে ফরিদ শেখ (৩০)। 

পুলিশ সূত্র জানায়, আসামিরা নিজেদের বিছানার চাদর ছিড়ে দড়ি বানায়। এরপর গামছার ভেতর শক্ত কিছু ভরে কৌশলে কারাগারের ছাদ ফুটো করে সেলের বাইরে বের হয়। আগে থেকে বানানো বিছানার চাদরের দড়ি দিয়ে কারাগার ভবন থেকে নিচে নামেন। এরপর ওই চারজন কারাগারের পূর্ব পাশে করতোয়া নদীর ওপর ছোট ব্রিজের নিচ দিয়ে পালিয়ে যান। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টা ৫৬ মিনিটে খবর আসে বগুড়া জেলা কারাগার থেকে চার জন মৃত্যুদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত আসামি পালিয়ে গেছেন। খবর পাওয়া মাত্র বগুড়া সদর থানা ও ফাঁড়ির পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে। শহরের বিভিন্নস্থানে একাধিক অভিযান পরিচালনা করা হয়। এরই এক পর্যায়ে ভোর ৪টা ১০ মিনিটের দিকে সদরবাড়ীর উপ-পরিদর্শক (এসআই) খোরশেদ আলম শহরের চেলোপাড়ায় করতোয়া নদীর পাড়ে চাষি বাজার থেকে চার জনকে গ্রেপ্তার করেন। 

বগুড়া পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, পালিয়ে যাওয়ার পরপরই জেলা কারাগার থেকে আমাদের জানানো হয়। কারাগার থেকে তাদের ছবি দেওয়া হয় আমাদের। আমরা সেই অনুযায়ী রাতেই অভিযান শুরু করি। পরে ভোরের দিকে পালাতকদের চাষীবাজার থেকে ফের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তাদের জেলা ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হলে কারাগারের সুপার এসে তাদের শনাক্ত করেন। 

তিনি আরও বলেন, কারাগার পরিদর্শন করে দেখা গেছে, তারা ৪ জন একই সঙ্গে একটি কক্ষে থাকতেন। তারা পরিকল্পিতভাবে ছাদ ফুটো করে পরিধেয় বস্ত্র এবং বিছানার চাদর জোড়া দিয়ে রশি বানিয়ে দেওয়াল টপকিয়ে করতোয়া নদী পার হয়ে পালিয়ে যান।

বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বগুড়া কারাগারটি অনেক পুরাতন। এটি ব্রিটিশ আমলে তৈরি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ভবনের অনেক স্থান নাজুক। ওই চার আসামিকে এ বছরের ১ জুন এখানে নিয়ে আসা হয়। তাদের একই সেলে রাখা হয়েছিল। তারা আসার পর আমি পরিদর্শনেও গিয়েছিলাম। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ছাদ ফুটো করে তারা চারজন পালিয়ে যান। আজকে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ওরা ছাদের যে অংশে ফুটো করেছে সেখানে কোনো রড ছিল না। আমরা এসব স্থান সংস্কারের কথা বলেছি। এছাড়া আসামিরা যেদিক দিয়ে পালিয়ে গেছে সেখানে নিরাপত্তা চৌঁকি স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি এম ইমরুল কায়েসকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এনাম/মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়