ঢাকা     রোববার   ৩০ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৬ ১৪৩১

চাঁপাইনবাবগঞ্জে লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২১, ২৮ জুন ২০২৪  
চাঁপাইনবাবগঞ্জে লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে তীব্র গরমের মধ্যেই বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শহরে ৫-৬ ঘণ্টা লোডশেডিং হলেও গ্রামাঞ্চলে অবস্থা আরও খারাপ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কম পাওয়ায় লোডশেডিং হচ্ছে। চলমান এই সঙ্কট আরও কিছুদিন স্থায়ী হবে বলে ধারণা তাদের।

লোডশেডিং চলাকালীন দেখা যায়, তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে নারী-পুরুষ এবং শিশুরা বাসা থেকে বের হয়ে গলিতে, বাসার দরজার সামনের রাস্তায় বসে আছে। হাতপাখা দিয়ে বাতাস করে কিছুটা স্বস্তির খোঁজ করছেন। তীব্র গরমে সবচেয়ে ভোগান্তিতে আছেন শ্রমজীবী মানুষ। গরমের তীব্রতা থেকে বাঁচতে তারা আশ্রয় নিচ্ছেন গাছের তলায় কিংবা ছায়াযুক্ত স্থানে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত পাঁচ দিন ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর এলাকায় রাতদিন মিলিয়ে ৫-৬ ঘণ্টা লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। তারপরেও কোনো কোনো এলাকায় আরও বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে। তবে গ্রামাঞ্চলগুলোয় দিনরাত মিলিয়ে ১২-১৬ বারেরও বেশি বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটছে। সেখানে একবার গেলে সহজে বিদ্যুৎ আসতে চায় না। চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে মধ্যরাতে লোডশেডিং হওয়ায় মানুষ ঘুমাতেও পারছেন না। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভিন্ন মন্তব্য করতে দেখা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

এদিকে কয়েকদিন পরেই শুরু হবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। লোডশেডিংয়ের ফলে তাদের পড়ালেখায় বিভ্রাট ঘটছে। এনিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। এছাড়াও বিদ্যুৎ সঙ্কটে জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সময়মতো ক্ষেতে পানি দিতে না পারলে ধানসহ অন্যান্য ফসলের গাছ মারা যাওয়ার শঙ্কা করছেন কৃষকরা। 

নাচোল উপজেলার নেজামপুরের কৃষক শ্রী মাধব রায় বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ পাম্প দিয়ে পানির চাহিদা পূরণ না হওয়ায় ব্যক্তি উদ্যোগে ডিজেলচালিত মেশিন দিয়ে এক দিন পর পর সেচ দেওয়া হচ্ছে। এতে বোরো আবাদে খরচ বাড়ছে। সময়মতো জমিতে পানি দিতে না পারলে ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। 

লোডশেডিংয়ের বিষয়ে মো. এরফান আলী নামে একজন বলেন, রাতের বেলা বিদ্যুৎ চলে গেলে বাচ্চারা গরমে কান্না শুরু করে। বাচ্চাদের সারা শরীর ঘামে ভিজে যায়। এভাবেই কয়েকদিন ধরে চলছে। আমরাতো বিদ্যুতের টাকা বাকি রাখি না, তাও এতো লোডশেডিং কেন। 

সারোয়ার জাহান ফয়সাল নামে এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী বলেন, গরমের মধ্যে ঘন ঘন লোডশেডিং হওয়ায় পড়ালেখা ব্যহত হচ্ছে। শিবগঞ্জের বাসিন্দা তাহেরা বেগম বলেন, গরম বাড়লেই লোডশেডিং শুরু হয়। প্রতিবছরই এই সমস্যা দেখা যায়। ওই এলাকার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা শারমিন নাহার নিজের ব্যবসা নিয়ে চিন্তিত; কারণ লোডশেডিংয়ের ফলে তিনি ঠিকমতো রেফ্রিজারেটর ব্যবহার করতে পারছেন না। 

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার ছানোয়ার হোসেন বলেন, গত কয়েকদিন থেকে লোডশেডিং হওয়ায় খুব বিপাকে পড়েছেন গ্রাহকরা। কারণ চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে অর্ধেকেরও কম। জাতীয় গ্রিড থেকেই আমাদের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। 

কতদিন নাগাদ এই সঙ্কটের নিরসন হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারত থেকে যে বিদ্যুৎ আসতো যান্ত্রিকত্রুটির কারণে সেটা আসা এখন বন্ধ আছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করছে সংশ্লিষ্টরা। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নেসকো-১’র নির্বাহী প্রকৌশলী আলিউল আজিম বলেন, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম বরাদ্দ পাওয়ায় লোডশেডিং হচ্ছে। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী মো. আবির হোসেন বলেন, সময়ের সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদা ও বরাদ্দ কমবেশ হয়। বর্তমানে রোজ চাহিদা ৭৫-৮০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে পাওয়ায় যাচ্ছে ৫৫-৬০ মেগাওয়াট।

মেহেদী/ইমন

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়