ঢাকা     সোমবার   ০১ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

রাজশাহীতে শাহরিয়ারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, কুশপুত্তলিকা দাহ

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১৩, ২৮ জুন ২০২৪   আপডেট: ২০:২৯, ২৮ জুন ২০২৪
রাজশাহীতে শাহরিয়ারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, কুশপুত্তলিকা দাহ

রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকে রাজশাহী মহানগরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময় তার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। শুক্রবার (২৮ জুন) বিকেলে নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে আয়োজিত সমাবেশে  মহানগর যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা কুশপুত্তলিকায় আগুন দেন। এর আগে, নগরীর কুমারপাড়ায় মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। 

রাজশাহীর বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলকে হত্যার বিচারের দাবিতে এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে নিয়ে শাহরিয়ার আলমের আপত্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

আরও পড়ুন: বাঘায় আ.লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় আরেক মামলা

গত ২২ জুন সংঘর্ষের পর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার মারা যান বাবুল। গতকাল বৃহস্পতিবার বাবুলের জানাজার সময় দেওয়া বক্তব্যে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘পেছন থেকে মদদদাতা হিসেবে আসাদুজ্জামান আসাদ (রাজশাহী-৩ আসনের এমপি), এএইচএম খায়রুজ্জামান (সিটি মেয়র) এবং লায়েব উদ্দিনের (বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান) বিরুদ্ধে মামলা হবে। তাদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।’

সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে আয়োজিত সমাবেশে রাজশাহী মহানগর যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা শাহরিয়ার আলমের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। 

আরও পড়ুন: বাবুলের জানাজায় সভাপতি লাঞ্ছিত, শাহরিয়ারের বক্তব্য নিয়ে রাজশাহীতে উত্তাপ

কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর যুবলীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির। তিনি বলেন, ‘শাহরিয়ার আলম হেলিকপ্টারে চড়ে ঢাকা থেকে বাঘা যাতায়াত করেন। বাবুল আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পড়ে ছিলেন। তাকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় নিয়ে যাননি। চিকিৎসার কোনো খোঁজ নেননি। বাবুল মারা যাওয়ার পর তিনি বাঘায় কোথা থেকে যেন ছুটে এসেছেন। আসলে রাজনীতি করার জন্য শাহরিয়ার আলমের একটা লাশের প্রয়োজন ছিল। সেই লাশ নিয়ে তিনি এখন রাজনীতি করছেন। বাবুলকে কারা হত্যা করেছে, আমরা তার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’

জেলা যুবলীগের সভাপতি মাহমুদ হাসান ফয়সল সজল বলেন, ‘শাহরিয়ার আলম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি দলের একজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যকে নিয়ে যে ধরনের মন্তব্য করেছেন, তা তিনি করতে পারেন না। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে আলাপ করেই এ কর্মসূচিতে এসেছি। কেন্দ্র বলেছে, শাহরিয়ার আলমের এ ধরনের কথা বলা সাজে না। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিকে বলব, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য যেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি শাহরিয়ার আলমকে রাজশাহী শহরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বলেন, ‘একটা উপজেলার সভাপতি দলের প্রেসিডিয়াম মেম্বারকে নিয়ে কথা বলার দুঃসাহস কোথায় পান? সাহস পাচ্ছেন এ শহরের কিছু কুলাঙ্গারের কারণে। তারপরেও আপনাকে আজ রাজশাহীতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো। খায়রুজ্জামান লিটনকে নিয়ে আর একবার বাজে কথা বললে আপনি রাজশাহীতে ঢুকতে পারবেন না।’

আরও পড়ুন: বাঘায় সংঘর্ষে আহত আ.লীগ নেতা বাবুলের মৃত্যু

মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘সাতদিনের মধ্যে আপনি (শাহরিয়ার আলম) তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রমাণ দেবেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে লিটন-আসাদের মদত আছে। আর তা দিতে না পারলে আমরা ধরে নেব, আপনি নিজের স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য মিথ্যা কথা বলেছেন। কারণ আমরা জানি, প্রতিবছর আপনি বাঘা দলিল লেখক সমিতির কমিটি দেন। সেই কমিটি সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে। তার ভাগ অনেকেই পান। মানুষকে এভাবে জিম্মি করার প্রতিবাদ আপনার পছন্দ হয়নি। আপনি আপনার অনুসারীদের মাঠে নামিয়ে সংঘর্ষ বাঁধিয়েছেন।’

মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার আলী বলেন, ‘দলিল লেখকদের হয়রানির প্রতিবাদে মেয়র আক্কাস বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি দিলেন। একই সময়ে আক্কাসের বিরুদ্ধে পাল্টা মানববন্ধনের আয়োজন করে সবাইকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হলো। শাহরিয়ার আলম কেন প্রশাসনকে দিয়ে ১৪৪ ধারা জারি করালেন না? কারণ, তিনি চাইছিলেন একটা সংঘর্ষ হোক। বাবুল ভাইয়ের প্রকৃত খুনিদের আড়াল করতে শাহরিয়ার আলম অন্যদের জড়িয়েছেন।’

আরও পড়ুন: বাঘায় আ.লীগের ২ গ্ৰুপের সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক

মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুজ্জামান শফিক বলেন, ‘শাহরিয়ার আলম জাসদ, বিএনপি করে আওয়ামী লীগে ঢুকেছেন। তিনি হাইব্রীড। আওয়ামী লীগে ঢুকে তিনি ব্যবসা বাড়িয়েছেন। কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তার পক্ষেই দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতাকে নিয়ে আপত্তিকর কথা বলা সম্ভব। তিনি যে কথা বলেছেন, তা তাকে সাতদিনের মধ্যে প্রমাণ করতে হবে। তা না করতে পারলে আমরা ধরে নেব, শাহরিয়ার আলম প্রতারক।’

তিনি বলেন, ‘শাহরিয়ার আলম পৌরসভা ও উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছিলেন। তার প্রার্থী হেরেছেন। আক্কাস মেয়র হয়েছেন, লাভলু উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছেন। নির্বাচনে শাহরিয়ার নিজে কীভাবে জিতেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। শাহরিয়ার আলমের বউ তাকে ছেড়ে চলে গেছে। এসব কারণে তার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তিনি আবোল-তাবোল বকছেন।’

মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. সিরাজুম মুবীন সবুজের পরিচালনায় অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন- জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক  ইয়াসিন আরাফাত সৈকত, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আব্দুল মমিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান রানা, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান রাজিব, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা হিল গালিব, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ডা. শুভ কুমার মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক নাহিদ হাসান, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) ছাত্রলীগের সভাপতি ফাহমিদ লতিফ প্রমুখ।

কেয়া/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ