আত্মীয়-স্বজনদের এনে প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন পাট কর্মকর্তা

অন্য উপজেলা থেকে ভ্যান ভাড়া করে শ্বশুর, দেবর, চাচাতো ভাইসহ আত্মীয় স্বজনদের এনে প্রশিক্ষণার্থী বানিয়ে ভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ঝরনা আক্তারের বিরুদ্ধে। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা।

বৃহস্পতিবার (২৮ জুন) বিকালে উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়াম হলে এ ঘটনা। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়েছে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ শীর্ষ প্রকল্পের আওতায় বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে দিনব্যাপী ১৫০ জন পাট ও বীজ চাষিকে প্রশিক্ষণের আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন ও ঠাকুরগাঁও বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। ১৫০ জনের প্রশিক্ষণ হলেও উপস্থিত ছিলেন ৯২ জন চাষি। এর মধ্যে প্রায় ৬০ জন পার্শ্ববতী পীরগঞ্জ ও রাণীশংকৈল উপজেলার বাসিন্দা। অথচ প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী প্রশিক্ষণার্থীদের নিজ উপজেলার বাসিন্দা হতে হবে।

বিকালে খবর পেয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা চাষিদের পরিচয় জানার চেষ্টা করলে প্রশিক্ষণ ছেড়ে ভ্যানে চড়ে চলে যায় প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া অন্য উপজেলার চাষিরা। ফাঁকা হয়ে যায় অডিটরিয়াম হল। ঘটনা জানাজানি হলে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন এবং জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তাকে জানানো হয়।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা বড়বাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকার পরিচয় দিয়ে প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছিলেন পীরগঞ্জের কয়েকজন চাষি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি সকলেই অপরিচিত। জিজ্ঞাসা করলে তারা জানান পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ঝরনা আকতার তাদের ভ্যান ভাড়া করে নিয়ে এসেছেন। সকলেই কর্মকর্তার আত্মীয়-স্বজন হবেন। উনার শ্বশুরও ছিলেন। আমাকে দেখে দ্রুত চলে গেছেন।’

পাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বী রুবেল বলেন, ‘আমাকে ফোন দিয়ে পাট কর্মকর্তা দুজন চাষিকে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠাতে বলেছিলেন। ১৫০ জন প্রশিক্ষণার্থী হলে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে কমপক্ষে ১৫ জনের সুযোগ পাওয়ার কথা। শুনেছি আমার ওই দুজন চাষি ফেরত এসেছেন। প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পারেনি, অনারিয়ামও পাননি।’

বিকাল ৪টার পর উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, একপাশে বসে আছেন পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ঝরনা আকতার। অন্যপাশে ঠাকুরগাঁও জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ওয়াসিম কুমার মালাকার মাস্টাররোল দেখে চাষিদের ৫০০ টাকা করে সম্মানি দিচ্ছেন। কয়েকজনকে দেওয়ার পর সে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

আত্মীয়-স্বজনদের এনে প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বালিয়াডাঙ্গী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ঝরনা আকতার বলেন, ‘তারা কীভাবে এসেছে আমি জানি না। বিষয়টা নিয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না।’ 

এই কথা বলার পরপরই তিনি স্থান ত্যাগ করেন। অপর পাশে বসে থাকা ঠাকুরগাঁও জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ওয়াসিম কুমার মালাকারও হাতে টাকা এবং কৃষকদের তালিকা নিয়ে উঠে চলে যান উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনের প্রশাসনিক কর্মকর্তার কক্ষে। 

পরে ঘটনার বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান, অন্য উপজেলা থেকে চাষি এনে প্রশিক্ষণের ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে বলে উপজেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার সুপারিশ করা হবে।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফছানা কাওছার জানান, অন্য উপজেলা থেকে আত্মীয় স্বজনদের এনে প্রশিক্ষণার্থী বানানোর ঘটনার সত্যতা মিলেছে। এ অনিয়মের শাস্তি হিসেবে পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হবে।

জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার দেওয়ার তথ্যমতে, উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ শীর্ষ প্রকল্পের আওতায় দুই ধাপে ৩০০ জন চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া বাবদ ৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ জুনের ৩০ তারিখ পর্যন্ত।